বিআইবিএমের কর্মশালায় বক্তারা

কৃষকের উন্নয়নে শস্য গুদাম ঋণ জোরদার করতে হবে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০১৯, ১৮:৪৬ | প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট ২০১৯, ১৭:১২

কৃষকদের উৎপাদিত শস্যের ন্যায্য মূল্য যেন পায়, সেজন্য ব্যাংকগুলোকে শস্য গুদাম ঋণ জোরদার করতে হবে। এর ফলে কৃষরা ভরা মৌসুমে তাদের উৎপাদিত ফসল শস্য গুদামে (ওয়ারহাউজ) রাখতে পারবে এবং এর বিপরীতে ঋণ পাবে। আর এটা করা গেলে কৃষক মধ্যসত্বভোগিদের দৌরাত্ব থেকে হ্রাস পাবে। টেকসই ব্যাংকিং কার্যক্রম জোরদার হবে যা দেশের উন্নয়ন তরান্বিত করবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে এক কর্মশালায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) আয়োজিত কর্মশালায় ‘সাসটেইনেবল ব্যাংকিং অ্যাক্টিভিটিস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড.শাহ মো. আহসান হাবীব।

আহসান হাবীব বলেন, বর্তমানে মোট ঋণর ৩ শতাংশ কৃষিক্ষেত্রে দেয়া হয়। কিন্তু এ সেক্টর সবচেয়ে বড় সেক্টর । এখাতে আরও বেশি ব্যাংকে এগিয়ে আশা উচিৎ। এতে টেকসই ব্যাংকিং কার্যক্রম জোরদার হবে। দীর্ঘ মেয়াদে কৃষকের সুবিধার জব্য শস্য গুদাম ঋণের কোন বিকল্প নেই। আর এ শস্য গুদাম ঋণ দিতে গেলে কমিউনিটি বেইজ কৃষি ভোগ্যপণ্য মার্কেট গড়ে তুলতে হবে। দেখা যাবে কয়েকজন মিলে শস্য গুদাম করতে ব্যাংক থেকে লোন নিল। ব্যাংক এখানে টাকা দিবে। তবে ওয়ার হাউজ করতে সরকারের পলিসি সাপোর্ট প্রয়োজন হবে।

আহসান হাবীব বলেন, কৃষকের শস্য গুদামে তার উৎপাদিত ফসল রাখতে পারলে পরবর্তী সময়ে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারবে। এ ব্যবস্থায় কৃষক তার উৎপাদিত ফসল গুদামে রেখে ফসলের মূল্যের বিপরিতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন। এটা করা গেলে ভরা মৌসুমে অতিরিক্ত সরবরাহের মধ্যে শস্য বিক্রি করে কৃষক ক্ষতির মুখে পড়বে না।

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএম-এর সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ওয়ার হাউজের বিষয়টি এইভাবে হতে পারে, পণ্য বন্টর প্রক্রিয়া উন্নত করতে হবে। দেখা যাচ্ছে কোন কোন যায়গায় আলু পঁচে যাচ্ছে, কোন কোন যায়গায় শস্য বেশি হয়ে গেছে ডিসট্রিবিউশন পদ্ধতি সুষ্টু নেই। এটা না থাকার জন্য কৃষক মার খাচ্ছে। এমনটি হলে টেকশই উন্নয়ন হবে না। এর জন্য সাসটেনেবল ডেভলমমেন্ট চেইনের মধ্য সকলকে থাকতে হবে। কৃষকের যাতে সহয়ে শস্য গুদামে ফসল রাখতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে কৃষক ফসল উৎপাদনে আরও উৎসাহিত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াছিন আলি বলেন, কয়েকদিন আগে আমাদের এখানে বন্যা হয়ে গেল। কৃষকের বাড়িতে যে খাদ্য শস্য ছিল সেটা কিন্তু পঁচে গেছে। তার রাখার জন্য (ওয়ারহাউজ) গোডাউনের দরকার আছে। এখানে কৃষকের চাহিদা আছে শস্য গুদামের। আর গোডাউনের শস্যরাখার বিপরিতে কৃষকে লোন দেয়া যায়।

ইয়াছিন আলি বলেন, এটা করতে গেলে সরকারের সহোজোগিতা প্রয়োজন আছে। কারণ গ্রাম লেবেলে গোডাউন করে এটা করতে গেলে টেকসই হবে না। সরকার যদি গোডাউন করে দেয় তাহলে টেকসই হবে।

প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর তৌহিদুল আলম খান বলেন, কৃষকারা মধ্যসত্বভোগিদের দৌরাত্ব থেকে হ্রাস পেতে পারে ওয়ারহাউজ সিসটেমের মাধ্যমে। আমরা যদি ওয়ারহাউজে ভাল করে হাত দেই তাহলে এই দেশের উন্নয়নের চিত্র অনেক বদলে যাবে।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাসটেইনেবল ব্যাংকিং অ্যাক্টিভিটিস অব বাংলাদেশ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় উত্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেকসই এবং গ্রীন ব্যাংকিং কার্যক্রম ত্বরাণি¦ত করতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক এবং গ্রাহকদেরও টেকসই এবং গ্রীন ব্যাংকিং কার্যক্রম বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রয়েছে। টেকসই ব্যাংকিং নিশ্চিত করতে হলে অর্থনৈতিক, সামজিক এবং পরিবেশ – এ তিন ক্ষেত্রেই যথাযথ অগ্রগতি সাধন করতে হবে। আর তা করা সম্ভব হবে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন, নেতৃত্ব এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে। এতে আরও বলা হয়েছে, আগামী দিনে টেকসই ব্যাংকিংয়ের আওতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জীব-বৈচিত্র্য, শস্য গুদাম ঋণ এবং গ্রীন ট্রান্সপোর্টেশন খাতে অর্থায়ন গুরুত্ব পাবে।

কর্মশালার উদ্বোধন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এস এম. মনিরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক গত কয়েক বছর ধরে সাসটেইনেবল ব্যাংকিংয়ের জন্য কাজ করছে। মূলত গ্রীন ব্যাংকিং, কর্পোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) এবং ইনক্লুসিভ ফ্যাইন্যান্স বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গ্রীন ব্যাংকিংয়ের উদ্যোগ ব্যাংকার এবং গ্রাহকদের মধ্যে পরিবেশের ঝুঁকি বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করেছে। গ্রীন ব্যাংকিংয়ে এখনও এগিয়ে বেসরকারি বাণিজ্যিকগুলো। এসব ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সিএসআরের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ এবং দুর্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেছে।

বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ব্যাংকিং খাতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে এজন্য দক্ষ কর্মী গড়ে তোলা প্রয়োজন। ব্যাংককর্মীদের প্রশিক্ষণের ওপর সর্বোচ্চ জোরারোপ করতে হবে। তিনি বলেন, টেকসই ব্যাংকিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে যাতে এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার মোর্শেদ মিল্লাত বলেন, টেকসই ব্যাংকিং করার জন্য প্রথমে মানসিকতা তৈরি জরুরী।

(ঢাকাটাইমস/২৯আগস্ট/ জেআর/ আরএ )

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :