নৌকা বেয়ে, দুই ঘন্টা জঙ্গলপথে হেঁটে স্কুলে যান শিক্ষিকা

প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:২৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমে স্কুটি। তারপর বাহন জমা রেখে নদীতে একা একা নৌকা বেয়ে যাওয়ার পর বিপদসঙ্কুল পাহাড়ি জঙ্গলপথে দু’ঘণ্টা হেঁটে অবশেষে দেখা পান ১৪ জন ছোট্ট শিক্ষার্থীর। যাদের পড়াতে রোজ এই যাত্রাপথ পাড়ি দেন ভারতের কেরালা রাজ্যের শিক্ষিকা কে আর ঊষাকুমারী।

গত কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে এটাই প্রাত্যহিক কাজ এই শিক্ষিকার। একদিনের জন্যেও কর্মক্ষেত্রে পৌঁছতে দেরি হয় না তার। প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে বাড়ি না ফিরে থেকে যান কোনো শিক্ষার্থীর বাড়িতে। যাতে পরের দিন অনুপস্থিত না হতে হয়। খবর আনন্দবাজারের।

তিরুঅনন্তপুরম জেলার অমবুরি গ্রামের বাসিন্দা এই শিক্ষিকা প্রতি সকালে সাড়ে ৭টা নাগাদ বাড়ি থেকে বার হন। স্কুটিতে পৌঁছান কুম্বিক্কল কাদাভু অবধি। এরপর নদীতে নৌকা বেয়ে তিনি পৌঁছন ‘অগস্ত্যবনম’ বনাঞ্চলের কাছে।

এবার শুরু হয় ঊষাকুমারীর জঙ্গল-পাড়ি। একটি মাত্র লাঠি সম্বল করে তিনি দু’ঘণ্টা ধরে ঘন অরণ্যের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যান পাহাড়ি পথে। কুন্নাথুমালার ওই স্কুলে কান্নি উপজাতির পড়ুয়াদের জন্য ঊষাকুমারীই একমাত্র শিক্ষিকা। তিনিই তাদের যত্ন করে পড়ান গণিত, বিজ্ঞান ও ভাষা। শুধু পড়ানোই নয়। নিজের হাতে পরিবেশন করেন  দুপুরের খাবার। বেতনের টাকা থেকে ব্যবস্থা করেন দুধ ও ডিমের।

নিজের বেতন কোনো কারণে অনিয়মিত হলেও ছাত্র ছাত্রীদের দুপুরের খাবারে দুধ ও ডিমের যোগান বন্ধ হতে দেননি তিনি। একান্তই তিনি না আসতে পারলে ব্যবস্থা করেছেন একজন কেয়ারটেকারের। ক্লাস না হলেও যাতে বন্ধ না হয় শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার খাওয়া।

ঊষাকুমারীর শুরুর যাত্রাপথ ছিল আরও কঠিন। তিনি যখন প্রথম চাকরি শুরু করেছিলেন, ছিল না কোনো স্কুলের বিল্ডিং। গাছতলায় বড় পাথরখণ্ডে বসে পড়াতেন তিনি। পরে তৈরি হয় স্কুলের বাড়ি।

এমন কাজের জন্য ঊষাকুমারী বহু স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার মধ্যে আছে কেরালা অ্যাসোসিয়েশন ফর ননফরমাল এডুকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর ‘সাক্ষরতা পুরস্কারম’। এই শিক্ষিকা জানিয়েছেন, তার কাছে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার হবে, যখন পরবর্তী সময়ে তার স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা আরও বেশি হারে নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। সেখানেই তার কৃচ্ছ্রসাধনের সার্থকতা।

ঢাকা টাইমস/০৯সেপ্টেম্বর/একে