পাঁচ লাখ মানুষের জন্য ডাক্তার দুইজন!

অনলাইন ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:৩০

৫০ শয্যার নাটোরের সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক আছেন মাত্র দুইজন। পাঁচ লাখ মানুষের চিকিৎসা দিতে দুইজন ডাক্তার থাকায় যথাযথ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার মানুষ।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে গড়ে প্রতিদিন সহস্রাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক সংকটের কারণে প্রতিদিন শত শত রোগীকে ফিরে যেতে হয় চিকিৎসা না নিয়েই। দীর্ঘদিন থেকে জোড়াতালি দিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসা চললেও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। এতে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সিংড়া উপজেলায় ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই উপজেলার লোকসংখ্যা পাঁচ লক্ষাধিক। চলনবিলবাসীর শতভাগ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ২০১৩ সালের ২৪ আগস্ট হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। সেই হিসেবে এই হাসপাতালে ৩৪ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালটিতে ৩১ শয্যা হিসেবেই চিকিৎসা চলছে।

গত তিন মাস ধরে মাত্র দুইজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। ডাক্তারের অভাবে প্রায় এক বছর ধরে টেলি মেডিসিন সেবাও বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার ও সার্জারি মেশিনগুলো নষ্ট হচ্ছে।

গত বুধবার সকাল ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের সামনের হোয়াইট বোর্ডে লেখা রয়েছে মেডিকেল অফিসার পদ সংখ্যা-১৭ জন, আছেন দুইজন। পদ শুন্য-১৫ টি।

সরেজমিনে সেদিন দেখা যায়, চিকিৎসা সেবা নিতে ভিড় করছেন শতাধিক রোগী। জরুরি বিভাগের ভেতরে ঢুকে দেখা যায় সেখানে কোনো ডাক্তার নেই। ডাক্তারের দুটি চেয়ারই ফাঁকা পড়ে রয়েছে। আর ফাঁকা চেয়ারের বাম পাশে বসা শোলাকুড়া গ্রাম থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা মোছা. মিতু বেগম। অসুস্থতার কারণে তিনি ছটফট করছেন। পরে সাংবাদিকদের কথা শুনে জরুরি বিভাগে একজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট আসেন। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে কোনো ডাক্তার না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। এখানে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট আর ওয়ার্ড বয়রাই এখন রোগীর পেপার মাপাসহ সার্বিক সেবা দিয়ে থাকেন বলে জানান রোগীর স্বজনরা।

উপজেলার জয়নগর গ্রামের রশিদা বেগম বলেন, তার ২০ দিনের শিশু আব্দুল আল রুহান অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসেছিলেন। কিন্তু কোনো ডাক্তার না থাকায় এখন তিনি ফিরে যাচ্ছেন।

পুরুষ ওয়ার্ডের ৪নং বেডে ভর্তি ৯৮ বছরের বৃদ্ধ নুর মোহাম্মদ আক্ষেপ করে বলেন, ‘একজন ডাক্তার দিয়ে পখি মারছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আমার শ্বাসকষ্ট বেড়েই চলেছে কেউ দেখার নেই।’

একই ওয়ার্ডের পার্শ্ববর্তী ৫নং বেডে ভর্তি ডাহিয়া গ্রামের বিদ্যুৎ ঘোষ বলেন, পেটে গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় কোনো ডাক্তারকে পাননি। নার্সদের ডাকা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এ এস এম আলমাস বলেন, সিডিউল করে তারা মাত্র দুইজন মেডিকেল অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন। আর রাতে কোন মেডিকেল অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন না। এখানে আরএমও পদটি খালি সেখানেও তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। আউটডোর, ইনডোর ও জরুরি বিভাগে গড়ে হাসপাতালে সারাদিন সহ¯্রাধিক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। ইনডোরে ভর্তি রোগীর জন্য আমরা মেডিকেল অফিসার চেয়েছি কিন্তু কতদিনে তা পাব বলতে পারছি না।

সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালটি ৫০ শয্যার হলেও জলবল সংকটের কারণে ৩১ শয্যা হিসেবে জলবলের হিসাব দেয়া রয়েছে। আর গত তিন মাস ধরে মাত্র দুইজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ঈদুল আযহা থেকে কাউকে কোনো ছুটি না দিয়ে ওভারটাইমও করানো হচ্ছে।

ঢাকাটাইমস/৬সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :