ভারত ও আমরা

প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:৪৯

হুমায়ুন কবির ভুঁইয়া

আমি কুটনৈতিক বিষয় কাভার করি মোটামুটি ২০০৫ সাল থেকে। ২০১০ থেকে নিয়মিত কাভার করি। তারপরও, ভারতীয় দূতাবাসের কোনো অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত দেয়া হয় না। এ পর্যন্ত সর্বসাকুল্যে আমি তিনবার দাওয়াত পেয়েছি। আজসহ। এটা ঠিক আছে। আমার কোনো সমস্যা নেই। কাকে দাওয়াত দেয়া হবে বা হবে না, এটা পুরোপুরি হোস্টের ব্যাপার যাই হোক।

তৃতীয়বারের মত নিমন্ত্রিত হয়ে আজ যখন হোটেল সোনারগাঁওয়ে গেলাম একটু দেরিতে, তখন দেখলাম যে আমাদের সহকর্মীদের মধ্যে একটা গদগদ ভাব। কি পেলুম রে, এরকম একটা বিষয়! আমার মনে হলো আমাদের অধিকাংশ সহকর্মী, যারা এই পেশার দিশারী, ভুলে গেলেন দেশে তাদের অবস্থান। তারা একজন যুগ্মসচিব বা তারও নিম্ন পদধারী কর্মকর্তাদের নমনম করতে লাগলেন যেন এই আচরণগুলো না করলে দেব ও দেবীরা তুষ্ট হবেন না। এমনকি, তাদের দিকে ছোড়া কর্মকর্তাদের অপমানসূচক বাক্যও তাদেরকে তাবেদারি করা থেকে বিরত রাখতে পারল না।

বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আচরণ না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল যে তারা কূটনীতির সামান্য শিষ্টাচার ও শিখতে পারেননি। আবার এরাই যখন আমেরিকা বা ইউরোপ যান তাদের আচরণ থাকে মসলিনের মত মোলায়েম।

আমি যখন আমার এক সহকর্মীকে এই অপমানসূচক ব্যবহারগুলোর কথা বলছিলাম উনি তখন হুশ হুশ করে আমাকে খাবার খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে বলেছিলেন। যখন আমাকে উনি সামাল দিতে পারছিলেন না, তখন উনি আমাকে একা টেবিলে রেখে চলে গেলেন। দেটস জাস্ট ফাইন। আই ডোন্ট মাইন্ড।

ভারত আমাদের অন্যতম প্রতিবেশী। রাষ্ট্র ভারতকে অসম্মান করার কোনো সুযোগ নেই। আমি কখনও করিও না। কিন্তু, আমরা যেমন ভারতকে সম্মান করি, তাদেরকেও আমাদের সমান সম্মান দিতে হবে। এবং, আমাদের গণমাধ্যমের কর্তা ব্যক্তিরা চাইলেই এটা সুনিশ্চিত করতে পারেন। ভারতীয় দূতাবাসের একজন দ্বিতীয় সচিব ইচ্ছে করলেই আমাদের প্রথম শ্রেণীর পত্রিকার একজন সম্পাদকের সাথে দেখা করতে পারেন যেকোনো মুহুর্তে। কিন্তু দিল্লিস্থ আমাদের দূতাবাসের কোনো কর্মকর্তা কি চাইলেই সে দেশের কোনো প্রথম শ্রেণির পত্রিকার সম্পাদকের সাথে দেখা করতে পারবেন? মনে হয় না!

আমাদের সমস্যাটা কোথায়? অবশ্যই, মেরুদণ্ড কেন্দ্রিক। সবার প্রতি সীমাহীন শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই যে আজকের মত অনুষ্ঠানে আমি অনেক সময় চিনতে পারি না কে বাংলাদেশি আর কে নয়! কিউ আহত হয়ে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী। তারপরও, বলতে বাধ্য হচ্ছি যে কাউকে কাউকে এই ধরনের অনুষ্ঠানে দেখলে লেজ নাড়া বিশেষ একটা প্রাণীর কথা মনে হয়।

আমরা নিঃসন্দেহে আমাদের প্রতিবেশীকে ভালোবাসব। কিন্তু সেটা আমরা করব আমাদের সম্মানটা বজায় রেখে।

আমাদের সম্মানটা আমরা কবে সমতার ভিত্তিতে নিয়ে আসতে পারব সেটাই হলো ট্রিলিয়ন ডলার প্রশ্ন।

আমাকে আমন্ত্রণের জন্য ভারতীয় দূতাবাসের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।

লেখক: সাংবাদিক