শশীকাহন:পৌরাণিক উপাখ্যান:ফ্যান্টাসি থ্রিলার সিরিজ, পর্ব- সাত

ড.রাজুব ভৌমিক
 | প্রকাশিত : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:২৭

দেবী আজ্রিয়া তার শয়নকক্ষে যুবরাজ নিম্বের জন্য অপেক্ষা করছে। অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু যুবরাজ নিম্ব আসছে না। দেবী আজ্রিয়া বসে চিন্তা করে কেন নিম্বের আসতে দেরী হচ্ছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দেবী আজ্রিয়া তার অজান্তে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ রাজপ্রাসাদে সোরগোল শোনা যাচ্ছে। দেবী আজ্রিয়া তড়িঘড়ি করে ঘুম থেকে জেগে যায়। দেবী তার শয়নকক্ষ থেকে বেরিয়ে একজন রাজরক্ষীকে জিজ্ঞেস করল, ‘কি হয়েছে? চারিদিকে শশীদের এত কোলাহল কেন?’ রাজরক্ষী কিছুই বলতে পারে নি। দেবী আজ্রিয়ার বুকে হঠাৎ যেন একটি কামড় দেয়। তাই কি ভেবে দেবী আজ্রিয়া রাজপ্রাসাদের বাহিরে দেখতে যায়। রাজপ্রাসাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেবী আজ্রিয়া দেখে সামনের ফুলের বাগানের বহু শশীরা জমাট বেঁধে আছে। দেবী আজ্রিয়া তখন ঋষি অখিলের শিষ্য বিহগ্ন ও তার স্ত্রী মোচাসি এবং পুত্র কর্নদের আত্মাকে হাতজোড় করে আকাশে দেখতে পায়। তারা দেবী আজ্রিয়ার কাছে ক্ষমা চায়। দেবী বুঝতে পারে কোন অঘটন ঘটেছে। তাই দেবী বিচলিত হয়ে দ্রুত রাজপ্রাসাদের সামনের বাগানের দিকে দৌড়ে যায়। পূর্বে দেবী আজ্রিয়ার দ্বারা অনাকাঙ্খিতভাবে ঋষি অখিলের শিষ্য বিহগ্ন তার স্ত্রী মোচাসি এবং পুত্র কর্নদকে হারায়। বিহগ্ন তার মন্ত্র-বলে দেহত্যাগ করার আগে সে দেবী আজ্রিয়াকে অভিশাপ দিয়ে যায়। বিহগ্ন দেবী আজ্রিয়াকে অভিশাপ দেয় যে দেবী আজ্রিয়া যাকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসে তার বিয়োগে তাকে সারাজীবন কাটাতে হবে।

দেবী আজ্রিয়া বাগানের ভিতর প্রবেশ করার পর সে যুবরাজ নিম্বের চুরি-বিদ্ধ নিথর দেহটি মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে। যুবরাজের নিম্বে দেহের পাশে অনেকগুলো ফুল থেতলে পড়ে আছে। দেবী আজ্রিয়া নিম্বের মরদেহ দেখে সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। দেবীর মাটিতে পড়ার সাথে সাথে পুরো চন্দ্রগ্রহে একটি ভূকম্প অনুভূত হয়। আর সে দিন থেকে ভবিষ্যতে কোন চন্দ্রগ্রহে কোন ভূকম্প অনুভূত হলে শশীরা দেবী আজ্রিয়াকে স্মরণ করে এবং তাদের প্রিয়জনকে বুকে টেনে রাখে।

কিছুক্ষণ পর দেবী আজ্রিয়ার জ্ঞান ফিরে আসে। গভীর শোকে দেবী আজ্রিয়া কাঁদতে কাঁদতে যুবরাজ নিম্বের দেহটি দুই হাতে তুলে নিয়ে আকাশ পথ দিয়ে বহুদূর চলে যায়। দেবী আজ্রিয়া লাগগিন্তা রাজ্য থেকে বহুদূর এক শশী-শূন্য দ্বীপে নামে। সে দ্বীপে দেবী তার দৈব ক্ষমতা-বলে যুবরাজ নিম্বের শেষ ক্রিয়া সম্পন্ন করে। যুবরাজের দেহ যেন সবসময় দেবী আজ্রিয়ার প্রেমে ডুবে থাকে সে জন্য দেবী তার ভালবাসা দিয়ে তার চিতার উপরে বিশাল এক সমাধি গড়ে তুলে। এ সমাধিটি এত বিশাল যে দেখতে একটি ছোট পাহাড়ের মত। পরবর্তীতে এ দ্বীপ নিম্ব দ্বীপ বা প্রেমের দ্বীপ নামে পরিচিত হবে।

এদিকে পুত্রের মৃত্যুর সংবাদ শুনে রাজা শশাঙ্ক সাথে সাথে মৃত্যুবরণ করে। মহারানী কুর্নষা পুত্র-শোক এবং স্বামী শোক সহ্য না করতে পেরে মন্ত্রবল প্রয়োগ করে আত্মহত্যা করে। কিছুদিন পর মঞ্জট লাগগিন্তা রাজ্যের রাজা হয়। মঞ্জটের শাসনামলের শুরু থেকেই লাগগিন্তা রাজ্যে নানা দুর্ভোগ ছড়িয়ে পড়ে। মঞ্জট প্রজাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করত। প্রজারা ঠিকমত খাজনা দিতে না পারলে তাদেরকে রাজসৈনিক দিয়ে প্রচুর নির্যাতন করা হত। লাগগিন্তা রাজ্যে নানা রোগের বিস্তার শুরু হয়। এতে বহু শশী অকালে মারা যায়। আবার অনেকে তাদের নিজস্ব বাড়ি পরিত্যাগ করে অন্যরাজ্যে চলে যায়। মহারাজ মঞ্জট রাজকর্ম নিয়ে সবসময় উদাসীন ছিল। মঞ্জট রাজ্য শাসনে মনোযোগ না দিয়ে সব সময় প্রাণী শিকারে ব্যস্ত থাকত।

একদিন রাজা মঞ্জট জঙ্গলে শিকার করতে গিয়ে অন্য রাজ্যে নিজের অজান্তে ঢুকে পড়ে। হঠাৎ রাজা মঞ্জট একটি হরিণ শাবক দেখতে পায়। সে হরিণ শাবকটির পিছু পিছু জঙ্গলের ভিতর হাটতে থাকে। কিছুক্ষণ পর হরিণ শাবকটি থামে। রাজা মঞ্জট এই সুযোগে তার ধনুক থেকে বাণ নিক্ষেপ করে। কিন্তু তন্মধ্যে হরিণ শাবকটি রাজা মঞ্জটকে দেখে ফেলল এবং দ্রুত দৌড়ে পালিয়ে যায়। রাজা মঞ্জটের নিক্ষিপ্ত বাণটি জঙ্গলে তপস্যারত এক শশীর বুকে আঘাত করে। বাণের আঘাত পেয়ে সে তপস্যী জোরে চিৎকার শুরু করে। রাজা মঞ্জট হঠাৎ জঙ্গলের গভীরে শশীর চিৎকারের আওয়াজ শুনে হতচকিত হয়। রাজা মঞ্জট একটু সামনে এগিয়ে দেখে গাছের নিচে কেউ একজন মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। রাজা মঞ্জট তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। কি করবে সে বুঝতে পারছে না। দশ বা পনের বছরের একটি বালিকা জঙ্গলের এত গভীরে কি করছে রাজা জিজ্ঞেস করে। ‘কে তুমি? এত গভীর জঙ্গলে তুমি এখানে কি করতেছিলে?’ রাজা মঞ্জট তাকে জিজ্ঞেস করল। ‘আমি চলদাজ রাজ্যের মহারাজা রাসঙ্কের একমাত্র কন্যা তিস্রা। এই বনটি আমাদের রাজ্যেরই একটি অংশ। আমি দেবী আজ্রিয়ার একান্ত এক ভক্ত। দেবীর দর্শনের জন্য তপস্যা করতে আমি এই নিবিড় জঙ্গলকে বেছে নিয়েছি যাতে মনযোগ দিয়ে আমার প্রাণের দেবীর জন্য তপস্যা করতে পারি।’ যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে রাজকন্যা তিস্রা বলল।

রাজা মঞ্জট কি করবে বুঝতে পারে না। তিস্রা দেবী আজ্রিয়ার ভক্ত শুনে সে আরো রেগে যায়। এদিকে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে তিস্রা রাজা মঞ্জটের সামনে মারা যায়। রাজা মঞ্জট তিস্রার মরদেহকে জঙ্গলে রেখে কাউকে কিছু না বলে দ্রুত তার রাজ্যে ফিরে যায়। রাজকন্যা তিস্রার মৃত্যুর খবর দ্রুত চলদাজ রাজ্যের মহারাজা রাসঙ্কের কাছে পোঁছে যায়। রাজার চল্লিশ পুত্রের মধ্যে তিস্রা একমাত্র মেয়ে। একটি মেয়ের আশায় মহারাজা রাসঙ্কের চল্লিশটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। তিস্রা ছিল মহারাজা রাসঙ্ক ও মহারাণী যোদির সবচেয়ে আদরের সন্তান। তিস্রা চলদাজ রাজ্যের প্রজাদেরও অনেক প্রিয় ছিল। তিস্রা জন্মের পূর্বে চলদাজ রাজ্যে নানা দুর্ভোগ লেগে ছিল। কিন্তু তিস্রা জন্মের পর ধীরে ধীরে রাজ্যের সকল দুর্দশা দূর হয়ে যায়। শশীদের মুখে প্রচলিত ছিল যে তিস্রা স্বয়ং দেবী আজ্রিয়ার অবতার। বালিকা তিস্রা আবার দেখতে অনেকটাই দেবী আজ্রিয়ার মত ছিল। হঠাৎ তার একমাত্র কন্যার মৃত্যুর খবর শুনে রাজা রাসঙ্ক শোকে ভেঙ্গে পড়ে। সারা চলদাজ রাজ্যে গভীর শোক নেমে আসে। চলদাজ রাজ্যের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে রাজা ও সাধারণ প্রজারা রাজপ্রাসাদের সামনে আসতে থাকে। এক পর্যায়ে রাজপ্রাসাদের সামনে প্রায় লক্ষাধিক শশীর সমাগম হয়। সবাই রাজ প্রাসাদের সামনে তাদের প্রিয় রাজকন্যা তিস্রার মৃত্যুর শোক পালন করছে। ঐ দিন রাজপ্রাসাদের সামনে শশীদের যে জমাট হয়েছে তা পূর্বে কোথাও দেখা যায়নি। সব প্রজারা ইতিমধ্যে জেনে যায় যে লাগগিন্তা রাজ্যের মহারাজা মঞ্জটের হাতে তাদের প্রিয় বালিকা রাজকন্যার মৃত্যু হয় এবং রাজা মঞ্জট তাদের প্রিয় রাজকন্যাকে ময়লার মত জঙ্গলে তার মরদেহকে একা রেখে কাপুরুষের মত চলে যায়। রাজপ্রাসাদের বাহিরে প্রজারা জোরে জোরে চিৎকার করে একসাথে স্লোগান দিয়ে বলছে, ‘রাজকন্যা তিস্রা হত্যার বিচার চাই! চলদাজ রাজ্যের এ অপমানের বিচার চাই।’

মহারাজা রাসঙ্ক শোকে তার বিছানায় পড়ে আছে আর মহারাণী যোদি মহারাজাকে বারবার সান্তনা দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর চলদাজ রাজ্যের মহামন্ত্রী কাগবি রাজার কক্ষে আসে। ‘মহারাজার জয় হোক। হে প্রভু, রাজপ্রাসাদের সামনে প্রায় লক্ষাধিক প্রজার সমাগম হয়েছে। আরো প্রজারা আসছে। সবাই রাজকন্যা তিস্রা হত্যার বিচার চাইছে। তারা বলছে তিস্রা হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের বাড়িতে ফিরে যাবে না।’ মহারাজা রাসঙ্ক তার বিছানা থেকে উঠে বসে। ‘মন্ত্রী, কন্যাশোকে আজ আমি জর্জরিত। এই মুহূর্তে আমি কি করতে পারি।’ মহারাজা বলল। ‘প্রভু, আমাদের সব সেনারা আপনার আদেশের জন্য অপেক্ষা করছে। ওরা তাদের প্রিয় রাজকন্যার জন্য জীবনে দিতে প্রস্তুত।’ মন্ত্রী কাগবি বলল। ‘লাগগিন্তা রাজ্যে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক সেনা আছে। আবার দশজন বিশেষ আজ্রিয়া সেনা আছে যাদের প্রত্যেকের রয়েছে একহাজার হাতির শক্তি। আর আমাদের প্রায় একলক্ষ সেনা। এত বিশাল শক্তির কাছে আমরা কি করতে পারি। লাগগিন্তা রাজ্যের সাথে যুদ্ধে আমাদের নির্ঘাত পরাজয় এবং চলদাজ রাজ্যের সেনাদের অকাল মৃত্যু নিশ্চিত। এটা কিভাবে মেনে নিতে পারি। আমার প্রত্যেক সেনারা আমার সন্তানের মত। নিশ্চিত মৃত্যু জেনে আমি কিভাবে ওদেরকে যুদ্ধে পাঠাই।’ মহারাজা বলল। ‘প্রভু, আপনার সৈন্যরা আপনার জন্য, রাজকন্যা তিস্রার জন্য, এবং চলদাজ রাজ্যের জন্যে হাসিমুখে মরতে রাজী। আপনি শুধু আদেশ দিন।’ মহামন্ত্রী কাগবি বলল। রাজা তখন মন্ত্রীকে আগামীকাল সকালে রাজপ্রাসাদের সামনে জরুরীসভা ডাকার আহ্বান জানায়।

পরেরদিন মহারাজা চলদাজ রাজ্যের রাজপ্রাসাদের সামনে জরুরী রাজসভাতে আসে। রাজা তখন চলদাজ রাজ্যবাসীদের সম্মুখে বলল, ‘প্রিয় চলদাজবাসী, আজ আমি শোকাহত। আমি জানি আপনারাও রাজকন্যা তিস্রার অকাল মৃত্যুতে শোকাহত। কিন্তু আজ আমি আপনাদের সামনে প্রতিজ্ঞা করছি যতদিন পর্যন্ত রাজকন্যার তিস্রার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়া না হবে ততদিন পর্যন্ত আমি থামব না। লাগগিন্তা রাজ্যের মহারাজা মঞ্জট যেভাবে চলদাজ রাজ্যের অপমান করেছে তার উপযুক্ত বিচার অবশ্যই হবে। আজ আমি লাগগিন্তা রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছি।’ সাথে সাথে প্রজাদের উল্লাস শুরু হয়ে যায়। সবাই ‘মহারাজ রাসঙ্কের জয়’ বলে রাস্তায় উল্লাসে ফেটে পড়ে।

সেদিন বিকেলে মহারাজা তার বড় ছেলে যুবরাজ সমজান কে তার কক্ষে ডেকে পাঠায়। সমজান মহারাজের কক্ষে প্রবেশ করে। ‘পিতাশ্রী, আপনি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন?’ সমজান বলল। ‘হুম...আমি তোমাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতে ডেকে পাঠালাম। আগামীকাল ভোরে আমরা লাগগিন্তা রাজ্যে আক্রমণ করব। আমি চাই তুমি চলদাজ রাজ্যের সেনাদের এ যুদ্ধে পরিচালনা করবে। তোমার অস্ত্রবিদ্যার জ্ঞান সম্পর্কে পুরো চলদাজ বাসী জ্ঞাত। আমি জানি তুমি সেনাদের এ যুদ্ধে প্রকৃতভাবে পরিচালনা করতে পারবে।’ মহারাজা বলল। ‘পিতাশ্রী, এ তো আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি! আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনার সম্মান ও চলদাজ রাজ্যের সম্মান অক্ষুন্ন রাখতে।’ যুবরাজ সমজান বলল। কিছুক্ষণ পর মহারাজার কক্ষে মহামন্ত্রী কাগবি আসে। তিনজন মিলে আগামী কালের আক্রমনে পরিকল্পনা করছে। রাজা রাসঙ্ক সিদ্ধান্ত নেয় তার রাজ্যের ষাট হাজার সৈন্যকে এই আক্রমণে ব্যবহার করবে। বিশ হাজার সৈন্য কে রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্ব পূর্ণ স্থাপনা বা সাধারণ শশীদের রক্ষা করার জন্য চলদাজ রাজ্যে মোতায়েন করা হবে। আর বাকি বিশ হাজার সৈন্যকে সীমান্তে অপেক্ষা মোতায়েন করা হবে। প্রয়োজনে এ বিশহাজার সেনাদের পরবর্তীতে যুদ্ধে লাগানো হবে।

পরেরদিন ভোরবেলা। এখনো সূর্যোদয় হতে অনেকক্ষণ বাকী। সেনাপতি সমজানের নেতৃত্বে চলদাজ রাজ্যের প্রায় ষাট হাজার সেনা যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। যুদ্ধে আরো আছে চলদাজ রাজ্যের নামকরা পিলি বাহিনী। পিলি এক ধরনের প্রাণী যা দেখতে কিছুটা হাতির মত কিন্তু পিলি তিন মাথা বিশিষ্ট, হাতির চেয়ে দশ-গুন বড় এবং শক্তিশালী। পিলি ইচ্ছে করলে আবার উড়তে পারে। পিলিদের শুধু চলদাজ রাজ্যে দেখা যায়। এদের সংখ্যা খুবই বিরল। তাই মহারাজা এ আক্রমনে শুধু একহাজার পিলি ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে। পুরো রাজ্যে সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার পিলি রয়েছে। সূর্যোদয় হতে আর বেশি ক্ষণ বাকি নেই। সেনাপতি সমজান একটি পিলির পিঠে বসে আছে। সমজান পিলির পিঠে বসে চারিদিকে ঘুরে দেখে। সব প্রস্তুতি শেষ দেখে সেনাপতি সমজান তার কমান্ডারদের যুদ্ধ শুরু করার জন্য আদেশ দেয়। যুদ্ধের জন্য লাগগিন্তা রাজ্যের মহারাজা মঞ্জট শুধুমাত্র এক লক্ষ সেনা পাঠায়। মঞ্জট একটি আজ্রিয়াসেনাদের এ যুদ্ধে পাঠায়নি এবং নিজেও যুদ্ধে অংশগ্রহন করতে যায়নি। মহারাজা মঞ্জট দেবী আজ্রিয়ার নামটি পর্যন্ত সহ্য করতে পারে না। তাই তিনি আজ্রিয়া সেনাদের, প্রত্যেক একহাজার হাতির শক্তি থাকলেও, তাদেরকে দূরের এক অঙ্গরাজ্যের নিরাপত্তার জন্যে অনেক আগে পাঠিয়ে দেয়। মহারাজা মঞ্জট তার গুপ্তচর থেকে জানতে পারে যে চলদাজ রাজ্যের মোট ষাট হাজার সেনা এ যুদ্ধে অংশগ্রহন করছে। তাই সে ভেবেছে তার এক লক্ষ সেনা খুব সহজেই বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারবে এবং চলদাজ সেনাদের সহজে ধ্বংস করে দিতে পারবে।

যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। দুপক্ষে বহু সেনা নিহত হয়। যুদ্ধে চলদাজ রাজ্যের সেনারা একে একে আশি হাজারেরও বেশি লাগগিন্তা রাজ্যের সেনা হত্যা করে। আর বাকি সেনারা পালিয়ে যায়। সেনাপতি সমজানের নেতৃত্বে চলদাজ সেনারা একে একে লাগগিন্তার রাজ্যের মোট ত্রিশ অঙ্গরাজ্যের মধ্যে এগারটি অঙ্গরাজ্য দখল করে নেয়। সেনাপতি সমজান তার সেনা সংখ্যক কম হওয়ার কারনে আর অন্য কোন অঙ্গরাজ্য দখলের চেষ্টা করেনি। এ যুদ্ধে তার বহু সৈন্য মারা গেছে। তাই সেনাপতি সমজান ভাবল জীবিত সৈন্যদের কিছুদিন বিশ্রাম দেয়া উচিত। তারপর আবার সে আক্রমণ শুরু করবে। সেনাপতি সমজান তার ছোট দশ ভাইদের যুদ্ধে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানায়। তারা সবাই সেনাপতি সমজানের সাথে কয়েকহাজার সেনাসহ যুদ্ধে যোগ দিতে চলে আসে। এদিকে যুদ্ধে পরাজয়ের সংবাদ রাজা মঞ্জটের কাছে পৌঁছলে সে খুব ক্রোধিত হয় এবং তার নিযুক্ত সেনাপতি কে নিজহাতে সে হত্যা করে। এবার মঞ্জট সিদ্ধান্ত নেয় যে স্বয়ং সে নিজে এ যুদ্ধে অংশগ্রহন করবে।

মহারাজা মঞ্জট তার দুই লক্ষ সেনা নিয়ে যুদ্ধের জন্য অগ্রসর হয়। তার ইচ্ছা চলদাজ রাজ্যের সব সেনাদের হত্যা করে তার হারানো এগারটি অঙ্গরাজ্য উদ্ধার করবে। এদিকে চলদাজ রাজ্যের সেনারা যুদ্ধ করতে করতে দুর্বল। তারা এখন বিশ্রাম নিচ্ছে। সেনাপতি সমজান তার গুপ্তচরের মাধ্যমে খবর পায় যে রাজা মঞ্জট তার বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে যুদ্ধ করতে আসছে। এই সংবাদ শুনে সেনাপতি সমজান তার সেনাদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বলল।

এদিকে মহারাজা মঞ্জট তার বিশাল সেনাবাহিনী দিয়ে এগারটি অঙ্গরাজ্যের চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলল। প্রায় একলক্ষ সেনা দিয়ে মঞ্জট চলদাজ রাজ্যের সেনাদের ঘিরে ফেলল। আর বাকী একলক্ষ সেনা দিয়ে সামনে থেকে আক্রমণ শুরু করে। চলদাজ রাজ্যের সেনা সংখ্যা এমনিতে অনেক কম। প্রথম যুদ্ধের পর মহারাজা রাসঙ্ক তার রাজ্যের বাকি বিশ হাজার সেনাদের পাঠিয়ে দেয়। সব মিলিয়ে সেনাপতি সমজানের হাতে সৈন্যের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ হাজার। মহারাজা মঞ্জটের কৌশল আক্রমনের কাছে চলদাজ রাজ্যের সেনারা কিছুতে পারছে না । যুদ্ধ শুরুর কয়েক ঘন্টার মধ্যে চলদাজ রাজ্যের বেশিরভাগ সেনা নিহত হয়। বাকি সৈন্যরা পলায়ন করতে যায় কিন্তু মহারাজা মঞ্জটের সৈন্যরা তাদের জন্য সবজায়গায় অপেক্ষা করছে। লাগগিন্তা রাজ্যের সৈন্যরা এক এক করে চলদাজ রাজ্যের সব সেনাকে হত্যা করে। অন্যদিকে, মঞ্জটের হাতে সেনাপতি ও চলদাজ রাজ্যের বড় যুবরাজ সমজানের মৃত্যু হয়। এরপর রাজা মঞ্জট একে একে সমজানের যে দশ ভাই যুদ্ধে অংশগ্রহন করার জন্য এসেছে তাদেরকে সবাইকে হত্যা করে।

মহারাজা মঞ্জট এত রাগান্বিত যে সে চলদাজ রাজ্যের কোন সেনার লাশ পাঠায়নি। সে যুবরাজ সমজানসহ অন্য দশ যুবরাজের লাশ সবমৃতদেহের সাথে একসাথে পুড়িয়ে দেয়।

এ সংবাদ দ্রুত মহারাজা রাসঙ্কের কানে পৌছায়। মহারাজা রাসঙ্ক এবার তার এগার পুত্রকে হারিয়ে আরো ভেঙে পড়ে। অন্যদিকে, মহারাজ মঞ্জট তার বাকী সেনাদের অনিদিষ্ট কালের জন্য লাগগিন্তা রাজ্যের সীমান্ত মোতায়েন করে। তার বিশ্বাস এতে করে ভবিষ্যতে আর কেউ লাগগিন্তা আক্রমণ করার আগে ভাববে।

চলবে...

লেখক: কবি ও লেখক, অধ্যাপক: অপরাধবিদ্যা, আইন ও বিচার বিভাগ, জন জে কলেজ, সিটি ইউনিভার্সিটি নিউইর্য়ক, মনস্তাত্তিক বিভাগ, হসটস কলেজ, সিটি ইউনিভার্সিটি, নিউইর্য়ক। কাউন্টার টেরোরিজম কর্মকর্তা, নিউইর্য়ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এনওয়াইপিডি)।

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :