মিলন হত্যাতেও ফেরেনি হুঁশ, থামছেন না খ্যাপের বাইকার

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০১৯, ১১:২২ | প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট ২০১৯, ১০:৫০

মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারে খুন করে কে বাইক ছিনিয়ে নিয়ে গেছে, সেটি নিয়ে এখনো অন্ধকারে পুলিশ। যাত্রীবেশে বাইকার মিলনের মোটরসাইকেলে কে উঠেছিলেন, সেটি বোঝার আপাত কোনো সুযোগ নেই। অথচ যদি অ্যাপে বাইকটি ভাড়া করা হতো, তাহলে তাৎক্ষণিক শনাক্তের সুযোগ ছিল।

তিন বছর আগে মোবাইলে অ্যাপে গাড়ি ভাড়ার যে সেবা চালু হয় ঢাকায়, তার মধ্যে বিশেষ করে মোটরসাইকেল ভাড়ার পদ্ধতিটি অনেকাংশে কার্যকর হচ্ছে না। অ্যাপে না গিয়ে চুক্তিতে যেতে যাত্রীদের মধ্যে করছে বহু বাইকার।

কিন্তু এতে দুই ধরনের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। কে কার বাইরে উঠছে, তার প্রমাণ নির্দিষ্ট থাকে না। ফলে নির্জন স্থানে গিয়ে বাইকার যেমন যাত্রীর ক্ষতি করতে পারে, আবার যাত্রীও বাইকারের ক্ষতি করতে পারে। আর এই ঘটনাটিই ঘটেছে গত রবিবার দিবাগত মধ্য রাতে। যাত্রীবেশে বাইক ভাড়া করে মিলনকে খুন করে সেটি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে মালিবাগ ফ্লাইওভারে।

যারা বাইরে যাত্রী পরিবহন করেন, মিলনের মৃত্যুতেও তাদের মধ্যে হুঁশ ফিরেছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। অ্যাপে না চলে মোড়ে মোড়ে যাত্রীর জন্য দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে তারা ওই হত্যাকে ‘নিছকই ভাগ্য নির্ধারিত’ বলেছেন।

এর আগে গত মে মাসে ঢাকা থেকে গাজীপুরে চুক্তিতে গিয়ে খুন হন ইউরেপিয়ান ইউনিভার্সির শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন। তখনও যাত্রীবেশে কারা উঠেছিলেন, সেটা বের করতে পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়।

অন্যদিকে উবারে প্রাইভেট কার চালানো আরমানকে হত্যা করে তার গাড়ি নিয়ে চম্পট দেওয়া তিন জনকে শনাক্ত ও ধরতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। উদ্ধার করা হয়েছে ছিনতাই হয়ে যাওয়া গাড়িটি।

মিলনের বাইকটি নিবন্ধন করা ছিল পাঠাওয়ে। সবশেষ গত ৭ আগস্ট তিনি আ্যপে যাত্রী নিয়েছিলেন। এরপর যত যাত্রী তুলেছেন, সবাইকে বাধ্য করেছেন চুক্তিতে যেতে। আর এই ‘বদভ্যাসই’ শেষ পর্যন্ত কেড়ে নিল তার প্রাণ। পাঠাও বলছে, কোনো নম্বর থেকে রিকোয়েস্ট পাঠালে যাত্রীবেশী খুনিকে ধরতে তারা তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারত।

মিলনের মৃত্যু থেকে তার মতো করে বদভ্যাস রপ্ত করা অন্য বাইকাররা কী ভাবছেন? এক যাত্রী মোবাইল ফোন বের করে রিকোয়েস্ট পাঠাতে চাইলে কারওয়ানবাজার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক বাইকার নিজেই জানতে চাইলেন, ‘কোথায় যাবেন?’

-কীভাবে যাবেন, অ্যাপে?’- জানতে চাইলেন ওই যাত্রী।

আসিফ নামের এই চালক বলেন, ‘না, খ্যাপে যাব।’

-‘অ্যাপ থাকতে খেপে কেন?’

-‘অ্যাপে কাস্টমার বেশি পাই না, আর কাস্টমার পাইলেও অ্যাপ এ গিয়ে পোষায় না।’

-‘খ্যাপে গিয়ে একজন চালক দুইদিন আগেই খুন হয়েছেন জানেন?’

-‘এতো রাইতে গাড়ি চালাইলে তো মারবেই। আর কোন প্যাসেঞ্জার ছিনতাইকারী সেটা বোঝার উপায় নেই। যে কোন সময় বিপদ আসতে পারে, এখনো আসতে পারে। কপালে যা আছে তাই হবে।’

পরে দরকষাকষি করে দেড়শ টাকায় ওই যাত্রীকে নিয়ে যাত্রাবাড়ীর পথে রওয়ানা হন বাইকার আসিফ।

বাংলামোটরের মোড়ের পশ্চিম পাশের বাস স্টপজেও জনা পাঁচেক বাইকারের জটলা দেখা গেল। কাছে যেতেই একজন জানতে চাইলেন, ‘কোথায় যাবেন ভাই?’

‘চুক্তিতেই বাইক চালান?’- এমন প্রশ্নে রাজীব নামে বাইকার বলেন, ‘যখন যেভাবে পাই সেভাবেই যাই। তবে আ্যপে কম যাই, কারণ আ্যপের যাত্রীদের নিয়ে নিজের বাসার দরজার কাছে নামিয়ে দিতে হয়। কিন্তু খ্যাপের যাত্রীদের নিয়ে দিকদারি নাই, ভাড়া করার সময় মেইনরোডে নামাবার চুক্তি করে নেই। কথায় পোষালে নেই না হলে নেই না। যাত্রীদের নামানো নিয়েও ঝামেলা হয় না।’।

চুক্তিতে গিয়ে মিলনের বাইকের পাশাপাশি জীবন হারানোর কথা জানতে চাইলে রাজীব বলেন, ‘না, এমন কিছু তো জানি না। আর খুন খারাবি আমাদের দেশে নতুন কি?’

যাত্রীদের মধ্যেও সচেতনতার অভাব দেখা গেছে। গুলশান পুলিশ প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন বাইক ভাড়ার চেষ্টা করছিলেন মৌখিক চুক্তিতে। এভাবে চলার ঝুঁকির বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে এই যাত্রী বললেন, ‘অ্যাপে গাড়ি আসতে সময় লাগে। তাই চুক্তিতে যাই। আবার সব সময় অ্যাপের গাড়ি আসতেও চায় না।’

মিলনের খুনিদের শনাক্ত করতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘কে বাইকটা ভাড়া করেছিলেন জানি না। এই বিষয়ে এখনও তদন্ত চলছে। ফ্লাইওভারে উঠার এবং নামার পথের ফুটেজ দিয়ে চেক করা হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে যেখানে খুন হয়েছে, সেই তিন তলায় কোনো সিসি ক্যামেরা নেই।’

যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়ায় চালানোর অনুমোদন নেই। অ্যাপভিত্তিক কোম্পানিগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তাদের গাড়ির বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনার জন্য সরকারি নীতিমালা হয়েছে। এই নীতিমালার বাইরে কেউ গাড়ি চালালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক।’

চালক ও যাত্রীরা সচেতন না হলে মিলন হত্যার মতো বেদনাদায়ক ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না বলেও মনে করেন মোজাম্মেল।

ঢাকাটাইমস/২৯আগস্ট/এসআর/ডব্লিউবি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :