গফরগাঁওয়ে শিশুরা স্কুলে আসে কাদাজলে ডুবে

প্রকাশ | ২৬ আগস্ট ২০১৯, ০৮:২৫

আজহারুল হক, ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার উস্থি ইউনিয়নের একটা ছোট গ্রাম পাল্টিপাড়া। শহর বা মফস্বলের শেষ ছোঁয়া থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে প্রায় প্রত্যন্ত এলাকা বলা যায়। সেখানে লাল-সবুজে রাঙানো সুন্দর একটি স্কুলে শিশুরা পড়তে আসে হাঁটু অব্দি কাদাজল মেখে।

না, খেলার ছলে নয়, বিলের মধ্য দিয়ে ডুবোজল কাদাপথ মাড়িয়ে তাদের আসতে হয় এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। যেতেও হয় একই ভাবে। আর এ সময় তাদের পারাপারে সাহায্য করেন শিক্ষকরা। না হলে পা পিছলে ণালায় পড়ে ঘটতে পারে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। স্কুল আঙিনায় প্রবেশের জন্য একটি ছোট্ট রাস্তা হলেই নিরসন হতে পারে কোমলমতি শিশুদের ভোগান্তি ও ঝুঁকি।

এই দুর্ভোগের কারণে এখন স্কুলে কমছে শিক্ষাথী সংখ্যা। কমছে উপস্থিতির হার। অথচ গ্রামের কিছু লোক কী স্বপ্ন নিয়েই না নিজেদের জমি আর শ্রমে দিয়ে গড়ে তুলছিলেন স্কুলটি। সেটি ১৯৭৩ সালের কথা। মুছলেম উদ্দিন ও জাহারুল আলম নামের দুই ব্যক্তি ৬২ শতাংশ জমি দান করেন। পরে জমিদাতা ও অন্যদের সহযোগিতায় গড়ে ওঠে পাল্টিপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হয়।

সম্প্রতি বিদ্যালয়টিতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদলে লাল-সবুজের রঙে রাঙানো হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, চমৎকার এই বিদ্যালয়ে যাতায়াতের কোনো পথ নেই। গ্রামের সড় থেকে জলাভুমি পেরিয়ে যেতে হয় স্কুলে। এর জন্য জলাভূমিতে জমির আলের মতো নরম কাদামাটির একটা সরু পথ আছে, যেটি পানিতে ডুবুডুবু। কাদায় যাতে পা ডেবে না যায়, সে জন্য কোথাও কোথাও মাটিতে বাঁশ বিছানো হয়েছে। সেট্রিও কাদায় একাকার হয়ে আছে। ভয়ে ভয়ে পা ফেলতে হয় শিশুদের। একজন শিক্ষক ছোট শিশুদের হাত ধরে পথটুু পার করিয়ে দিতে দেখা যায়। বর্ষা জুড়ে শিক্ষার্থীদের এই নরকপথ এভাবেই পেরোতে হয়।

বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে প্রতিষ্ঠাতা দুজনসহ পাঁচজন শিক্ষক কর্মরত। শিক্ষার্থী মোট ১০৬ জন। সড়ক না থাকায় বিদ্যালয়ে উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। আশপাশের বহু শিক্ষর্থী দূরে অন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে যায়। মাত্র ৩০ গজের একটি সড়ক হলে শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘবের পাশাপাশি উপস্থিতির হার বেড়ে যেত বলে জানান শিক্ষকরা।

বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে পড়–য়া শিশুদের ছুটি শেষে প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান শিশু শিক্ষার্থীদের কাদাপানির পথটুকু পার করে দিচ্ছেন। সে সময় শিশুদের এক হাতে স্যান্ডেল অন্য হাতে ছিল স্কুলব্যাগ। কোথাও কোথাও অনেক শিশুর হাঁটু পর্যন্ত কাদায় ডেবে যেতে দেখা যায়।

শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়ে আসার সময় পাশের বিলপাড় পর্যন্ত এসে শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে থাকে। পরে শিক্ষক বা বড় কেউ এগিয়ে গিয়ে কাদাপানির পথটুকু পার করে দেয় তাদের।

পাল্টিপাড়া গ্রামের অভিভাবক কামরুজ্জামান উজ্জল, মিজানুর রহমান, সাইদুল ইসলাম, বাদল মিয়া, কামাল মিয়া, আছিয়া খাতুনসহ অনেকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, কাদাপানির কারণে ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে যেতে দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। প্রায়ই তাদের ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে যায় না।

প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান বলেন, সড়কে কাদাজলের কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। কিন্তু তেঁতুলিয়া-মাইজবাড়ি পাকা সড়ক থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত ৫০০ গজের একটি সংযোগ সড়ক হলে শিক্ষার্থী অনেক বেড়ে যেত।

ওই ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ে যাতায়াতের সড়ক না থাকায় শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম। এ ব্যাপারে শিক্ষকদেরও কিছু বলা যায় না। কারণ তারাও অসহায়।

উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা ও শিক্ষা কমিটির মিটিংয়ে বিষয়টি তুলে ধরা হবে জানিয়ে এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সালমা আক্তার বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য একটি সড়ক নির্মাণের চেষ্টা করবেন তারা।

(ঢাকাটাইমস/২৬আগস্ট/মোআ)