রফিকের কাছে ক্ষমা চায়নি কেউ

প্রকাশ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:০১ | আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:০৮

ঢাকাটাইমস ডেস্ক

বেঁচে থাকাকালীন সময়ে যাদের দুটো পা মাটিতেই থাকে, যারা অকৃত্রিম বিনয়ে সবাইকে ভালোবাসেন। দিনশেষে এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল ভূখণ্ডে, শুধুমাত্র তাঁদেরকেই আমরা হৃদয়ের গভীরে স্থান দেই নিখাঁদ ভালোবাসায়।

বলছি মোহাম্মদ রফিকের কথা। সেই ১৯৯৭ সালের আইসিসি কাপ জয়ী দলের সদস্য তিনি। সেই টুর্নামেন্টে ৯ ম্যাচে ১০.৬৮ গড়ে ১৯ উইকেট নিয়েছিলেন। তার সেরা ২৫ রানে ৪ উইকেট এসেছিল সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে টেস্টে ১০০ উইকেট অর্জনের কীর্তি তার। টেস্ট ও ওয়ানডেতে এক হাজার রান ও ১০০ উইকেটের ডাবল ছোঁয়া প্রথম বাংলাদেশি বোলার। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি আমাদের প্রথম অলরাউন্ডার ক্রিকেটার। ব্যাটিং করতেন মারকুটে স্বভাবে।

২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে মুলতানে পাকিস্তানকে হারিয়েই দিয়েছিলেন তিনি। অমানুষের ভাগাড় পাকিস্তানের খেলোয়াড়েরা একাধিক চৌর্যবৃত্তি করলেও, মোহাম্মদ রফিক দেখিয়েছিলেন উদারতা। ১৬ বছর আগের সেই টেস্ট আমাদের নৈতিকতার বিজয় বলেই চিহ্নিত হবে।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৩৩ টেস্ট ও ১২৫ ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালের ওয়ানডে অভিষেকেও প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৩৩ টেস্ট ও ১২৫ ওয়ানডে খেলেছেন রফিক। টেস্টে তাঁর বোলিং গড় ৪০.৭৬ ও ওয়ানডেতে বোলিং গড় ৩৭.৯১ । 

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কমতি ছিল এবং তা লুকোবার কোনো অপচেষ্টা করেননি। আইসিসি কাপ জেতার পর সরকারিভাবে উপহার পেয়েছিলেন ৫ কাঠা জমি ও গাড়ি। রফিক এ উপহার নিয়ে কি করলেন তা অনেকেরই অজানা। কেননা, ঘটনাটি মিডিয়াতে তেমনভাবে আসেনি। যে মিডিয়া দিনকে রাত ও রাতকে দিন বানাচ্ছে সেই মিডিয়ার কাছে মোহাম্মদ রফিকের এই অসামান্য মানবিক কাজটি গুরুত্ব পায়নি আজ পর্যন্ত।

তিনি তার নিজের উপহারের অংশ দান করেন, নিজ এলাকায় স্কুল নির্মাণের জন্য। গাড়ি বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে স্কুল-ঘর তুলে দিয়েছিলেন। রফিকের ভাষায়, “ভাই আমি তো লেখাপড়া কিছু শিখিনাই, আমি খুব গরিব ঘরের ছেলে ছিলাম। লেখাপড়ার গুরুত্ব আমি বুঝি। আমার এলাকার ছেলে-মেয়েরা যেন লেখাপড়া শিখে মানুষ হয় এবং সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় সেজন্যই এই কাজ করেছি।’  

রফিক আজ প্রায় অন্তরালে চলে যাওয়া মানুষ। যে রফিক জমি ও গাড়ির লোভ ত্যাগ করে স্কুল নির্মাণ করেন, সেই রফিক ক্রিকেটের গড়াপেটায় জড়িত ছিলেন এই দাবি আমরা তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করি। কেরানীগঞ্জ এলাকার মানুষ জানেন রফিক কতটা সাধারণ জীবনযাপন করেন। যারা রফিককে জড়িয়ে ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগ আনলেন, সেটা প্রমাণিত না হবার পর, একটিবার ক্ষমা চাইলেন না আজ অবধি! 

দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পেশা এখন হাস্যকর। আগাছা আর পরগাছায় ভরে উঠছে সকল উদার জমিন। এটা সেই পত্রিকা যাদের বিনোদনের পাতা দেখলে ভুলে যাই আমি কোন দেশে আছি। এরা সেই ক্রীড়া সাংবাদিক যারা নিজের দেশের সোনার মানুষকে পদদলিত করে বিদেশি খেলোয়াড়দের জন্য বরাদ্দ রাখে ১০ কলাম। মোহাম্মদ রফিক, কখনোই ম্যাচ গড়াপেটার সাথে জড়িত নন। তিনি আমাদের অনেকের চাইতে অনেক বেশি প্রশস্ত চিত্তের মানুষ।

মোহাম্মদ রফিক ক্রীড়াঙ্গনে ফিরে আসুন, ক্রিকেটের স্বার্থেই আপনাকে প্রয়োজন। বাংলাদেশের প্রথম অলরাউণ্ডারের এই নির্বাসন দুঃসহ। ফিরে আসুন রফিক। তার অভিজ্ঞতা আমাদের ভবিষ্যৎ ক্রিকেটারদের জন্য নিঃসন্দেহে অমূল্য সম্পদ, এই সম্পদ ব্যবহার করা বড্ড প্রয়োজন।

আজ ৫ সেপ্টেম্বর এই অসাধারণ মানুষটির ৪৯তম জন্মদিন। গেরিলা ১৯৭১ পরিবার, মোহাম্মদ রফিক নামের অসামান্য, উদার চিত্তের মানুষটিকে হৃদয় নিঙড়ানো ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।

শুভ জন্মদিন প্রিয়, শ্রদ্ধেয় রফিক ভাই।

ক্রিকেটের বর্তমান আপনার শ্রম ও ত্যাগের প্রতিফলন।

ফেসবুক পেজ ‘গেরিলা ১৯৭১’ থেকে সংগৃহীত।