২০ লাখ টাকা না পেয়ে হত্যা

মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ

প্রকাশ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:৩৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মৃত এবং দেশের বাইরে থাকা লোককে স্বাক্ষী করে হত্যা মামলার ফাঁসানোর অভিযোগ করেছেন একজন সাবেক জনপ্রতিনিধি। তার অভিযোগ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের একজন ইনস্পেক্টর ২০ লাখ টাকা ঘুষ না পেয়ে এই কাজ করেছেন।

রবিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন আল আমিন হত্যা মামলার আসামি দেখানো নবীনগরের বিদ্যাকুট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান ভূঁইয়া।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মামলাটিতে যাদেরকে সাক্ষী করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ২৪ জন আদালতে হলফনামা দিয়ে বলেছেন, তারা কোনো জবানবন্দি দেননি।

হান্নানের অভিযোগ, ডিআইজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে দেওয়ার কথা বলে ইনস্পেক্টর হারুনুর রশিদ তার কাছে ২০ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। দুইবার তিনি ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেনও।

যদিও তদন্ত কর্মকর্তা হারুণ ঢাকা টাইমসকে বলেছেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটি অসত্য। তার তদন্তে দুর্বলতা থাকলে সেটা আদালতে দেখবে।
 
লিখিত বক্তব্যে জানান হয়, পিবিআই এর তদন্ত কর্মকর্তা মোট ৩৯ জনের জবানবন্দী গ্রহণ করেন। এর মধ্যে ৭৩ বছর বয়সী আবদুর রউফও ছিলেন। ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর রউফ মারা গেলেও স্বাক্ষী হিসেবে তার জবানবন্দি নেয়ার তারিখ দেখান হয়েছে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি। অর্থাৎ তার মৃত্যুর দুই মাস ২৯ দিন পর তার জবানবন্দি রেকর্ড করার কথা জানানো হয়।

মেরাকুটা গ্রামের অজন্ত কুমার ভদ্রর জবানবন্দি গ্রহণের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি। কিন্তু তিনি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বৈধ পথে ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি ভারত যান। সেখান থেকে দেশে ফেরেন ৮ ফেব্রুয়ারি।

নবীনগরের শিবপুর ইউনিয়নের বাঘাউড়া গ্রামে ২০১৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে আল আমিন নামে একজন খুন হন। তার বাবা কসবার খাড়েরা ইউনিয়নের সোনারগাঁও গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং দুই থেকে তিন জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে মামলা করেন।

প্রথমে সিআইডি এবং এরপর গোয়েন্দা পুলিশ এই মামলার তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। দুটি সংস্থার তদন্তেই প্রকাশ পায় আবদুল হান্নান ভূঁইয়ার সাথে আল আমিনের ভগ্নিপতি জাকির হোসেনের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। আর হান্নানকে শায়েস্তা করতে নিজের শ্যালককে হত্যা করে জাকির হোসেন।

দুটি সংস্থার অভিযোগপত্রে বলা হয় ঘটনার আগের দিন ২০১৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি আল আমিনের নানি শাশুড়ির বাড়িতে দাওয়াত খেতে যান ভগ্নিপতি জাকির, সহযোগী শাওন, বিল্লাল ও মোবারক। খাওয়ার পর আল আমিনের স্ত্রীকে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত খাবার দিয়ে পাশের বাড়িতে নাছির ফকিরের মাহফিলে চলে যান জাকির। সেখান থেকে ফেরার পথে আল আমিনকে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহ গ্রামের একজনের বাড়িতে ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
সিআইডি এবং গোয়েন্দা পুলিশ জাকির হোসেন, তার সহযোগী বিল্লাল, শাওন ওরফে রানা, মোবারক মিয়া এ ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগপত্র দেয়।

তবে তৃতীয় দফা তদন্তে পিবিআই এই চার জনকে নির্দোষ বলে উল্লেখ করে। সিআইডির তদন্তে জড়িতদের স্বাক্ষী বানিয়ে অভিযোগপত্র দেয় পিবিআই।

পিবিআই কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ খানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন আবদুল হান্নান ভূইয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইনস্পেক্টর হারুন অর রশীদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি মামলার তদন্ত করে অভিযোগপত্র দিয়েছি। আমার যদি কোন ভুল ত্রুটি থাকে তাহলে আদালত সেটা দেখবে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ (ঘুষ চাওয়া) তোলা হয়েছে তা মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন।’

ঢাকাটাইমস/০৮সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি