এক সেতুর অভাবে ধুঁকছে ১৫ গ্রাম

খাইরুল ইসলাম বাসিদ, পাবনা
 | প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:৩৯

‘বুঝার বয়েস হওয়ার পরের তেনে দেখতিছি এহেনে বিরিজ নাই। নৌকায় পার হওয়া লাগে। হাট-বাজার, হাসপাতালে আসা-যাওয়া সব কামে কষ্ট হয়। ছাওয়ালপাল স্কুলে যাবের লাগলিও ভয় করে। মাঝেমধ্যি নদীত পইড়ে যায়। এভাবে আর কতদিন চলা লাগবি কিডা জানে। চিয়েরমেন-মেম্বাররা ভোট আসলি কয় বিরিজ (ব্রিজ) করবি, কিন্তুক পরে আর হয় না। আমারে কষ্ট দেহার মানুষ নাই।’

এভাবেই আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন পাবনার চাটমোহর উপজেলার বরদানগর গ্রামের ইসমাইল হোসেন নামে এক ব্যক্তি। শুধু ইসমাইল হোসেনই নয়, এমন আক্ষেপ ওই এলাকার সাধারণ সব মানুষেরও।

স্থানীয়রা জানান, একটি সেতুর অভাবে উপজেলার কাটেঙ্গা-বরদানগর এলাকাসহ আশপাশের অন্তত ১৫টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ খেয়া নৌকায় পারাপার হচ্ছেন অনেকদিন ধরে। দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর এক পাড় থেকে অপর পাড়ে যেতে অনেক সময় নানা দুর্ভোগের শিকার হতে হয় তাদের।

শুধু সাধারণ মানুষই নয়, সেতু না থাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্কুল শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে নদী পার হতে হয়। এতে আতঙ্কে দিন কাটে তাদের অভিভাবকদের।

এলাকাবাসী জানায়, একটি সেতু হলে তাদের দুর্ভোগ লাঘব হবে। এর ফলে গতি আসবে ওই এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও। অথচ বিষয়টি দেখেও সেতুটি নির্মাণে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদীর পূর্ব পাড়ে রয়েছে বরদানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরদানগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, বরদানগর দাখিল মাদ্রাসা, বরদানগর উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি বাজার। আর পশ্চিমপাড়ে রয়েছে দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

এলাকাবাসী জানান, বর্ষা মৌসুমে তাদের বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়। বর্ষকালে নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বরদানগর, বিন্যাবাড়ি, লাঙ্গলমোড়া, চরনবীণ, বনমালী নগর, চিনাভাতকুর, বহরমপুর, করিমপুর, গৌর নগর, নিমাইচড়াসহ অন্তত পনেরটি গ্রামের মানুষের উপজেলা শহরে আসার জন্য দীর্ঘসময় খেয়া নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। গ্রামগুলোর বেশিরভাগ রাস্তা কাঁচা। একটু বৃষ্টি হলেই ওই রাস্তাগুলো কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। অসুস্থ কোনও রোগীকে হাসপাতালে আনা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া রাস্তাঘাট না থাকায় কোনো যানবাহন ওইসব গ্রামগুলোতে প্রবেশ করতে পারে না। উপায় না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও নৌকায় করে শিক্ষার্থীদের নদী পার হতে হয়। নৌকায় পারাপার হতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই অনেক শিশু শিক্ষার্থী দুর্ঘটনার শিকার হয়।

আর যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপের কারণে গ্রামগুলোতে দোকানপাটের সংখ্যা অনেক কম। কৃষকরা তাদের আবাদ করা জমির ফসল শহরে আনতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামে বসেই কম দামে বিক্রি করতে হয় জমির ফসল।

দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘবে এলাকাবাসী সেখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খোকন বলেন, ইতিমধ্যে সেখানে সেতু নির্মাণের অনুমোদন হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ পেলে নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাজু আহমেদ জানান, সেতুটির নকশার কাজ চলছে। সেটি শেষ হলেই খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

ঢাকাটাইমস/৫সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :