পালিয়েছিলাম, ‘খুন হওয়ার’ পাঁচ বছর পর আদালতে এসে কিশোর

প্রকাশ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:৫৯

আদালত প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

তাকে খুন হওয়ার অভিযোগে জেল খেটেছেন একাধিক মানুষ। তবে পাঁচ বছর পর জানা গেল বেঁচে আছে সেই কিশোর। ১০ বছরের শিশুটি এখন ১৫ বছরের কিশোর।

এখন কারাগারে দিন কাটছে কিশোর আবু সাঈদের। আদালতে হাজির করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাকে কেউ অপহরণ বা হত্যা করেনি। পড়ালেখা ভালো না লাগায় আমি নিজে থেকে বাড়ী থেকে পালিয়ে যাই।’

বৃহস্পতিবার ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় সাঈদকে। তার বাবা মোহাম্মদ আজম ও মা মাহিনুর বেগমকেও হাজির করা হয়।

বিচারক বেগম শাসসুন্নাহার প্রথমে বক্তব্য শোনেন আবু সাঈদের। এরপর বাবা মোহাম্মদ আজমকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। আজম আদালতে উপস্থিত ছেলেকে দেখিয়ে বলেন, ‘এই সেই আবু সাঈদ, যে হারিয়ে গিয়েছিল।’

এরপর আসামিপক্ষে আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘একটি ছেলে নিজ থেকে পালিয়ে যায়। সেখানে মিথ্যা অপহরণ মামলায় তিন জন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে তাদের নির্যাতন করে দুই জনকে নিয়ে মিথ্যা হত্যার স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। আজ সেই মৃত ছেলে জীবিত হয়ে আদালত। এ মামলার যে তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই (বর্তমানে ডেমরা থানায়) রুহুল আমিন নির্যাতন করে মিথ্য স্বীকারোক্তি আদায়কারীর মাস্টারমাইন্ড ছিল। তার এবং তার পেছনে তারা কলকাঠি নাড়িয়েছে তার বিচার চাই।’

এরপর বিচারক জানান, ‘এই আবু সাঈদ যে, এ মামলার নিহত আবু সাঈদ তা আমাকে পুলিশ প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানতে হবে। তাই আগামী ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হারারীবাগ থানাকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ দিলাম।’

‘আর অপনাদের মিথ্যা মামলার বিচার চাওয়ার আবেদনের আদেশ পুলিশ প্রতিবেদন পাওয়ার পর দেয়া হবে।’

শুনানিকালে সাঈদকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় কারাভোগ করা সাইফুল ইসলাম, সোনিয়া আক্তার ও তার ভাই আফজাল হোসেন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবু সাঈদ হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল বাবা মো. আজম একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরপর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির মামলা হয়।

ওই মামলায় বিভিন্ন সময় আসগর আলী, মিলন, সাইফুল ইসলাম হাওলাদার, সোনিয়া আক্তার, তার ভাই আফজাল হোসেন ও শাহীন বারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর সাইফুল ও আফজাল ঢাকা সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন।

স্বীকারোক্তি আসামিরা বলেন, তারা আবু সাঈদকে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ বরিশালগামী লঞ্চ থেকে নদীতে ফেলে দেন।

ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ডিবির ধানমন্ডি জোনাল টিমের এসআই রুহুল আমিন। মামলাটি আদেশ দানকারী ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্কের পর্যায়ে রয়েছে।

আসামিপক্ষের অভিযোগ বাদীপক্ষ ছেলেকে পাওয়ার পরও তা না জানিয়ে আপসের কথা বলে বাদী আজম পাঁচ লাখ টাকাও নেন বলে অভিযোগ আছে। গত ৩০ আগস্ট ছেলেকে নিয়ে আরও দুই লাখ টাকা নেয়ার জন্য পল্লবী থানাধীন একটি বাসায় আসেন। এরপরই তাদের আটক করে প্রতারণার মামলা দেয়া হয। ওই মামলায় তারা এখন জেল হাজতে রয়েছেন।

ঢাকাটাইমস/০৫সেপ্টেম্বর/ডব্লিউবি