বরফের হ্রদ টসমগো

গাজী মুনছুর আজিজ
 | প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট ২০১৯, ১৬:১৪

টসমগো হ্রদ সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক থেকে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার দূরে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এ হ্রদের উচ্চতা ১২ হাজার ৭০০ ফুট। এ হ্রদ বেশি পরিচিত চাঙ্গু নামে। ঘুরে এসে লিখেছেন গাজী মুনছুর আজিজ।

সিকিমের টসমগো হ্রদের পারে দাঁড়িয়ে কেবলই মনে হচ্ছে স্বপ্নের ভেতর আছি। কারণ এর আগে কখনো বরফ জমা লেক বা হ্রদ দেখিনি। সত্যিই অদ্ভুত এক অনুভূতি। এ হ্রদ চাঙ্গু নামে আরও বেশি পরিচিত। সিকিম ট্যুরিজম সংস্থার তথ্য অনুয়ায়ী সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এ হ্রদের উচ্চতা ১২ হাজার ৭০০ ফুট। উচ্চতার জন্যই প্রচ- ঠান্ডা। এ ঠান্ডাতেই পুরো হ্রদের পানি জমে বরফ হয়ে আছে। আর এ ঠান্ডার ভেতরই অসংখ্য পর্যটকের ভিড়।

হ্রদের প্রবেশমুখে ছোট্ট একটি সেতু। এ সেতু পার হয়ে হ্রদের পার ধরে হেঁটে আসি ভেতরে। আমাদের সবার গায়ে পর্যাপ্ত ঠান্ডার কাপড় জড়ানো। পায়ে গামবুট। এ বুট ভাড়া নিয়েছি লেকের পারে থাকা দোকান থেকে। ১০০ রুপি করে প্রতি জোড়া। কারণ বরফের ভেতর হাঁটতে হলে এ বুটের বিকল্প নাই।

অনেকটা গোল আকৃতির এ হ্রদের চার পাশেই পাহাড়। এসব পাহাড়সহ আশপাশের পাহাড় থেকে গলিত বরফের পানি বা তুষারপাতের পানিই এ হ্রদের উৎস। আশপাশে যেসব পাহাড় আছে, তার অধিকাংশই তুষারপাতের বরফে ঢাকা। যেন বরফেরই পাহাড়।

পর্যটকরা সবাই হ্রদের পারেই হাঁটাহাঁটি করছেন। মাঝখানটায় কাউকে যেতে দেখছি না। তাই আমরাও যাইনি। হ্রদের পারেই আছি। সাদা তুলোর মতো

এ বরফের রাজ্যে কোথাও কোথাও পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে ডেবে যাচ্ছে। আবার কোথাও শক্ত। আমাদের সবাই মহাখুশি এমন একটি জায়গায় আসতে পেরে। খুশির চোটে প্রচ- ঠান্ডা সত্ত্বেও দলের সদস্য আম্মার প্যান্ট বাদে তার সব কাপড় খুলে একদম খালি গায়ে ছবি তুলছে মহাআনন্দে। অন্যদিকে জাকির, মামুন, রাসেল, অর্নি, মিষ্টি ও তিথি যে যার মতো দুষ্টুমি করছে। কেউ কেউ বরফে গড়াগড়ি খাচ্ছে মহাআনন্দে। কেউ কেউ বরফ দিয়ে বল বানিয়ে একজন আরেকজনের দিকে ছুড়ে মারছে। আবার কেউ সাদা বরফের গায়ে নিজের নামের প্রথম অক্ষর লিখে প্লাস দিয়ে লিখেছে প্রিয়জনের নামের প্রথম অক্ষর। ধারণা করি ছেলেবেলায় স্কুলের দেয়ালে এমন লিখন অনেকেই লিখেছেন। হয়তো সেই স্মৃতিই তারা আরেকবার রোমন্থন করলো সাদা বরফের এ হ্রদে।

হ্রদের পারে অনেক ইয়াক আছে। দেখতে আমাদের গরু-মহিষের মতো। তবে আমাদের গরু-মহিষের তুলনায় এদের পা একটু খাটো। অনেকেই এ ইয়াকের পিঠে চড়ে হ্রদের পারে ঘুরছেন। কিছুক্ষণের জন্য এ ঘুরাঘুরির বিনিময় ১০০ রুপি। অধিকাংশ ইয়াকের গায়ের রং কালো। কিছু ইয়াকের মাথার অংশটুকু কালছে-সাদা। তবে প্রায় সব ইয়াকের শিং দুটো লাল উলের ঝালর দিয়ে মোড়ানো। এটা মূলত সুন্দর দেখতে লাগানো।

হ্রদের পারে একটি বৈঠকখানা আছে। হাঁটাহাঁটি করে যাদের ক্লান্তি লাগছে তারা বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। এছাড়া হ্রদের প্রবেশমুখেই আছে রোপওয়ে। এ রোপওয়ের উচ্চতা ১৪ হাজার ৫০০ ফুট। এটি এশিয়ার সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত রোপওয়ে বলে দাবি এখানকার কর্তৃপক্ষের। এ রোপওয়েতে চড়ে পাখির চোখে দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্গা, ভারত-চীন সীমান্ত, ভুটান, দার্জিলিং ও টসমগো হ্রদ। হ্রদের পারে বা হ্রদ সংলগ্ন পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ছোট ছোট কিছু গাছ আছে। গাছের পাতাগুলো প্রায় নিষ্প্রাণ। তবে বসন্তে এসব গাছ আবার সতেজ হয়ে ওঠে।

বেশ কিছুক্ষণ থাকার পর হ্রদ থেকে বের হই। হ্রদের অধিকাংশ পাহাড়ের সঙ্গে মিশেল হলেও একপাশ দিয়ে পথ আছে। অবশ্য এ পথের পরেই পাহাড়। এ পথে দাঁড়িয়েও অনেকে উপভোগ করছেন হ্রদের সৌন্দর্য। হ্রদের প্রবেশ এলাকায় অনেক চা-কফির স্টল, রেস্টুরেন্ট, গিফট শপ ও গরম কাপড়ের দোকান আছে। এসব দোকানের ছাদও তুষারপাতের বরফে ঢাকা। দোকানের আশপাশেও আছে বরফের স্তূপ। দোকানগুলোতে আছে গামবুট, জ্যাকেট, হ্যান্ডগ্লাভস, মোজাসহ বিভিন্ন গরম কাপড়। বিক্রির পাশাপাশি এসব গামবুট বা গরম কাপড় ভাড়া দেওয়া হয় দর্শনার্থীদের কাছে। যেমন আমরা গামবুট ভাড়া নিয়েছি।

আমরা যখন হ্রদের এলাকায় আসি তখন পর্যটকের অসংখ্য গাড়ি দেখি। এখন অনেক কম। অর্থাৎ হ্রদ দেখে এরই মধ্যে সবাই এলাকা ছেড়েছেন। তাই আমরাও গাড়িতে উঠি সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকের উদ্দেশে। আসছিও রিজার্ভ করা এ সমুতে। গ্যাংটক থেকে এ হ্রদের দূরত্ব প্রায় ৩৮ কিলোমিটার। হ্রদ থেকে নামার এ পথের দুই পাশেও আছে বরফের স্তূপ। এ পথ পুরোটাই আঁকাবাঁকা। সাদা বরফ রাজ্যে পাহাড় ঘেঁষা পিচের আঁকাবাঁকা পথে চলছি। বলা চলে দারুণ। বেশ কিছুক্ষণ চলার পর অতিক্রম করি পুলিশ চেকপোস্ট। যাওয়ার সময় এ চেকপোস্ট থেকে এক কপি ছবিসহ পাসপোর্ট ও ভিসার ফটোকপি দিয়ে অনুমতি নিতে হয়েছে। ফেরার পথেও তা দেখাতে হলো, যাতে যারা গিয়েছি, তারা আবার ফেরত আসলাম কি না সেটা বুঝাতে। অবশ্য অনুমতি ও কাগজপত্রের বিষয়গুলো চালকই দেখভাল করছেন। কারণ সিকিমের যেকোনো স্থান ঘুরতে হলে এখানকার সরকারের অনুমোদিত ট্যুরিস্ট এজেন্টের মাধ্যমে অনুমতি নিতে হয়। আর চালক বা গাড়ি এজেন্টেরই অন্তর্ভুক্ত। আমাদের সঙ্গে একজন গাইডও আছেন। এ গাইডও এজেন্টের। যে এজেন্টের মাধ্যমে অনুমতি নিতে হয়, সেই এজেন্টই গাইড দিয়ে দেন।

চেকপোস্ট পেরিয়ে কিছুটা আসলে বিরতি দিই একটি রেস্টুরেন্টের সামনে। যাওয়ার সময়ও এখানে বিরতি দিই। তখনও এখানে চা-কফি খাই। এখনো তাই। চালক তার দুপুরের খাবার সারলেন এখানে। আর আমাদের তরুণী গাইড যাওয়ার সময় এখান থেকে গামবুট নিয়েছিলেন, সেটা এখন ফেরত দিলেন। চা-কফি শেষে আবার গাড়িতে উঠি। পাহাড়ের কোলঘেঁষে আঁকাবাঁকা পথে গাড়ি চলছে গ্যাংটকের দিকে। আর ঘড়ির কাঁটা বিকেল ছুঁই ছুঁই।

(ঢাকাটাইমস/২৬আগস্ট/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :