এই মাঠে

ক্রিকেটে বল টু বল ধারাভাষ্য শুনতে চাই

প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৪:৪৬

লিয়াকত আলী ভূঁইয়া

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্ট ম্যাচ শুরু হয়েছে চট্টগ্রামে। টেলিভিশনের পাশাপাশি রেডিওতেও চলছে ধারাভাষ্য। টিভিতে তো নিয়মিতই খেলা দেখি। তবে কেন যেন রেডিওতে আরও বেশি ভালো লাগে ধারাভাষ্য শুনতে। বলতে পারেন আমি রেডিও ধারাভাষ্যের একজন ভক্ত। কিন্তু রেডিওতে যে মানের ধারাভাষ্য হচ্ছে তাতে আমি খুশি নই, বরং হতাশ। এখন শ্রোতাদের চাহিদার কথা মাথায় আনা হচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। রেডিওর ধারাভাষ্য হতে হবে বল টু বল। কিন্তু ইদানীং বল টু বল ধারাভাষ্য না হয়ে হচ্ছে গালগল্প। হ্যাঁ, পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু ওভার চলার সময় শ্রোতারা প্রতিটি বল সম্বন্ধে জানতে চায়। অথচ এই দিকটা খেয়াল রাখছেন না ধারাভাষ্যকাররা। পরিসংখ্যান তুলে ধরার সময় তো পরেও পাওয়া যায়। যেমন বিরতির সময়। খেলা চলার সময় বল টু বল বিবরণীই শ্রোতাদের কাছে সবচেয়ে কাম্য। কিন্তু ইদানীং সেটা হচ্ছে না। ফলে রেডিওর ধারাভাষ্য এখন অনেকটাই মান হারিয়েছে। 

টেলিভিশন ও রেডিওর ধারাভাষ্য নিশ্চয়ই একরকম হবে না। কারণ টিভিতে তো খেলা স্বচক্ষে দেখা যাচ্ছে। সেখানে বল টু বল ধারা বিবরণী দেওয়ার কিছু নেই। কিন্তু রেডিওর ব্যাপারটা সম্পূর্ণ উল্টো। এখানে দর্শক নয়, শ্রোতা। এখানে প্রতিটি বলের বিশ্লেষণ করে শ্রোতাদের কাছে  তুলে ধরতে হবে। কিন্তু এই কাজটিই করতে পারছেন না আমাদের রেডিও ধারাভাষ্যকাররা। বল টু বল না বলে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় এসে যাচ্ছে ধারাভাষ্যে।

অথচ রেডিওতে ধারাভাষ্য শোনার তুলনা চলে না। এক সময় যখন টিভিতে খেলা লাইভ হতো না, তখন আমরা সবাই রেডিওতেই ভারাভাষ্য শুনতাম। রেডিওতে ধারাভাষ্য হলো একটা ঐতিহ্য। টিভিতে তো আপনি খেলাটাই সরাসরি দেখছেন। সেখানে ধারাভাষ্যের খুব বেশি মজা নেই। ধারাভাষ্যের আসল মজা হলো রেডিওতে। 

রেডিওর ধারাভাষ্যে প্রচুর শ্রোতাও। টিভির চেয়ে অনেক বেশি। গাড়িতে, বাসে, ট্রেনে, হোটেলে, লঞ্চে মাঠেঘাটেÑ রেডিওতে যেখানে ইচ্ছা সেখান থেকে ধারা বিবরণী শোনা যায়। তাই এই চরম ডিজিটাল যুগেও রেডিওর ধারাভাষ্যের কদর এতটুকু কমে যায়নি। এখনো কোটি কোটি খেলাপাগল মানুষ ধারা বিবরণী শুনে থাকেন এই মাধ্যমে।

বাংলাদেশে এক সময় দারুণ জমজমাট ছিল রেডিও ধারা বিবরণী। তখন মানসম্পন্ন ধারাভাষ্য হতো। কিন্তু এখন আর সেই মান নেই। ষাট, সত্তরের দশকে রেডিওতে ক্রিকেট খেলার ধারা বিবরণী প্রচার করা হতো, আর আমরা তা বিভোর হয়ে শুনতাম। এই ধারা বিবরণী এতই হৃদয়গ্রাহী ছিল যে, মনে হতো আমরা যেন স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখছি এবং খেলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করছি। পাকিস্তানের ওমর কোরায়শীর কথা কোনো দিনই ভোলার নয়। তিনি ধারা বিবরণী দিতেন ইংরেজিতে, যা কানে এখনো বাজে। তিনি ছিলেন যেমনই বাকপটু, তেমনি হাস্যরস দিয়ে শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখতেন। পশ্চিমবঙ্গের কমল দাসের কথা মনে পড়ে। বাংলায় তার ধারা বিবরণী হৃদয় ছুঁয়ে যেত। ষাটের দশকে ইংরেজিতে মাঝেমধ্যে ধারা বিবরণী দিতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ড. আবদুল মোমিন চৌধুরী। বাংলাতে ধারা বিবরণী দিতেন আবদুল হামিদ ও মো. শাহজাহান। আবদুল হামিদ একজন অভিজ্ঞ ক্রীড়া সাংবাদিক, সংগঠক, ধারাভাষ্যকার এবং দীর্ঘদিন ক্রীড়াঙ্গনে তার বিচরণ ছিল। খোদাবক্স মৃধার কথা বলতে হয়। তার ধারা বিবরণীর ভাষা, শব্দ চয়ন ও কণ্ঠস্বর ছিল এককথায় চমৎকার। মনজুর হাসান মিন্টুর কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। রাজশাহীর বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক জাফর ইমামও মাঝেমধ্যে ধারা বিবরণী দিতেন। আতাউল হক মল্লিকও ছিলেন সুকণ্ঠের অধিকারী। প্রখ্যাত সাংবাদিক ও ক্রীড়া ভাষ্যকার তৌফিক আজিজ খানের ধারাভাষ্য এখনো কানে বাজে।

এখন অনেক তরুণ ধারাভাষ্যে এসেছেন। তারা অনেক ভালো করছেন। তবে হামিদ ভাইদের মধ্যে যে সাবলীলতা ছিল সেটার বেশ অভাব মনে হচ্ছে। চৌধুরী জাফরুল্লাহ সারাফাত, আলফাজউদ্দিন এবং ইংরেজিতে শামীম আশরাফ চৌধুরী, আতাহার আলী ধারাভাষ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। 
তবে আগের দিনে সেই জমজমাট ধারাভাষ্য এখনো মিস করি। রেডিওর সেই ধারা বিবরণী এখনো আমাকে ডাকে।

লিয়াকত আলী ভূঁইয়া: সহ-সভাপতি, রিহ্যাব