এপির প্রতিবেদনে কাশ্মীরে নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:৫০ | আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৯:৫৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের নাগরিকদের পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠেছে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এক প্রতিবেদনে এই দাবি করেছে।

গত ১০ আগস্ট কাশ্মীরের নাগরিক বশির আহমেদ দার এর বাড়িতে সৈন্যরা আসে। তার ছোট ভাই কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। তিনি অভিযোগ করেন, সৈন্যরা দুই দফায় তাকে নির্যাতন করেছে। প্রথম দফায় ছোট ভাই যেন আত্মসমর্পণ করে এ কারণে তাকে আটক করেন। দ্বিতীয় দফায় তাকে একটি সামরিক ক্যাম্পে নির্যাতন করা হয়। সম্পূর্ণ অসচেতন না হওয়া পর্যন্ত সৈন্যরা তাকে বেত্রাঘাত করে। বাড়িতে তিনি চেতনা ফিরে পান। বেত্রাঘাতে তার পশ্চাৎদেশ থেঁতলে যাওয়ায় চেয়ারে বসতে পারেননি।

কিন্তু নির্যাতনের এখানেই শেষ হয়নি। ১৪ আগস্ট সৈন্যরা পুনরায় তার বাড়িতে আসে। পরিবারের সদস্যদের জন্য রাখা চাল ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী কেরোসিন ও সার দিয়ে নষ্ট করে দেয়।

এপি গণমাধ্যমের কাছে ৫০ জনের বেশি নির্যাতনের অভিযোগ করেছে। তারা জানায়, সৈন্যরা তাদেরকে বেদম বেত্রাঘাত, ইলেকট্রিক শক, নোংড়া খাবার ও পানি পান, গবাদি পশু হত্যাসহ নারীদের জোর করে বিয়ে করার হুমকি দেয়। হাজারের বেশি তরুণকে সৈন্যরা গ্রেপ্তার করেছে।

কাশ্মীরের পরিগ্রাম গ্রামের এক রুটিওয়ালা সোনাওল্লাহ সুফি বলেন, যখন তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন সৈন্যরা তার বাড়িতে আসে। তার দুই ছেলেকে রাস্তার মাঝখানে নিয়ে তারা বেদম প্রহার করে। গানবুট, লোহার শিকল ও লাঠি দিয়ে মারতে থাকে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘নিষ্ঠুর নির্যাতনের কারণে ছেলেদের চিৎকার শুনছিলাম। কিন্তু আমি অসহায় ছিলাম।’

সুফির বিশ বছরের এক ছেলে মোজাফফর আহমেদ বলেন, সৈন্যরা টানা তিন ঘন্টা পশ্চাৎদেশ ও পায়ে আঘাত করে। তারা আমাদেরকে ইলেকট্রিক শক দেয়।

এপির প্রতিবেদকে মোজাফফর তার জামা খুলে শরীরের পেছনে আঘাতের চিহ্ন দেখায়।

পুলিশ ও অন্যান্য রেকর্ড পর্যালোচনা করে অন্তত তিন হাজার মানুষ বিশেষত তরুণদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে এপির প্রতিবেদক খুঁজে পান।

রেকর্ড থেকে জানা যায়, দু’শ মানুষকে ‘পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট’ এ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ আইনে যেকোনো ব্যক্তিকে বিচার ছাড়াই অন্তত দুই বছরের জন্য কারাগারে আটক রাখা যায়।

তবে সেনাবাহিনীর জম্মু ও কাশ্মীরের হেডকোয়ার্টার এর শ্রীনগর এলাকার মুখপাত্র কর্নেল রাজেশ কালিয়া এপির কাছে গ্রামবাসীর অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দেন। ভারতের সেনাবাহিনীর সদস্যরা মানবাধিকার এর প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল বলে তিনি দাবি করেন।

ভারতের উচ্চ পর্যায়ের গোয়েন্দা কর্মকর্তা অজিত ডোবাল বলেন, কাশ্মীরে কোনো অপারেশনের সঙ্গে সেনাবাহিনী জড়িত না। এই ধরনের কোনো নিষ্ঠুর নির্যাতনের বিষয়ে তাদের কাছে কোনো অভিযোগ নেই।

গত ৩ আগস্ট ভারতের সংবিধান থেকে কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’ বাতিল করা হয়। তারপর কাশ্মীরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সামরিক অঞ্চল হিসেবে কাশ্মীর বিবেচিত। এর আগে বিবিসির এক প্রতিবেদনেও কাশ্মীরে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে আসে।

(ঢাকাটাইমস/১০সেপ্টেম্বর/আরআর/জেবি)