অ্যাননটেক্স ও ক্রিসেন্টে ফাঁকা জনতা ব্যাংক

রহমান আজিজ ও জহির রায়হান
 | প্রকাশিত : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:১৪

রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংককে ফাঁকা করে দিয়েছে বলতে গেলে দুটি প্রতিষ্ঠান। বহুল আলোচিত অ্যাননটেক্স আর ক্রিসেন্ট ফুটওয়ার নানা কায়দা করে ব্যাংকটি থেকে তুলে নিয়েছে নয় হাজার কোটি টাকার বেশি। বহু চেষ্টা করেও সে টাকা আদায় করা যাচ্ছে না।

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৫৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে ২১ হাজার কোটি টাকা খেলাপি দেখিয়েছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে ব্যাংকের শীর্ষ ২১ গ্রাহকের কাছে আটকে আছে ১৪ হাজার কোটি টাকা।

এই শীর্ষ খেলাপিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা আটকে আছে অ্যাননটেক্স গ্রুপের কাছে। গত এক দশকে হঠাৎ করেই ফুলে ফেঁপে ওঠা প্রতিষ্ঠানটি জনতা ব্যাংক থেকে বের করে নিয়েছে পাঁচ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা।

অন্যদিকে জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধারের ক্রিসেন্ট গ্রুপ চামড়া রপ্তানির আড়ালে জালিয়াতি করে বের করে নিয়েছে তিন হাজার ৫৭২ কোটি টাকা। এই টাকা ফেরত না দেওয়ায় প্রতি প্রান্তিকেই স্ফীত হচ্ছে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের অংক। কারণ, প্রতি মাসেই যোগ হচ্ছে সুদ।

এর মধ্যে ক্রিসেন্টের ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আদালতে দোষ স্বীকার করে টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন, কিন্তু টাকা ফেরত আসেনি।

আর এ্যাননটেক্সে উদারহস্তে ঋণ দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটি তার পরিশোধিত মূলধনের দেড় গুণেরও বেশি টাকা ঋণ দিয়েছে এই গ্রুপকে। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন দুই হাজার ৯৭৯ কোটি হওয়ায় একজনকে সর্বোচ্চ ৭৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া যেত। কিন্তু ‘সম্ভাবনাময়’ বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি। সে সময়ই সন্দেহ ছিল এই টাকা ফেরত আসবে কি না, শেষমেশ ঘটেছে তাই।

জনতা ব্যাংকের জুনভিত্তিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঋণ খেলাপির পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপির পরিমাণ ছিল সাত হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ২০১৮ সালের শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭ হাজার কোটি ৯৯৮ কোটি টাকা।

এরপর ছয় মাসের ব্যবধানে অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুন শেষে খেলাপির পরিমাণ বাড়ে আরো চার হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে ঋণ দিয়ে ফেরত আসছে না, এই অংকটি দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ব্যাংকটির মোট খেলাপির মধ্যে প্রায় দুই-তৃতাংশ ২১ ব্যবসায়ীর কাছে আটকে গেছে।

শীর্ষ দুই খেলাপি ছাড়াও চৌধুরী গ্রুপে ৬২৫ কোটি টাকা ৫৭ লাখ, বিআর স্পিনিং মিলসে ৫৮৫ কোটি ৫৪ লাখ, থার্মেক্স গ্রুপে ৫৩১ কোটি ৬২ লাখ, ইব্রাহিম গ্রুপে ৪২২ কোটি ১৪ লাখ, জনকন্ঠ গ্রুপে ৩৯৩ কোটি ১১ লাখ, দি ডেল্টা কম্পোজিট নিট ইন্ডাস্ট্রিজে ২৮৬ কোটি টাকা ১৭ লাখ, শাহ নেওয়াজ গ্রুপে ২০১ কোটি চার লাখ, এমবিএ গার্মেন্ট অ্যান্ড টেক্সটাইলসে ১৬৯ কোটি চার লাখ, অ্যাপেক্স নিট কম্পোজিটে ১৫৫ কোটি ১৬ লাখ, আসিফ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজে ১৪৮ কোটি ৪৮ লাখ, পারটেক্স সুগার মিলসে ১৪৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, মেসার্স আলী পেপার মিলসে ১৪২ কোটি ৮৪ লাখ, ড্রেজ বাংলায় ১৪২ কোটি ২০ লাখ, কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম ১৩৯ কোটি ৭০ লাখ, ফাইবার সাইন ১৩৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা, আফিল জুট মিলস ১৩৭ কোটি ১৯ লাখ, ল্যান্ডমার্ক ফ্যাক্রিকস ১২৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং রেফকো ফার্মাসিউটিক্যালসের আটকে আছে জনতা ব্যাংকের ১২৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য আমরা ইতোমধ্যে একটি কমিটি করেছি। চলতি বছরে খেলাপি ঋণ আদায়ে যা যা করা দরকার সব করা হবে।’

‘সরকারি যতগুলো ব্যাংক আছে তার মধ্য থেকে একমাত্র আমরাই সর্বোচ্চ ৭০৬ কোটি টাকা খেলাপিদের কাছ থেকে আদায় করেছি।

বাংলাদেশ ব্যাংক দুই শতাংশ ডাউনপেমেন্টের মাধ্যমে খেলাপিদের পুণঃতফসিলের যে সুযোগ দিয়েছে সেটির দিকেও আমরা নজর দিচ্ছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংকিং খাত খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে। এরই মধ্যে জনতা ব্যাংকের বৃহৎ অংকের ঋণ খেলাপি ব্যাংক খাতকে ঝুঁকিতে ফেলবে।’

‘আমার মনে হয় জনতা ব্যাংকের প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারভিশন কম। এটি একটি বড় কারণ। এর জন্য দায়ী অর্থমন্ত্রণালয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দক্ষ জনবলের অভাবে তারা ভালোভাবে মনিটারিং করতে পারছে না।’

(ঢাকাটাইমস/০১সেপ্টেম্বর/ডব্লিউবি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :