রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

চীনের মধ্যস্থতায় ফের মিয়ানমারের সঙ্গে বসছে বাংলাদেশ

প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:৫০ | আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:৫২

নজরুল ইসলাম
ফাইল ছবি

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে মিয়ানমারের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী চীনের মধ্যস্থতায় ফের বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের সাইড লাইনে বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার সূচি নির্ধারিত হয়েছে।

এর আগে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একাধিক চুক্তি করেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে না পারার পর নতুন উদ্যোগে সফলতার আশা করছে ঢাকা।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার চীনের ওপর আস্থা রাখছে। ফলে আয়োজক চীনের পছন্দের জায়গায় বসছে ত্রিপক্ষীয় এই বৈঠক। এরই মধ্যে বৈঠকের জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, মিয়ানমারের মন্ত্রী থিন মোয়ে জাতিসংঘে যাচ্ছেন এটা প্রায় নিশ্চিত।

চলতি মাসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অধিবেশনে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে বাংলাদেশের শতাধিক সরকারি প্রতিনিধি সেখানে অংশ নেবেন। ওই দলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিব ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা রয়েছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জৈষ্ঠ্য কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যাকে জোরালোভাবে তুলে ধরবে। অধিবেশন ছাড়াও সাইড লাইনেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কয়েকটি সেমিনার হবে। বাংলাদেশ এগুলোতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার পাশাপাশি এ সমস্যার নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরবে।’

চীনের মধ্যস্থতায় গত ২২ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়। মিয়ানমার রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেনি বলে একজনকেও ফেরত পাঠানো যায়নি। এরপরই বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে নতুন করে বৈঠকের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রত্যাবাসন শুরু না করতে পারায় চীন এটাকে ‘দুঃখজনক’ বলেও উল্লেখ করেছে।

যদিও বেইজিং চেয়েছিল ঢাকা যেখানে বৈঠক করতে রাজি হবে সেখানেই হবে ত্রিপক্ষীয় এই বৈঠক। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে উদগ্রীব ঢাকা। তাই প্রত্যাবাসনের জট খুলতে যেকোনো জায়গায় বৈঠকে বসতে রাজি ঢাকা।

ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত রাষ্ট্রদূত লি জিমিং জানিয়েছেন, তার দেশও চায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাক। আর এ ক্ষেত্রে তারা ‘গঠনমূলক ভূমিকা’ রাখবেন।

চীনের মধ্যস্থতায় প্রত্যাবাসন চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর এই বৈঠক বাংলাদেশের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে কি না জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. জমির ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে প্রত্যাবাসন নিয়ে কী আলোচনা বা প্রস্তাব আসে সেটা জানা ছাড়া কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’

যে রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের বিতারণ করা হয়েছে, সেই রাখাইনে চীনের বিপুল বিনিয়োগের তথ্য এসেছে গণমাধ্যমে। আর দেশটির বর্তমান অবস্থানের কারণে প্রত্যাবাসন শুরু নিয়ে নানা সংশয় দেখা দিয়েছে, যদিও চীন বাংলাদেশকে একাধিকবার আশ্বাস দিয়েছে।

প্রত্যাবাসন শুরু করতে বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা চালায়। গত ১ থেকে ৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় দেশটির সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সহায়তার আশ্বাসও মেলে।

রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফেরানোর পরিবেশ তৈরিতে চীন মিয়ানমারকে রাজি করানোর পদক্ষেপ নেবে বলে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং।

ওই সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পর্কিত মিনিস্টার সান তাও তাদের দলের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার আশ্বাসও দেন। পরে চীনের প্রসিডেন্ট শি চিন পিংও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দ্রুত রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে গুরুত্ব দেন।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন সহিংসতা ও নিপীড়নের শিকার হয়ে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

২০১৮ সালের জানুয়ারি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়। একই বছরের ৬ জুন নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী গত বছরের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে আবারও হামলার মুখে পড়ার আশঙ্কায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে অস্বীকৃতি জানানোয় ব্যর্থ হয় ওই উদ্যোগ।

সর্বশেষ চলতি বছরের জুলাই মাসে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে নতুন করে উদ্যোগের অংশ হিসেবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল। ১৫ সদস্যের দলটি দুই দিন ধরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা ও বৈঠক করে। এসব বৈঠকে রোহিঙ্গাদের তরফে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব ও চলাফেরায় স্বাধীনতার দাবি তুলে ধরা হয়।

গত ২২ আগস্ট দ্বিতীয় দফা প্রত্যাবাসন শুরুর দিনক্ষণ ঠিক হলেও রোহিঙ্গাদের সেই পুরনো অনাগ্রহে দ্বিতীয় দফায়ও ভেস্তে গেল প্রত্যাবাসন। এবার প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার থেকে তিন হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গার নামের তালিকা বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া হয়েছিল।

(ঢাকাটাইমস/০৯সেপ্টেম্বর/এনআই/জেবি)