জোর করলে পরিস্থিতি উত্তপ্তের হুমকি রোহিঙ্গাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট ২০১৯, ১৯:৫৬

রোহিঙ্গারা তাদের নিজ ভূম মিয়ানমারে ফিরতে চায়। তবে ফেরার আগে ওই দেশের সরকার থেকে তারা বেশ কয়েকটি বিষয়ে নিশ্চয়তা দাবি করেছে। আর শর্ত পূরণ না করে দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে বলেও হুমকি দিয়েছে তারা।

রবিবার বাংলাদেশে আসার দুই বছর পূর্তির দিনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারের কুতুপালং শিবিরে সমাবেশ করে এই অবস্থানের কথা তুলে ধরে।

রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, নাগরিকত্ব ও রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি, নিজস্ব ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি ফেরত, নিরাপত্তা এবং নির্যাতনের বিচারের দাবি পূরণ না হলে তারা ফিরে যাবেন না। এসব শর্ত পূরণ না করা করা পর্যন্ত তাদের সেখানে পাঠানোর চেষ্টা করা হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে।

দুই বছর আগের এই দিনটিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে একদিনেই প্রায় লাখখানেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। আর গতবছর থেকে এই দিনটিকে তারা রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

দিবসটির স্মরণে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সামবেশে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার সমাবেশ ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল নেতাদের।

গতকাল সকাল আটটা থেকে বিভিন্ন শিবির থেকে মিছিল নিয়ে রোহিঙ্গারা দলে দলে মধুরছড়ার সমাবেশ স্থলে আসতে থাকে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মধুরছড়ার কয়েকটি পাহাড় ও নিচের খেলার মাঠ লাখো রোহিঙ্গার উপস্থিতিতে ভরে যায়।

সমাবেশে আসা রোহিঙ্গারা অনেক রোহিঙ্গাই একটি টি-শার্ট পরে এসেছেন, যেখানে লেখা 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস।' তবে বেশিরভাগ রোহিঙ্গাদের জাতীয় পোশাক টুপি সাদা শার্ট ও লুঙ্গি পরেই আসেন।

এ সময় স্লোগান ছিল, ‘নিরাপদে ঘরে ফিরতে চাই, গণহত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার চাই’, ‘নাগরিকত্ব ফেরত চাই’।

সমাবেশে নাগরিক মর্যাদাসহ পাঁচটি শর্ত মেনে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়। মিয়ানমারের নাগরিকত্বের বিষয়ে যেন রোহিঙ্গাদের সাথে আলোচনা করে মিয়ানমার সরকার এই দাবি তোলা হয় সমাবেশে।

রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, তাদেরকে সব সময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যদি মিয়ানমারে ফিরে যেতে হয়, একসঙ্গে যাবেন, একসঙ্গে সীমান্ত পার হবেন। এ সময় রোহিঙ্গারা দাঁড়িয়ে চিৎকার করে নেতাদের বক্তব্যের সমর্থন জানায়।

এই সমাবেশকে ঘিরে এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছিল।

সমাবেশে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে যারা নিহত ও নির্যাতিত হয়েছেন তাদের জন্য বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানানো হয়।

আশির দশক থেকেই প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিমরা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শুরু করে। তবে সবচেয়ে বড় ঢল নামে ২০১৭ সালের আগস্টে। এখন সব মিলিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে।

এদেরকে ফিরিয়ে নিতে একাধিকবার দিন তারিখ ঠিক হলেও মিয়ানমারের টালবাহানা আর রোহিঙ্গারা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পাওয়ায় প্রত্যাবাসন পিছিয়ে যাচ্ছে।

গত বছরের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম সময়সীমা ঠিক হয়েছিল। রোহিঙ্গারা রাজি না হওয়ায় সেবার একজনকেও রাখাইনে পাঠানো যায়নি। গত ২২ আগস্ট দ্বিতীয় দফা প্রত্যাবাসন শুরুর দিনক্ষণ ঠিক হলেও রোহিঙ্গাদের সেই পুরনো অনাগ্রহে দ্বিতীয় দফায়ও ভেস্তে গেল প্রত্যাবাসন।

এবার প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার থেকে তিন হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গার নামের তালিকা বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া হয়েছিল।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন সহিংসতা ও নিপীড়নের শিকার হয়ে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

১৯৮২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নানা অজুহাতে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া অন্তত সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গা আগে থেকেই কক্সবাজারের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে ছিলেন।

এর ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের জানুয়ারি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়। একই বছরের ৬ জুন নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী গত বছরের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে আবারও হামলার মুখে পড়ার আশঙ্কায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে অস্বীকৃতি জানানোয় ব্যর্থ হয় ওই উদ্যোগ।

সর্বশেষ চলতি বছরের জুলাই মাসে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে নতুন করে উদ্যোগের অংশ হিসেবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল। ১৫ সদস্যের দলটি দুই দিন ধরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা ও বৈঠক করে। এসব বৈঠকে রোহিঙ্গাদের তরফে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব ও চলাফেরায় স্বাধীনতার দাবি তুলে ধরা হয়।

ঢাকাটাইমস/২৫আগস্ট/এনআই/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :