গণপরিবহনে আগামীর ঢাকা

প্রকাশ | ২৭ আগস্ট ২০১৯, ১৫:৪৮

মো. মাহবুব-এ-এলাহী
ফাইল ছবি

মেট্রোরেলের পুরো প্ল্যানটা মনোযোগ দিয়ে দেখা যাক। উত্তরের গাজীপুর থেকে শুরু হয়ে এয়ারপোর্ট-কুড়িল-আফতাবনগর-কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ| পোস্তগোলা থেকে বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে কেরাণীগঞ্জের ঝিলমিল। কমলা লাইনটা দেখুন।

সেই ঝিলমিলেই আবার উত্তরের ইয়েলো লাইন ধরে আসবে বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট, ম্যাপের মাঝখানের দিক দিয়ে। এর কাজ শুরু হয়েছে। ভাঙচুর চলছে। হলুদ লাইনটা দেখুন। কুড়িল থেকে ডানে একটা কমলা লাইন চলে যাবে কাঞ্চন ব্রিজে।

নতুন বাজার থেকে ডানে বেগুনি লাইন চলে যাবে ভুলতায়, বামে মিরপুর ১০-২-১-টেকনিক্যাল-গাবতলী হয়ে হেমায়েতপুর-সাভার-নবীনগর-বাইপাইল হয়ে ঘুরে এসে যুক্ত হবে উত্তরা থার্ড ফেইজে। বর্তমান মেট্রোরেল যেখান থেকে শুরু হয়েছে সেখানে।

যেটার কাজ চলছে সেটার রুট-প্ল্যান সবাই জানেন শেষ হবে মতিঝিলে। মজার বিষয় হলো-মতিঝিল থেকে কমলাপুর স্কাই-ওয়াক। ফুটওভার ব্রিজের মতো হেঁটে যেতে পারবেন ছায়ার নিচে। থাকছে গাবতলী থেকে হাজারীবাগ হয়ে সিদ্দিকবাজার-মতিঝিল-কমলাপুর-চিটাগাং রোড, টিয়া কালারের লাইনটা, কাঁচপুর ব্রিজের ঠিক আগে।

ঢাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্বল ইস্ট-ওয়েস্ট কানেক্টিভিটি। মেইন রোডগুলো দেখবেন সব উত্তর-দক্ষিণগামী। এই সমস্যার সমাধানকল্পে আসছে নীল রঙের গাবতলী-মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ-কারওয়ানবাজার-আফতাবনগর যেতে যেতে একেবারে ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে।

একেবারে নর্থ-সাউথ নতুন কমলাটে হলুদ বিআরটি লাইনটা যাবে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরাসরি ম্যাপের উত্তরে গাজীপুরের দিকে। প্ল্যানটা মোটামুটি ২০৩০ সালের। জাপানিদের সহায়তায় বানানো।

সকলেই জানেন, বর্তমান বাস্তবতায় এটা ২০৩০ সালে নির্মাণ করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু যদি তা ২০৩৫ সালেও নির্মাণ করা যায়, তবে এর নির্মাণ ঢাকাবাসীর বেঁচে থাকার জন্যই প্রয়োজন।

চ্যালেঞ্জ বাড়ছে প্রতিদিন, সামলানোর বিকল্প কোনো উপায় নেই। আমাদের রোড নেটওয়ার্ক উবারের ৪০০০ ফুলটাইম গাড়ির জন্য তৈরি ছিল না, হঠাৎ নেমেছে তাঁরা, নেমেছে অন্যরাও। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষ গাড়ি কিনতে চাইবে, বেটার সার্ভিস চাইবে। কয়টা রোডে রিকশা বন্ধ করব আমরা? এক? দুই? দশ?

মনে রাখবেন, যেই দেশের গরিবেরা প্রাইভেট গাড়িতে চড়ে, সেই দেশের ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম উন্নত নয়। বরং যেই দেশের ধনীরা গণপরিবহন ব্যবহার করে, সেই দেশের পরিবহন ব্যবস্থাই আসলে সর্বোত্তম।

অনেকেই মেট্রোরেল নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে যে, ঢাবিকে সরানোর জন্যই ক্যাম্পাসের মধ্যে দিয়ে রেলগাড়ি চালানো হচ্ছে। কিন্তু আপনারা যদি পুরো প্ল্যানটা দেখেন, তবে আশা করি ভুল ভাঙবে। এটা এক দুই তিন দিনের বিষয় নয়। বছরের পর বছর চিন্তাভাবনা করে টোটাল পিকচার তৈরি করা হয়েছে, যা আমাদের স্পষ্টভাবে জানা প্রয়োজন।

অনেকে মনে করেন যে আমাদের আসলে কোনো সমন্বিত পরিকল্পনা নাই। এইটা যদি সমন্বিত পরিকল্পনার অংশ না হয়, তবে অংশ কোনটা?

আগামী এক যুগ আমরা সকলে এখানে ওখানে বিচ্ছিন্নভাবে ভাঙচুর দেখব। অনেকেই উন্নয়নের জোয়ার নিয়ে ট্রল করবে, না জেনে করবে। কারণ তারা জানে না যে আমরা আসলে ২০৪১ সালের উন্নত দেশের টার্গেটে কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। তাই ভবিষ্যতের ঢাকা মাথায় রেখে যারা জমিজমা কিনতে চান,তারা ফিল্ডে নেমে যেতে পারেন।

চিটাগাংয়েও মেট্রোরেল আসছে। সেই গল্পটা আরেকদিন বলব।

লেখক: উপবিভাগীয় প্রকৌশলী

ফেসবুক থেকে নেওয়া