জাপায় নেতৃত্ব নিয়ে গোলযোগ

চেয়ারম্যান-বিরোধীদলীয় নেতা দুই পদই চান কাদের; নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকতে চান এরশাদপত্নী রওশন

প্রকাশ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:৪৩

বোরহানউদ্দিন, ঢাকাটাইমস
রংপুর সদর আসনে উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে মিছিল করেছে এরশাদের ভাতিজা মকবুল শাহরিয়ার আসিফ

দলীয় প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই দলের নেতৃত্ব নিয়ে গোলযোগ তৈরি হয়েছে জাতীয় পার্টিতে।

জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন না তা নিয়ে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়েছে এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের ও এবং স্ত্রী রওশন এরশাদের মধ্যে। এ নিয়ে ইতিমধ্যে পাল্টাপাল্টি চিঠি দিয়ে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন দেবর-ভাবি। অন্যদিকে নতুন আরেক সমস্যায় পড়েছে রংপুর-৩ আসনে জাপার প্রার্থী দেয়া নিয়ে।

এরশাদের এই আসনটিতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে রওশনপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদকে সামনে আনা হচ্ছে। তার পক্ষে আছেন রওশন এরশাদ। আর অন্য একটি পক্ষ সামনে নিয়ে আসছে সাবেক সংসদ সদস্য ও এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ারকে। তার পক্ষে আছেন কাদের।

এই দুই পক্ষের বিরোধ ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে। পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ হয়েছে রংপুরে। সাদের কুশপুতুল পোড়ানো হয়েছে।

জাতীয় পার্টিতে বিরোধ, বিপত্তি নতুন কিছু নয়। এরশাদ জীবিত থাকাকালিন সময়ে নানা ঘটনা ঘটেছে। তার চলে যাওয়ার পর এই বিভেদ বাড়বে এমন আশঙ্কা ছিল।

এরশাদ জীবিত থাকা অবস্থায়ই রওশন ও কাদেরের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। আর এর পেছনে দলের পদপদবি। যা সামাল দিতে দুজনের পদে নানা পরিবর্তন আনতে হয়েছিল এরশাদকে। কিন্তু এরশাদ মারা যাওয়ার পর তাদের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারণ করে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির প্রধান হিসেবে এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন। যদিও শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করা এরশাদ সেই সংসদে যাওয়া-আসার তেমন সুযোগ পাননি।

গত ১০ জানুয়ারি বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবে ছোট ভাই জি এম কাদেরকে মনোনীত করেছিলেন এরশাদ। তবে এমন সিদ্ধান্তে বেশিদিন স্থির থাকেননি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি। গত ২৩ মার্চ এরশাদ এক সাংগঠনিক চিঠিতে সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকে জিএম কাদেরকে সরিয়ে তার স্থলে স্ত্রী দলের কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদকে মনোনীত করেন।

এরশাদ বেঁচে থাকাবস্থায় এ নিয়ে তেমন সমস্যা না হলেও গত ১৪ জুলাই তিনি মারা গেলে দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতার বিষয়টি সামনে চলে আসে।  কারণ নিজের অবর্তমানে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে ভাই জিএম কাদের দায়িত্ব পালন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন এরশাদ। তবে বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন, এর কোনও সুরাহা করে যাননি।

জিএম কাদেরের চেয়ারম্যান হওয়ার বিষয়টি এরশাদ আগে জানিয়ে গেলেও রওশনপন্থীরা সেটা মেনে নিতে রাজি হননি। ফলে এরশাদের মৃত্যুর পরপরই দলটির প্রেসিডেন্ট ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা মনোনয়ন নিয়ে জিএম কাদের ও রওশনপন্থীদের মধ্যে টানাটানি শুরু হয়। দেওয়া হলো বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতি।

জানা গেছে, অবশ্য জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নিতে রওশনপন্থীরা কিছুটা নমনীয় হলেও তাকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে চান না। তাদের দাবি, রওশনই হবেন বিরোধীদলীয় নেতা।

দলের ২৬ এমপির মধ্যে ১৫ জনই জি এম কাদেরকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দেখতে চান। গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এ বিষয়ে একটি চিঠিও দেন।

দলটির বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম কাদের স্বাক্ষরিত স্পিকারকে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় সংসদে বর্তমানে জাতীয় পার্টির প্রধান বিরোধী দল হিসেবে রয়েছে। আমাদের দলের চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলের নেতা ইন্তেকাল করেছেন। এই পদটি বর্তমানে শূন্য রয়েছে।

ইতিমধ্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং পার্টির সংসদীয় দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যরা, বিরোধী দলের নেতা হিসেবে জি এম কাদেরের নাম প্রস্তাব করছে। আর এই বিষয়টি চিঠিতে উল্লেখ করেন কাদের।

বিষয়টি নিয়ে চটেছেন রওশন ও তার অনুসারী জাপা নেতারা। রওশন এরশাদ নিজেকে ওই আসনে বসাতে গতকাল তিনিও স্পিকারকে চিঠি দিলেন। এটি পৌঁছে দেন দলীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু।

গণমাধ্যমকে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জিএম কাদেরের চিঠিটি যথাযথভাবে পাঠানো হয়নি এবং সংসদীয় দল বা পার্টির কোনও পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই চিঠি পাঠানো হয়নি, সেটা জানিয়েই এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

‘জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারি কমিটির কোনও বৈঠক ছাড়া স্পিকারকে দেওয়া জিএম কাদেরের চিঠির কোনও দাম নেই।’

জিএম কাদেরের চিঠি আমলে না নিতে স্পিকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রওশন এরশাদ বলেছেন, ‘আপনাকে (স্পিকার) জানাতে চাই, উনি (জিএম কাদের) পার্টির চেয়ারম্যান নন, উনি হচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।'

জটিলতা কাটেনি প্রার্থিতা নিয়ে

রংপুরে এরশাদের আসনে স্থানীয় জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে বাদ দিয়ে সাদ এরশাদকে মনোনয়ন দেয়ার চেষ্টা করছে দল ও এরশাদ পরিবারের একাংশ। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে তৃণমূল জাতীয় পার্টি। বহিরাগত প্রার্থী ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী এরশাদের ভাতিজা সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ।

গত মঙ্গলবার দুপুরে রংপুরের সেনপাড়ার লাঙল ভবন থেকে মিছিল বের করেন আসিফ শাহরিয়ারের কর্মী-সমর্থকেরা। তারা সাদ এরশাদকে রংপুরে অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করেন। এমন অবস্থার মধ্যে এখনো মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে পারেনি জাপার হাইকমান্ড।

ঢাকাটাইমস/৫সেপ্টেম্বর/বিইউ/ডব্লিউবি