গণরুমে থাকার ঘোষণা ‘লজ্জিত’ ডাকসু নেতার
প্রকাশ | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২০:২৮ | আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:৩০
‘গণরুম সমস্যার সমাধান’ করবে এই আশ্বাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভোট চেয়েছেন ডাকসু সদস্য তানভীর হাসান সৈকত। কিন্তু ইশতেহার পূরণ করতে না পেরে লজ্জিত হয়ে বৈধ সিট ছেড়ে গণরুমে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। যতদিন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন গণরুম সমস্যার দৃশ্যমান সমাধান না করছে ততদিন গণরুমে থাকবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি এই ঘোষণা দেন।
জানা যায়, ডাকসুর এই নেতা কবি জসিম উদ্দীন হলের ৩২০ নং রুমের আবাসিক ছাত্র। রবিবার থেকে তিনি ২০৮নং গণরুমে থাকছেন।
এ বিষয়ে তানভীর হাসান সৈকত ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করেছে। নির্বাচনের সময় বিভিন্ন প্যানেলের মুখ্য ইশতেহার ছিল গণরুম সমস্যার সমাধান করা। আমি নিজেও এটার কথা বলে ছাত্রদের কাছে ভোট চেয়েছি। নির্বাচনের দীর্ঘ পাঁচ মাস পরেও এই সমস্যার সমাধান না করতে পেরে আমি সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থী।’
সৈকত বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বড় বড় ভবনে এসি রুমে থাকছেন আর শিক্ষার্থীরা গণরুমে থেকে তাদের মেধা নষ্ট করবে একজন ছাত্র প্রতিনিধি হয়ে আমি এটি হতে দিতে পারি না।আমি চাই এটির সমাধান হোক। এরই প্রতিবাদে আমি গণরুমে থাকা শুরু করেছি এবং যতদিন এটির দৃশ্যমান সমাধান না হবে ততদিন আমি গণরুমেই থাকব।’
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘স্যারের সন্তান যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত তাহলে তিনি সন্তানকে গণরুমে থাকতে দিতেন কি না?’
এই নেতা বলেন, ‘বিশ্বদ্যিালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য সবার আগে গণরুম বন্ধ করে দেয়া প্রয়োজন।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে এটার সমাধান করতে পারে। তারা শিক্ষকদের জন্য বড় বড় ভবন নির্মাণ করছে। শিক্ষার্থীদের জন্য ভবন নির্মাণ করা হবে না কেন? এই বিশ্ববিদ্যালয় আগে শিক্ষার্থীদের জন্য, তারপর শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য।’
প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘শিগগির এই সমস্যার সমাধান না করা হলে ছাত্র আন্দোলনের ডাক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় ভবনগুলো দখল করা হবে।’
তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, সৈকত যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা যুগোপযোগী। তবে মনে হয় না এটার সমাধান সহজ হবে। তারা এই সমস্যার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করছেন। তারা বলেন, গণরুম বন্ধ করে দিলে ছাত্রলীগ জোর করে আর কোনো প্রোগ্রামে নিতে পারবে না।তাই তারা তাদের রাজনৈতিক উদ্দ্যেশ্য হাসিলের জন্য এটা হতে দেবে না।
এ বিষয়ে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি আমার জায়গা থেকে প্রসাশনকে বলেছি। কিন্তু তারা এটিকে আমলে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী না।’
ছাত্রলীগই এই সমস্যার জন্য দায়ী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গণরুম না থাকলে তো ছাত্রলীগ জোর করে শিক্ষার্থীদের মিছিল মিটিং করাতে পারবে না।তাই নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের সহযোগী হয়ে এটির সমাধান করছে না।’ এজন্য ছাত্রদের জেগে উঠে প্রসাশনকে বাধ্য করাতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
তানভীর হাসান সৈকতের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তানভীর তার মানবিক মূল্যবোধ থেকে এটির পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। সে এই সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হলেও যেকোনো বাধার কারণে পারছে না।আমি তার এই পদক্ষেপের ব্যাপারে পূর্ণ একাত্মতা পোষণ করছি।’
এ বিষয়ে ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নতুন ভবন নির্মাণ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট সমাধান হবে না। তাই এটির স্থায়ী সমাধান করার জন্য আমরা সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের চেষ্টা করছি।’
এ ব্যাপারে কথা বলতে উপাচার্যকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
(ঢাকাটাইমস/০২সেপ্টেম্বর/জেবি)