১০ কাঠার প্লটের আবেদনে তথ্য গোপনের অভিযোগ

ঢাকায় প্লট, ফ্ল্যাট সবই আছে রুমিনের

প্রকাশ | ২৫ আগস্ট ২০১৯, ১৮:৩৫ | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০১৯, ১৮:৪৪

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

ঢাকায় ‘কিছু নেই’ জানিয়ে আবেদন করলেও বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার ঢাকায় প্লট এবং বেশ বড় আকারের ফ্ল্যাট থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্লটটি বাবার এবং ফ্ল্যাটটি মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন বিএনপি নেত্রী।

এই সম্পদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নিয়ে বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এবং তার জোটের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফল করার পর সংরক্ষিত নারী আসনের একটি বরাদ্দ পেয়েছে বিএনপি। আর দলটি এই পদের জন্য রুমিনকে বেছে নেয়। অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় বিএনপির সংসদ সদস্যদের ভোট দিতে হয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়েছেন রুমিন।

গত ৯ জুন শপথের দুই দিন পর সংসদে যোগ দিয়েই উত্তাপ তৈরি করেন বিএনপি নেত্রী। সংসদকে ‘অবৈধ’ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি এমন একটি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছি যে সংসদটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়।’

সংসদকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিলেও সংসদ সদস্য হিসেবে সরকারি প্লটের সুবিধা চাইছেন রুমিন। গত ৩ আগস্ট গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে দেওয়া এক চিঠিতে তিনি দাবি করেন, ঢাকায় তার কোনো প্লট, ফ্ল্যাট বা জমি নেই। ওকালতি ছাড়া কোনো ব্যবসা/পেশা নাই। এই অবস্থায় পূর্বাচলে যেন তাকে ১০ (দশ) কাঠা প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর এটা করলে তিনি ‘চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন’।

রুমিন ফারহানা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার বাবার কিছু নেই। কোনো জায়গা নেই। আমার বাবা সারা জীবন শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। কিন্তু বাবার যে অবস্থান ছিল, উনি একরের পর একর জমি ঢাকা শহরে করতে পারতেন। তাই এটুকু যদি না নিই তবে আমরা খাব কী? আমি আবেদন করার হকদার। এটি সরকারের প্লট নয়। এটি রাষ্ট্রীয়।’

এই আবেদনের চিঠিসহ সংবাদ প্রকাশ করেছে একটি গণমাধ্যম। আর মুহূর্তেই চিঠির কপি ভাইরাল হয়ে যায়।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে সরাসরি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন। আর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে তিনি তার সম্পদের যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, সেখানে ঢাকায় একটি ফ্ল্যাটের তথ্য আছে। এটি নিউ এলিফ্যান্ট রোডে।

হলফনামার ৫ম পাতার ৪নম্বর কলামে বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্টের ঘরে তিনি উল্লেখ করেছেন, ১৮৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে। ওই ফ্ল্যাট মায়ের কাছ থেকে পেয়েছেন।

এর মধ্যে রুমিনের আরো বেশি মূল্যের সম্পদের তথ্য রয়েছে। লালমাটিয়া এলাকায় তিন কাঠার একটি প্লট তার বাবা অলি আহাদের কাছ থেকে পেয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। সেখানে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে ডোমিনো নামের একটি ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।

অলি আহাদের দল ডেমোক্রেটিক লীগের সেই দলের মহাসচিব সাইফুদ্দিন মনি ঢাকা টাইমসকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘অলি আহাদের লালমাটিয়ায় বি ব্লকে একটি প্লট ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে ১৯৭৩ সালে তাকে দেয়া দেয়া হয়েছিল। সেটি নিয়ে ঝামেলা হওয়ার পর আমরা কয়েকজন মিলে রুমিন ফারহানার নামে করে দেয়া হয়েছে। যেই প্লটে পরে ছয়তলা বাড়ি করা হয়েছে।’

আর এলিফ্যান্ট রোডের যে ফ্ল্যাটে রুমিন ফারহানা তার মায়ের সঙ্গে থাকেন সেটা তার নানার জমি ছিল। সেখান থেকে তার মা পেয়েছেন ফ্ল্যাটটি। পরে একমাত্র সন্তান রুমিনকে সেটি লিখে দিয়েছেন।

ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর হাউজিং সোসাইটিতেও রুমিন ফারহানার প্লট আছে বলেও তথ্য মিলেছে।

চিঠি ফাঁস হওয়ায় চটেছেন রুমিন

রুমিন তার প্লটের আবেদন নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমকে নানা কথা বললেও তার এসব সম্পদ থাকার বিষয়টি নিয়ে কিছু বলেননি।

প্লটের আবেদনের বিষয়টি নিয়ে তোলপারের পর একজন গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। আর এই বক্তব্যই তার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া বলে জানান। এ সময় তিনি আবেদনের কপি প্রকাশ হয়ে যাওয়া নিয়ে চটেন।

বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘আমরা প্রশ্ন হলো- আমার চিঠিটা মন্ত্রণালয় থেকে বেরুলো কী করে? যেখানে আমার ব্যক্তিগত টেলিফোন নম্বর দেওয়া আছে?’

‘এই চিঠি আমি ড্রাফটও করিনি, আমার পিএস ড্রাফট করে দিয়ে দিয়েছে। সব পিএসরা যখন তাদের এমপিদের চিঠি ড্রাফট করেছে, আমার পিএসও ড্রাফট করে দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমার চিঠিটা কেনো ভাইরাল হলো? এটা ভাইরাল কেনো হলো তার উত্তর আমি নিজেই দিচ্ছি।’

রুমিন ফারহানা বলেন, ‘দুই দিন আগে আগে আবুল মাল আবদুল মুহিত (সাবেক অর্থমন্ত্রী ) কোনো পদে না থাকা অবস্থায় শুল্কমুক্ত গাড়ি এনেছিলেন। সরকার তার সেই নোংরামি ও অসততাকে চাপা দেওয়ার জন্যে আমার যে বৈধ অ্যাপ্লিকেশন সেটা নোংরাভাবে পাবলিক করেছে। একটা সরকারি নথি কখন পাবলিক হয়? যখন সেখানে সরকারের মদদ থাকে।

কত জন সংসদ সদস্য এই সুযোগ সুবিধা চেয়েছেন, সেটিও প্রকাশ করার দাবি করেন বিএনপি নেত্রী। বলেন, ‘আমি এখন চ্যালেঞ্জ করব- যতজন এমপি অ্যাপ্লিকেশন করেছেন সব প্রকাশ করা হোক। রুমিন কেনো একলা?’।

আবেদন কেন অনৈতিক, প্রশ্ন রুমিনের

প্রশ্ন উঠেছে, সরকার ও সংসদকে অবৈধ বললেও তাদের কাছ থেকে তিনি কেন প্লট চাইছেন। আইনবিরুদ্ধ না হলেও রুমিন নৈতিকভাবে এটা করতে পারেন কি না, এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার বাবার প্রতিষ্ঠিত দল ডেমোক্রেটিক লীগের মহাসচিব সাইফুদ্দিন মনি। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘যে সংসদ আছে সেটা অবৈধ। এটা রুমিন ফারহানাসহ আমরা সবাই বলে আসছি। কিছু পাওয়ার জন্য সেখানে আবেদন করাও অবৈধ।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে টকশোতে সরব বিএনপির কেন্দ্রীয় একজন নেত্রী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের যেহেতু একটা স্ট্যান্ড আছে যে, সরকার ও সংসদ অবৈধ বলছি, তিনি (রুমিন) নিজেই একথা  বলেছেন। সেহেতু এই সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নেয়া কতটা সমীচীন হবে তিনি তার বিষয়টি ব্যাখ্যা দিলে ভালো হয়।’

এ বিষয়ে রুমিন বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হলো আমার চিঠিটা কি অবৈধ? কোন আইনে অবৈধ? এটা কি অনৈতিক কোনো আইনে অনৈতিক? এটা তো রাষ্ট্রীয় চিঠি। আমি তো সরকারের কাছ থেকে কিছুই চাইনি। আমার বেতনটা যেমন রাষ্ট্রীয়, আমার এই অ্যাপ্লিকেশনও রাষ্ট্রীয়।’

সরকার ‘অবৈধ’, সিদ্ধান্তে অটল

প্লটের আবেদন করলেও এই সরকারকে এখনো অবৈধ বলছেন রুমি। বলেন, ‘এই সরকার যে অবৈধ এটা এখন বলছি, আগেও বলেছি- এটা সম্পূর্ণ অবৈধ সরকার। এটা জনগণের ভোট ছাড়া নির্বাচিত সরকার। এই সরকার সর্ব অর্থে অবৈধ সরকার।’

‘আমি সরকারের কাছে কোনো কিছু চাইনি। আমি রাষ্ট্রীয় সুযোগ চেয়েছি। এটা তারা (সরকার) করেছে আবুল মাল আবদুল মুহিতকে যে অবৈধ ও অনৈতিক সুবিধা দিয়েছে ওইটাকে চাপা দেওয়ার জন্য, জনদৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য। যাতে মানুষের দৃষ্টি অন্য দিকে যায়।’

ঢাকাটাইমস/২৫আগস্ট/বিইউ/ডব্লিউবি