পাঁচ হাজার টাকায় হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার

প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২৩:১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বুকের হাড় না কেটে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা খরচে দ্বিতীয়বারের মতো হৃদযন্ত্রের সফল অস্ত্রোপচার হলো দেশের সরকারি হাসপাতালে। প্রথম অস্ত্রোপচারটি হয়েছিল গত ২৫ আগস্ট।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) চিকিৎসক আশরাফুল হক সিয়ামের নেতৃত্বে সম্পন্ন হয় দুটি অস্ত্রোপচার। এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারকে বলা হয় মিনিমাল ইনভ্যাসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি (এমআইসিএস)।

আজ শুক্রবার ডা. আশরাফুল হক সিয়াম জানান, এই পদ্ধতিতে দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারটি হয় গত ২ সেপ্টেম্বর। সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হয়ে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলা অস্ত্রোপচারটি। অস্ত্রোপচার দলে ডা. সিয়ামের সঙ্গে ছিলেন ডা. আসিফ, ডা. রুমু, ডা. শাহরিয়ার, ডা. ওয়াহিদা, ডা. মনজুর, ডা. মইনুল ও ডা. আহসানারা। পারফিউশনে ছিলেন ডা. রুবাইয়াত। এনেস্থেশিয়ায় ছিলেন ডা. আজাদ ও ডা. রাজু।

এদিন মৌলভীবাজারের ৪০ বছর বয়সী মো. মতিনের বুকে অস্ত্রোপচার করা হয়। হৃদযন্ত্রে দুটি ব্লক নিয়ে গত ২৫ আগস্ট এনআইসিভিডির সার্জারি ইউনিট ৯-এ ভর্তি হন তিনি। ডা. আশরাফুল সিয়াম বলেন, ‘মিনিমাল ইনভ্যাসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি অপারেশন করে দুটি গ্রাফট দিই অফ পাম্প বেটিং হার্টে। সফলভাবে অপারেশনের পর তৃতীয় দিনের মধ্যেই মতিন সাহেব বাড়ি ফিরে যাওয়ার মতো সুস্থ হয়ে ওঠেন।’

এর আগে গত ২৫ আগস্ট দেশের কোনো সরকারি হাসপাতালে প্রথমবারের মতো বুকের হাড় না কেটে হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার করেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) ডা. আশরাফুল হক সিয়ামের নেতৃত্বে একটি দল। সেদিন ১২ বছর বয়সী শিশু নূপুরের হৃদযন্ত্রে  অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। নূপুর এখন সুস্থ আছে।

এই অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি সম্পর্কে ডা. আশরাফুল হক সিয়াম বলেন, ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় মিনিমাল ইনভ্যাসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি (এমআইসিএস)। এই পদ্ধতিতে বুক না কেটে ছোট ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার করা হয়।’

প্রচলিত অস্ত্রোপচারের চেয়ে এমআইসিএসে ঝুঁকি কম বলে জানান ডা. সিয়াম। বলেন, ‘হৃদরোগের যেকোনো অপারেশনই রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকি থাকে। কিন্তু প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতি বা অস্ত্রোপচার পদ্ধতি থেকে এমআইসিএস পদ্ধতিতে রিস্ক ফ্যাক্টর তুলনামূলক কম। কারণ রক্তক্ষরণ কম হয়, অন্যান্য সংক্রমণের আশঙ্কাও তেমন থাকে না। রোগীর আতঙ্ক ও প্রাণের ঝুঁকি দুটিই কম থাকে।’

এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারের পর রোগী খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে ওঠেন উল্লেখ করে ডা, সিয়াম বলেন, ‘আস্ত্রোপচারের পরদিনই রোগী বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা, অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় সময় ও খরচ কম লাগে।’

উন্নত কিছু দেশের অল্পসংখ্যক হাসপাতালে এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। ডা. সিয়ামের ভাষ্য, ‘বাংলাদেশের বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালে এখনো এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার শুরু হয়নি। কিছু হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে হলেও সরকারি হাসপাতালে প্রথমবারের মতো আমরাই এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করছি। এটি একটি বড় ধরনের সফলতা বলে আমরা মনে করি।’

বাংলাদেশে হৃদরোগ চিকিৎসায় প্রচলিত ‘কনভেনশনাল হার্ট সার্জারি’ পদ্ধতিতে বুকের মাঝখান বরাবর কেটে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু এমআইসিএস পদ্ধতির অস্ত্রোপচারে বুক কাটার প্রয়োজন হয় না।

ডা. সিয়াম বলেন, ‘একে হৃদযন্ত্রের ল্যাপরোস্কোপি বলা যেতে পারে। খুব অল্পসংখ্যক সার্জনই এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করে থাকেন। বয়স বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে যেসব রোগীর জন্য প্রচলিত পদ্ধতিতে হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়, এই পদ্ধতিতে সেসব রোগীকেও অস্ত্রোপচার করা সম্ভব। এতে তাদের অস্ত্রোপচারে ঝুঁকিও কম থাকে।

(ঢাকাটাইমস/৬সেপ্টেম্বর/বিইউ/মোআ)