কর্মহীন হাজারও শ্রমিক

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে জামালপুরের সব পাটকল

সাইমুম সাব্বির শোভন, জামালপুর
 | প্রকাশিত : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:৫৫

পাটশিল্পের জন্য দ্বিতীয় ব্যান্ডিং হিসেবে পরিচিত ছিল জামালপুরের সরিষাবাড়ি। নারায়ণগঞ্জের পরেই ছিল এর স্থান। তবে লোকসানের কারণ দেখিয়ে একে একে সব পাটকলগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এতে হাজারও নারী-পুরুষ হয়ে পড়েছে কর্মহীন। এতে তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে অর্ধহারে-অনাহারে। এমনকি নারী শ্রমিকরা অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

বকেয়া কোটি কোটি টাকা মিল মালিকদের কাছে আটকে থাকায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় পাট ব্যবসায়ীরা। পাটকল শ্রমিকরা তাদের বকেয়া প্রদান এবং মিল চালুর দাবি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে এলেও মালিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সাড়া মিলছে না।

‘পাটশিল্প শহর’ বলে খ্যাত জামালপুরের সরিষাবাড়ি। এই এলাকায় আলহাজ্ব জুট মিলসহ ২২টি পাটকল ছিল। একেএকে সব পাট বন্ধ হওয়ার পর চলমান থাকে আলহাজ্ব, মিমকো, এআরও, পপুলার জুট মিল। এই চারটি মিলে ১৫ থেকে ২০ হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। পাঁচ বছরের ব্যবধানে এআর, মিমকো ও আলহাজ্ব জুট মিল বন্ধ হয়ে যায়। একমাত্র চলমান রয়েছে পপুলার জুট মিলটি।

১৪ মাস আগে বন্ধ হয়ে যায় সরিষাবাড়ির সবচেয়ে বড় পাটকল আলহাজ্ব জুট মিল। কর্তৃপক্ষ হঠাৎ মিলটি বন্ধ ঘোষণা করায় প্রায় চার হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। মিলটি বন্ধ হওয়ায় চার হাজার শ্রমিক পরিবার ১৪ মাস ধরে অর্ধাহারে-অনাহারের দিন কাটাচ্ছে। জীবিকার তাড়নায় অনেক নারী শ্রমিক মানুষের বাসা-বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করছে। অনেকেইে সপরিবারের মিলে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করায় তারা আরও বেশি বিপাকে পড়েছে।

আলহাজ্ব জুট মিলটি বন্ধ ঘোষণা করায় বিপাকে পড়েছেন পাট ব্যবসায়ীরা। মিলটি বন্ধের পর থেকে শ্রমিক-কর্মচারীর বকেয়া বেতন প্রদান এবং দ্রুত চালুর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষের কোনো সাড়া মিলছে না।

আলহাজ্ব জুট মিলের সিবিএ নেতা বলেন, মালিক কর্তৃপক্ষ হঠাৎ রাতারাতি মিলটি বন্ধ ঘোষণা করায় প্রায় চার হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে কাজ বন্ধ এবং বকেয়া টাকা না পাওয়ায় তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

আলহাজ্ব জুট মিল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন জানান, বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ বেআইনিভাবে মিলটি বন্ধ করে দেয়। প্রায় ১৪ মাস ধরে মিলটি বন্ধ রয়েছে। শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েছেন, কাগজ দিয়েছেন। কিন্তু মালিকপক্ষ নানা অজুহাত দেখিয়ে ১৪ মাস কাটিয়ে দিয়েছে।

আলহাজ্ব জুট মিলের মেশিন অপারেটর গোলাম রব্বানী জানান, মিলটি বন্ধ থাকার কারণে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মেশিনের যন্ত্রাংশে জং ধরেছে। বেয়ারিংগুলো জাম থাকার কারণে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মিল না চালু করা হলে সব মেশিন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মিলের কয়েকজন নারী পুরুষ শ্রমিক জানান, মিলটিতে তারা অনেকেই সপরিবারে কাজ করতেন। হঠ্যাৎ মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা। এই অবস্থায় সন্তানের লেখাপড়া খরচ চালাতে পারছেন না। তারা দ্রুত মিলটি চালু করে তাদের বকেয়া বেতনের দাবি জানান।

সরিষাবাড়ির পাট ব্যবসায়ী হাজী মো. আব্দুল বারী জানান, ১৪ মাস ধরে মিলটি তালাবদ্ধ আছে। এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল। এই মিল গ্যাসে চলে এবং শ্রমিক খরচও ছিল তুলনামূলক কম। সরিষাবাড়ি থেকেই কাঁচামাল পাট আমদানি হতো। তবুও কেন মিলটি বন্ধ হলো তা বোধগম্য নয় তাদের।

স্থানীয় সাংবাদিক জাকারিয়া জাহাঙ্গীর জানান, সরকারের সদিচ্ছা ও কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার মাধ্যমে পাটকলের এই অবস্থানটা ফিরিয়ে না আনলে সরাসরি যারা জীবিকা নির্বাহ করতো তারা ভিখারি হয়ে যাবে এবং পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে জানান তিনি।

তবে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি জহুরুল ইসলাম মানিক দাবি করেন, ইতিমধ্যে এই মিলটি দেখিয়ে মালিকপক্ষ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন নেই। আবারও লোন নেওয়ার পাঁয়তারায় আছে তারা। এই মিলটিকে রুগ্ন শিল্প বানিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টায় আছে কর্তৃপক্ষ।

এসব বিষয়ে সরিষাবাড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিহাব উদ্দিন আহমেদ ঢাকাটাইমসকে জানান, মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে শ্রমিক ও কর্মচারীরা অনেক কষ্টে রয়েছে। মিলটি চালুর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারি চ্যানেলে যোগাযোগ করা হবে। সবাই যেন নিজের কর্মের মধ্যে ফিরে এই ব্যবস্থা করা হবে।

ঢাকাটাইমস/৮সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :