ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও নৈতিকতার শিক্ষা দেয় আশুরা

ইসলাম ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:১৯

আরবি চান্দ্রবর্ষ তথা হিজরি সালের মর্যাদাপূর্ণ মহররম মাসের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা ঐতিহাসিক ঘটনাবহুল ও ব্যাপক তাৎপর্যময় দিবস। এ দিন অন্যায়ের প্রতিবাদ ও ন্যায়ের আদর্শের জন্য আত্মত্যাগের মহিমান্বিত স্মৃতিবিজড়িত কারবালার শোকাবহ, মর্মস্পর্শী, হৃদয়বিদারক ও বিষাদময় ঘটনা সংঘটিত হয়।

৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ/৬১ হিজরি সালে ১০ মহররম আশুরার দিনে ইরাকের কুফা নগরের অদূরে ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালা প্রান্তরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন বিন আলী (রা.) বিশ্বাসঘাতক অত্যাচারী শাসক ইয়াজিদের নিষ্ঠুর সেনাবাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ ও পরিবেষ্টিত হয়ে পরিবার-পরিজন এবং ৭২ জন সঙ্গীসহ নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন।

বয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক তৃষ্ণার্ত নারী-পুরুষ, শিশু সদস্য একবিন্দু পানি থেকে বঞ্চিত হয়ে নিদারুণ অমানবিক অবস্থায় কারবালার অন্যায়-অসম যুদ্ধে এবং শিশুপুত্র তাঁর কোলেই শত্রুর নিক্ষিপ্ত বিষাক্ত তিরের আঘাতে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ বিসর্জন দেন। আহত অবস্থায় হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) একাকী শত্রুবাহিনীর ওপর বীর বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং অসীম সাহসিকতার সঙ্গে খণ্ড যুদ্ধ করে শহীদ হন।

সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য ইমাম হোসাইনের সর্বোচ্চ ত্যাগ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। কারবালার ঘটনা থেকে মানবগোষ্ঠীর জন্য যেসব শিক্ষা রয়েছে, তন্মধ্যে প্রধান হচ্ছে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তবু ক্ষমতার লোভে ন্যায়নীতির প্রশ্নে আপস করেননি। খিলাফতকে রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রে রূপান্তরে ইয়াজিদের বলপ্রয়োগে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের চক্রান্তের প্রতি আনুগত্য স্বীকার না করে তিনি প্রত্যক্ষ সংগ্রামে লিপ্ত হন। বিশ্ববাসীর কাছে তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ন্যায়ের পক্ষে প্রতিরোধ সংগ্রামের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। কারবালা প্রান্তরে সত্য ও ন্যায়কে চির উন্নত ও সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য তিনি সর্বোচ্চ ত্যাগের অতুলনীয় আদর্শ স্থাপন করেছেন।

আধিপত্যবাদ, অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাঁর সুমহান আদর্শের জন্য আত্মত্যাগের বেদনাবিধুর ও শোকবিহ্বল ঘটনার স্মরণে প্রধানত আশুরা পালিত হয়।

কারবালার ঘটনা ছাড়াও ইসলামের ইতিহাসে মহররম মাসটি বিশেষ তাৎপর্যমণ্ডিত। আকাশ-জমিন সৃষ্টিসহ অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা এ মাসের ১০ তারিখে অর্থাৎ আশুরার দিনেই সংঘটিত হয়েছিল। পৃথিবীতে অনেক স্মরণীয় ও যুগান্তকারী ঘটনা এ দিন ঘটেছিল। মহররম সংগ্রামী শিক্ষার এবং আত্মসচেতনতার মাস। মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী চেতনা খুঁজে পাওয়ার মাস।

মহররম আসে দায়িত্ব পালনে সাহসিকতার পথপ্রদর্শক হিসেবে। আসে নির্ভীকভাবে পথ চলার কল্যাণময় শুভ বার্তা নিয়ে। মহররম আসে পুরনো বছরের জরাজীর্ণতাকে ধুয়ে মুছে নতুন সাজে সজ্জিত করতে। এ মাস আসে আমাদের নতুন শপথ ও প্রত্যয় গ্রহণের অঙ্গীকার নিয়ে। মহররম মাস এলে মুসলিম বিশ্বে জেগে ওঠে ইসলামী সংস্কৃতি।

ইমাম হোসাইন শাহাদাতবরণের ঘটনা ছাড়াও এই মাসে বহু উল্লেখযোগ্য ও ইতিহাসপ্রসিদ্ধ ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় বিভিন্ন দিক দিয়ে এ গুরুত্ব অপরিসীম। মহররমের দশম দিবসে অর্থাৎ আশুরার দিনে সংঘটিত ঐতিহাসিক ঘটনাবলির মধ্যে- (১) পৃথিবীর সৃষ্টি ও ধ্বংস (২) প্রথম মানব হজরত আদম আ:-কে সৃষ্টি করা এবং একই দিনে তাঁর জান্নাতে প্রবেশ (৩) হজরত আদম আ:-কে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় প্রেরণ এবং গুনাহ মার্জনার পর তার সাথে বিবি হাওয়াকে আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমতে পুনঃসাক্ষাৎ লাভ (৪) ১৮ বছর রোগ ভোগের পর হজরত আইউব আ:-কে সুস্থতাদান (৫) হজরত ইদ্রিস আ:-কে আকাশে উত্তোলন (৬) হজরত নূহ আ:-কে তুফান ও প্লাবন থেকে পরিত্রাণ প্রদান (৭) হজরত ইব্রাহিম আ:-কে অগ্নিকুণ্ড থেকে নিষ্কৃতি দেয়া (৮) হজরত দাউদ আ:-কে বিশেষ ক্ষমা প্রদান (৯) হজরত সোলায়মান আ:-কে হারানো বাদশাহী ফিরিয়ে দেয়া (১০) হজরত ইউনূস আ:-কে ৪০ দিন পর মাছের উদর থেকে উদ্ধার (১১) হজরত ইয়াকুব আ: কর্তৃক হারানো পুত্র হজরত ইউসুফ আ:-এর সাথে সাক্ষাৎ লাভ (১২) হজরত মুসা আ:-এর ফিরাউনের কবল থেকে মুক্তি লাভ (১৩) হজরত ঈসা আ:-কে জীবিতাবস্থায় আকাশে উত্তোলন (১৪) সর্বশ্রেষ্ঠ ও প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সা: মক্কা শরিফ থেকে হিজরত করে মদিনা শরিফে আগমন (১৫) হজরত ইমাম হুসাইন রা: এবং তার ৭৭ ঘনিষ্ঠজন স্বৈরশাসক ইয়াজিদের সৈন্য কর্তৃক কারবালা প্রান্তরে নির্মমভাবে শহাদতবরণ প্রভৃতি প্রণিধানযোগ্য।

মহররম মাসেই ফেরেশতাদের দিয়ে প্রথম সৃষ্ট মুসলমানদের পুণ্যভূমি কাবাগৃহ তৈরি করা হয়। এ দিনেই তুর পাহাড়ের পাদদেশে হজরত মুসা আ:-এর আল্লাহ পাকের সাথে কথা বলার সৌভাগ্য অর্জন এবং মুসা আ: নবুওয়াত ও তাওরাত কিতাব লাভ করেছিলেন।

ইসলামের ইতিহাসের তাৎপর্যপূর্ণ এই মাসে কারবালায় শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা এবং ইবাদত বন্দেগি করে থাকেন মুসলমানরা।

হজরত মুহাম্মদ সা: ইরশাদ করেছেন, মহররম মাসের আশুরার দিনে রোজা রাখলে আগের এক বছরের গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দেন। এ মাসে হজরত রাসূল্লাহ সা:-এর প্রতি অধিকসংখ্যক দরুদ ও সালাম পেশ, নফল নামাজ আদায়, কুরআন মজিদ তিলাওয়াত, আশুরার দিনে এবং অন্য দিনেও রোজা পালন, হাদিস শরিফ অধ্যয়ন, দান-সাদকাহ প্রভৃতির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য- বিশেষভাবে ইসলামের কল্যাণে জীবনকে নিবেদিত করা উচিত। আশুরার রজনী এক মহিমান্বিত, সম্মানিত, বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত, পুণ্যময়, বরকতময় ও মহাপবিত্র রাত্রি। এ রজনীতে উম্মতে মুহাম্মদির মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি করা হয়।

ঢাকাটাইমস/১০সেপ্টেম্বর/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :