যশোরে এডিস দমনে ‘কার্যক্রম নেই’, বাড়ছে রোগী

যশোর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩১ আগস্ট ২০১৯, ১৮:২১

যশোর জেলার আটটি উপজেলা ও শহরে ডেঙ্গুজ্বর ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু প্রতিরোধে নানা নির্দেশনা দিলেও বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। গ্রামে গ্রামে, পাড়া-মহল্লায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়লেও এডিস মশা নিধনে উদ্যোগ নেয়নি ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, নির্দেশনা দেয়া হলেও কোনো বরাদ্দ না দেয়ায় কার্যক্রম শুরু হয়নি।

সূত্র জানায়, আলোচনাসভা, লিফলেট বিতরণ ও ফটোসেশন ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে জোরালো কার্যক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে না যশোরের কোনো জায়গাতেই। পুরো যশোরের উপজেলা ও ইউনিয়নগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র সদর পৌরসভা ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধে বাস্তবে কিছু কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

যশোর সিভিল সার্জন অফিস জানায়, ঢাকার বাইরে যশোরে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু কেনো ডেঙ্গু রোগী বেড়েই চলেছে তার নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। কারণ উদঘাটনে চেষ্টা চলছে অব্যাহত৷

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল রাত ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত যশোরে আরো ৫২জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছেন। জেলায় মোট ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩শ ১৭ জন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন ১ হাজার ৪৩ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৩৭জন।

এর মধ্যে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১০৬জন, বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১৭ ও বেসরকারি হাসপাতালে ৩১জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গুজ্বরে মৃত্যু হয়েছে দুই নারীর।

যশোরে ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ার কারণে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে। বিভাগীয় কমিশনার যশোর জেলাকে তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে স্থানীয়ভাবে বিষেশ পরিকল্পনা ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশনা দিয়েছেন।

এডিস মশার লার্ভা নিধনের ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানিয়ে বলা হয় জেলা উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে পরিছন্নতা ও সচেতনতা বিষয়ে অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেন। এছাড়া ছুটির দিনও সরকারি কর্মকর্তাদের কাজ করার নির্দেশনা জারি করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই নির্দেশনা গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম এখনো পৌঁছায়নি। বিভিন্ন নির্দেশনা জারি হলেও বাস্তব চিত্র হচ্ছে তার ভিন্ন। যশোর শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর এলাকায় আলোচনাসভা, লিফলেট বিতরণ ও ফটোসেশন ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে তেমন কোন কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি। তবে যশোর পৌরসভা ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধে শুরু থেকে কিছু কার্যকম চালিয়ে যাচ্ছে।

পৌরসভার পক্ষ থেকে এডিস মশা নিধনে স্প্রে ও ওষুধ বিতরণ, বিভিন্ন স্থানে ফগার স্প্রে করা হয়েছে।

সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, ছাতিয়ানতলা, দৌলতদিহি, কাশিমপুর, হৈবতপুর, নাটুয়াপাড়া, ডহেরপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে কোন কার্যক্রম তাদের এলাকায় হয়নি। এই বিষয়ে মানুষকে সচেতনতার জন্য কেউ তাদের কোনো পরামর্শ দিতেও আসেনি। তাদের ভাষায় সেখানে কোন ডেঙ্গু প্রচারণা বা প্রতিরোধে কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

যশোর সদরের দুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ডেঙ্গু মশা নিধনে কার্যক্রমের নির্দেশনা জারি করা হলেও কোন অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। যে কারণে তারা জোরালো কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন। তবে ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা মানুষকে ডেঙ্গুজ্বর সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, শুধুমাত্র যশোর শহরে ১৫ হাজার এডিস মশার লার্ভার সন্ধান পাওয়া গেছে। বিভিন্ন উপজেলায় লার্ভার সংখ্যা আরো বাড়বে।

পৌর কর্তৃপক্ষ এডিস মশার লার্ভার স্থানে ফগার মেশিন দিয়ে বিদেশি ওষুধ স্প্রে করছে। এখন স্প্রে করা হলেও তাৎক্ষনিকভাবে লার্ভার ধ্বংস হবে না। তবে এর ফল মিলবে আগামী বছর। তবে গ্রামাঞ্চলে কোনো জনপ্রতিনিধি বা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এডিস মশার লার্ভা নিধনে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে জানতে পেরেছেন। যে কারণে সেখানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে। যশোরে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় তারাও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে তারাও প্রচার-প্রচারণা, আলোচনা সভাসহ নানা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। যশোর পৌর এলাকা শেষ করে বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রচার প্রচারণায় যাওয়া হবে।

তিনি আরো জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে তিনটি মনিটরিং টিম গঠন, ১টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে। টিমের সদস্যরা আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, মানুষের সচেতনতা বাড়াতে না পারলে ডেঙ্গুজ্বরে প্রকোপ কমবে না। নিজ এলাকা থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন একাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে গ্রামাঞ্চলে জোরালো কার্যক্রম না হলে যশোরে আরো ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করতে পারে।

ঢাকাটাইমস/৩১আগস্ট/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :