অবশেষে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পেলেন ববিজান

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট ২০১৯, ১২:৩৯

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ববিজান বেওয়াকে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৬২তম সভায় ববিজান বেওয়াসহ ৪৬ নারীকে বীরাঙ্গনা খেতাব দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়।

ববিজান মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের বাঁশতৈল পশ্চিমপাড়া গ্রামের হারাদন আলীর মেয়ে।

২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর ‘মির্জাপুরের বীরাঙ্গনা ববিজানের দুঃখগাথা’ শিরোনামে ঢাকাটাইমসে স্বচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হলে তা ওই সময়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারীর নজরে আসে। তিনি টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহাবুব হোসেনকে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে ববিজানকে ঢেউটিন ও নগদ টাকা প্রদান করেন।

এ সময় প্রত্যন্ত এলাকায় খোঁজ করে সত্য ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশের জন্য অতিরিক্ত সচিব ঢাকাটাইমসের মির্জাপুর প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর হোসেনকে মোবাইল ফোনে ধন্যবাদ জানান।

এর আগে ওই খবরে ওই সময়ের মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম আহমেদ ববিজানকে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড, কম্বল ও বিছানার চাদর দেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় একদিন পাকবাহিনী ববিজান বেওয়াদের গ্রামে ঢুকে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক বিএসসিসহ আরও কয়েকজনের বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। ওইদিনই পাক বাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে ঢুকে অস্ত্রের মুখে ববিজানসহ আরও কয়েকজন নারীকে পাশবিক নির্যাতন চালায়। অস্ত্রের ভয় আর পাশবিক নির্যাতনের কারণে জ্ঞান হারান তিনি। ধর্ষিতা হওয়ার অপরাধে স্বামীর সংসার ছাড়তে হয় তাকে। সরকারি জমিতে ঘর তুলে বসবাস করতে থাকেন তিনি। বয়স হওয়ায় এখন কানেও শোনেন না তেমন, স্মৃতিশক্তিও কমে গেছে।

স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পাননি ববিজান। পাননি বয়স্ক বা বিধবা ভাতা বা সরকারি কোনো সযোগ-সুবিধাও। উল্টো পেয়েছেন মানুষের লাঞ্ছনা, ঘৃণা, অপবাদ। ববিজানের জীবনের এসব ঘটনা তুলে ধরে ঢাকাটাইমসে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে অবশেষে ববিজান বেওয়া বীরাঙ্গনা খেতাব পান।

ববিজান বলেন, ‘দীর্ঘদিনেও কেউ আমার কোনো খোঁজ নেয়নি। তিন বছর আগে প্রথমে ঢাকাটাইমস আমাকে নিয়ে সংবাদ করে। পরে প্রশাসনের কর্মকর্তারাসহ অনেকেই খোঁজ খবর নিয়েছেন। ঢেউটিন, নগদ টাকা ও বয়স্ক ভাতার কার্ডও পেয়েছি। অবশেষে জীবনের সর্বশেষ চাওয়া বীরাঙ্গনা খেতাবও পেলাম।’ এজন্য ঢাকাটাইমসের মির্জাপুর প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর হোসেন ও সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলনকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের ৪৯ বছর পর হলেও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সভায় ববিজানকে বীরাঙ্গনা খেতাব দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান মির্জাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক দুর্লভ বিশ্বাস।

মির্জাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. খাইরুল ইসলাম ববিজান বেওয়ার নামে গেজেট প্রকাশ হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ভাতাপ্রাপ্তিসহ সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এই যু্দ্ধে আমাদের ৩০ লাখ মানুষ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট হয়েছে। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার সেই সকল মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবার ও বীরাঙ্গনাদের খোঁজে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিচ্ছে। যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

ঢাকাটাইমস/২৯আগস্ট/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :