যুদ্ধাপরাধ: পুঠিয়ার সামাদের রায়ের অপেক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ আগস্ট ২০১৯, ০৮:৪১

রাজশাহীর পুঠিয়ার মো. আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ খাঁর বিরুদ্ধে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় হবে আজ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে এ আসামির বিরুদ্ধে।

গতকাল বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ মামলার রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন রাখে। এর আগে প্রসিকিউশন ও আসমিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ৮ জুলাই মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে ট্রাইব্যুনাল।

রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা ও জাহিদ ইমাম। আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ন। যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম পরে বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাদের সহযোগীদের নিয়ে এ মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা-হত্যাসহ যেসব অপরাধ করেছে মামলার শুনানি ও যুক্তিতর্কে সেসব তথ্য-প্রমাণ, সাক্ষ্য আমরা আদালতে তুলে ধরেছি। ভিকটিমসহ ভিকটিম পরিবারের ১৪ জন চাক্ষুস সাক্ষী আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ফলে আমরা আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছি ট্রাইব্যুনালের কাছে।’

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেছিলেন, এ মামলার সাক্ষী এবং পুঠিয়ার সাঁওতাল পল্লীর লোকজনের সঙ্গে আসামির বাবার জমি-সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। ১৯৬৪ সালে জমি বিনিময় করে তারা এসেছিল। কিন্তু দেশ স্বাধীনের বছরে এসে সাঁওতালরা ৫০ একর জমি ফেরত চাইলে আসামি, আসামির বাবা এবং এলাকার লোকদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে আসামির বাবাও মারা যান। সাক্ষীরা সে সুযোগ নিয়ে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে।’

এ আইনজীবী বলেন, ‘উভয়পক্ষের মধ্যে এটা মূলত জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আদালতে সেটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি বলে মনে করি। তাই আসামির খালাস চেয়েছি।’

গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়। প্রায় সাড়ে ১১ মাস পর মামলাটি রায়ের পর্যায়ে এল।

কে এই সামাদ

এ মামলার আসামি মো. আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ খাঁর বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়ার ত্রিমোহিনী বাজারের কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামে। ১৯৭১ সালে দেশে যখন স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়, সময় তার বয়স ২০ বছরের মতো। প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, সামাদের পূর্বপুরুষ এদেশে এসেছিলেন ভারতের মুর্শিদাবাদ থেকে। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন।

এ মামলার অভিযোগপত্রের বিবরণ অনুযায়ী, চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা সামাদ এক সময় মুসলিম লিগ করলেও একাত্তরে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে ভেড়েন এবং স্থানীয় রাজাকার বাহিনীতে নাম লেখান।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষ নিয়ে পুঠিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান এবং চারজন সাঁওতালসহ ১৫ জনকে হত্যা, ২১ জনকে নির্যাতন, আট থেকে ১০টি বাড়িঘরে লুণ্ঠন এবং ৫০ থেকে ৬০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগে অংশ নেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে এ মামলায়।

অভিযোগ ১: একাত্তরের ১৯ এপ্রিল পুঠিয়ার ভালুকগাছী ইউনিয়নের দমদমা, সুখদেবপুর, বাঁশবাড়ি ও গতিয়া গ্রামে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা।

অভিযোগ ২: একাত্তরের ১৯ এপ্রিল পুঠিয়ার গ-গোহালী, চকপলাশী, বৈরাগীবাজার ও বাঁশবাড়ি গ্রামে ছয়জনকে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা।

অভিযোগ ৩: একাত্তরের ১৯ এপ্রিল পুঠিয়ার ভালুকগাছী ইউনিয়নের পশ্চিমবাগ গ্রামের সাঁওতাল পাড়ায় গিয়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, হত্যা ও গণহত্যা।

অভিযোগ ৪: একাত্তরের ২০ এপ্রিল পুঠিয়ার ভালুকগাছী ইউনিয়নের ঢোকরাকুল গ্রামে একজনকে আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলা বৃত্তান্ত

প্রসিকিউশনের তদন্ত দল ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর যখন এ মামলার তদন্ত শুরু করে, তখন আসামি করা হয়েছিল ছয়জনকে। কিন্তু তদন্ত চলার সময়ই বাকি পাঁচ আসামির মৃত্যু হলে একমাত্র আসমি হিসেবে থাকেন মো. আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ খাঁ।

তদন্ত চলার মধ্যেই নাশকতার একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় সামাদকে। পরে ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি তাকে যুদ্ধাপরাধের এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা তার প্রতিবেদনে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনলেও যাচাই-বাছাই শেষে চারটি অভিযোগের ভিত্তিতে আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করে প্রসিকিউশন।

তার ওপর শুনানি করে আদালত গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়। এরপর ১০ অক্টোবর প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ।

প্রসিকিউশনের পক্ষে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১৫ জন এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। আসামির পক্ষে কোনো সাক্ষী ছিলেন না।

প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম জানান, এ মামলার চার অভিযোগে ১৪ জন চাক্ষুস সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন সরাসরি ভিকটিম এবং নয়জন ভিকটিম পরিবারের সদস্য।

গত ১৪ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শেষ হয়। এরপর ৪ থেকে ৮ জুলাই যুক্তিতর্ক শুনে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে।

এ মামলার একমাত্র জীবিত আসামি মো. আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ খাঁর সাজা হবে কি না, আজ রায়ের মাধ্যমে তা জানা যাবে।

ঢাকাটাইমস/২৭আগস্ট/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি

কক্সবাজারে কতজন রোহিঙ্গা ভোটার, তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

সাউথ এশিয়ান ল' ইয়ার্স ফোরাম ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল চ্যাপ্টারের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন

আদেশ প্রতিপালন না হওয়ায় চট্টগ্রামের ডিসি এসপিসহ চার জনকে হাইকোর্টে তলব

১১ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানি ২৯ জুলাই

২৮ দিন পর খুলল সুপ্রিম কোর্ট

ব্যবসায়ী নাসিরের মামলা: পরীমনিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি

বোট ক্লাব কাণ্ড: পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন

সেই রাতে ৮৭ হাজার টাকার মদ খেয়েছিলেন পরীমনি, পার্সেল না দেওয়ায় তাণ্ডব

বোট ক্লাব কাণ্ড: প্রতিবেদন দিল পিবিআই, ব্যবসায়ী নাসিরের মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন পরীমনি?

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :