অভিন্ন নীতমালা বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষক নিয়োগ ও পদন্নোতির জন্য অভিন্ন নীতিমালা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরাম।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০০ শিক্ষক উপস্থিত হন।
মানববন্ধনে বংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি পাঠ করেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আলতাফ হোসেন রাসেল।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যে কোন ধাপের শিক্ষার মত উচ্চশিক্ষারও দুটি দিক আছে। তার একটি হলো শিক্ষার মানোন্নয়ন, আর অন্যটি শিক্ষার আকার সম্প্রসারণ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোয়ন্নকে স্বায়ত্বশাসনের আওতায় রেখে অর্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে। ইউজিসির অধ্যাদেশে পরবর্তী সময়ে জনবল সংক্রান্ত কাঠামোগত একটি সংশোধন এলেও দায়িত্বগত কোন পরিবর্তন এখনোও হয়নি। ওই দুটি অধ্যাদেশ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, স্বায়ত্ব শাসনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই নিজের মান নির্ধারণ করবে, আর ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়েল চাহিদা অনুযায়ী শুধু আকার নির্ধারণ করবে। অথচ ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল ইউজিসির এক সভায় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি-পদোন্নয়নবিষয়ক এক অভিন্ন নীতিমালা গৃহিত হয়, যা তার কর্মপরিধির বাইরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নকে নিয়ন্ত্রণ করার সুক্ষ্ম প্রয়াস। ইতোমধ্যেই আমরা অবগত হয়েছি, গত ২৫ আগস্ট মন্ত্রণালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে এই অভিন্ন নীতিমালাটি নীতিগতভাবে গৃহিত হয়েছে।
বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকে ঢালাওভাবে বৈষম্যপূর্ণ আখ্যা দিয়ে ইউজিসি যে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, তা বৈচিত্রপূর্ণ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একধরনের ভুল সাধারণীকরণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসনের পরিপন্থী এবং বর্তমান সরকারেরই ১০ বছরের শিক্ষার উন্নয়নকে অস্বীকার করা হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরাম ।
শিক্ষক ফোরাম মনে করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ অনুষদ, আবার একই অনুষদের বিভিন্ন বিভাগেরও শিক্ষক নিয়োগ ও প্রমোশন নীতি ভিন্ন হতে পারে। এসময় তারা অভিন্ন নীতিমালা না করে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনার মাধ্যমে একটি যুগোপযোগী বাস্তব নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব দেন।
এই অভিন্ন নীতিমালা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের স্বায়ত্বশাসনের ওপর চূড়ান্ত আমলাতান্ত্রিক আক্রমণ দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরাম বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক এই অভিন্ন নীতিমালা বাতিল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে যারা অভিন্ন করতে চায় তাদের বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। এটি দেশের ভেতর আরেকটা দেশ। দেশে যেমন পার্লামেন্ট থাকে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট থাকে। সকল নিয়ম-কানুন স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রণয়ন করবে। আমরা এখানে বাইরের কারো হস্তক্ষেপ চাই না। আমরা শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে শীতিল করতে চাই না বরং এটি আরো কঠিন হোক।
তিনি আরো বলেন, এই নীতিমালা তৈরি করার একমাত্র যোগ্য হলো স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আজকের মানববন্ধন একটা ম্যাসেজ। সরকার যদি এই ম্যাসেজটা নেই যে এটার প্রতি শিক্ষকদের অনাস্থা তাহলে এটা এখানেই থেমে যাওয়ার কথা। এই অভিন্ন নীতিমালা অতি শিগগির না থামানো হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ারও হুমকি দেন তিনি।
(ঢাকাটাইমস/৫সেপ্টেম্বর/এলএ)