যাত্রী ওঠা ঠেকাতে ট্রেনের ছাদে লোহার করাত!

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:৫২ | প্রকাশিত : ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:৪৯

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ট্রেনের ছাদে চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। কোথাও কোথাও ছাদে ওঠা যাত্রীদের জেল-জরিমানাও করা হচ্ছে। তবুও ঠেকানো যাচ্ছে না ট্রেনের ছাদে চড়া।

এবার ছাদে যাত্রী ঠেকাতে রেল বিভাগ নতুন পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে। যে গেট দিয়ে যাত্রী ওঠানামা করে সেখানে লাগানো হচ্ছে লোহার করাত। কর্তৃপক্ষ মনে করছে, এর দ্বারা ছাদে ওঠায় যাত্রীরা নিরুৎসাহিত হবে।

আগস্টের শেষ দিকে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ট্রেনের ছাদে উঠে ভ্রমণ করলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে ঝুঁকি নিয়ে কোনো ব্যক্তি ট্রেনে ভ্রমণ করলে তার এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

সাজা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ১২৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী ‘যদি কোনো ব্যক্তি বিপজ্জনক বা বেপরোয়া কার্যের দ্বারা অথবা অবহেলা করে কোনো যাত্রীর জীবন বিপন্ন করেন, তবে তার এক বছর পর্যন্ত কারাদ- অথবা জরিমানা কিংবা উভয় প্রকার দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।’

শুধু বিজ্ঞপ্তিই নয়, ছাদে ভ্রমণ ঠেকাতে বিশেষ টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, টাস্কফোর্সের অভিযানে থাকবে জিরো টলারেন্স নীতি।

রেলের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিমাঞ্চল) মো হারুনুর রশীদ জানান, রেলের পশ্চিমাঞ্চলে ১৫টি টাস্কফোর্স টিম গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটিতে রেলের কর্মকর্তা, নিরাপত্তাবাহিনী ও জিআরপি পুলিশদের সদস্য করা হয়েছে।

এই টাস্কফোর্স টিম ট্রেন ছাড়ার সময় প্লাটফর্মে অবস্থান নিয়ে ছাদে ভ্রমণ রোধে কাজ করছে। এছাড়া স্টেশনের ডিজিটাল ডিসপ্লেতে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রচার করা হচ্ছে।

এদিকে নিষিদ্ধ হওয়ার পরও ছাদে ভ্রমণ করায় দেশের বিভিন্ন স্থানে জরিমানা করা হয়েছে। দেয়া হয়েছে দণ্ডও।

পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলোতে। রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল বিভাগ এরকম ১২টি স্টেশন চিহ্নিত করেছে। স্টেশনগুলো হলো- জয়দেবপুর, বঙ্গবন্ধু পশ্চিম, ঈশ্বরদী, রাজশাহী, সান্তাহার পার্বতীপুর, লালমনিরাহাট, বোনারপাড়া, বগুড়া পঞ্চগড়, রংপুর ও দিনাজপুর। এসব স্টেশনে চলবে বিশেষ নজরদারি।

এদিকে ট্রেনের গেটে করাত কাঁটা লাগানোর ছবি পাবলিক সার্ভিস হেল্প গ্রুপ নামের একটি ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, দরজা বেয়ে ছাদে ওঠা বন্ধে প্রাথমিকভাবে লোহার কাঁটা ওয়ালা প্লেট লাগানো হচ্ছে পুরান চালু কোচে। ছাদে বিছানা বালিশের সুবিধা বন্ধে রেলের নানামুখি উদ্যোগকে স্বাগত।

এই কাঁটা তারের বেড়া সব ইন্টারসিটি এবং নন স্টপ ট্রেনে লাগানোর দাবি জানিয়ে পোস্টে বলা হয়, ছাদে ওঠা এবং স্ট্যান্ডিং যাত্রী নেয়ার সুবিধা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে না পারলে বিনা টিকেটে ভ্রমণের খায়েস কখনো বন্ধ হবে না।

এই পোস্টের নিচে অনেককে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মন্তব্যও করতে দেখা গেছে। কারো পরামর্শ এই পদ্ধতি নয়, বরং লোহার ফ্রেম তৈরি করা যেতে পারে। ট্রেন থেকে এক/দুই ফুট উপরে তা থাকবে। এসব বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কয়েক মাসব্যাপী প্রচারণা চালাতে হবে।

কমলাপুর ও বিমান বন্দরে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে স্বয়ংক্রিয় গেইট লাগিয়ে দিলেই সিংহভাগ বিনা টিকেটের যাত্রী কমে যাবে বলেও পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ।

রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান জানিয়েছেন, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণে আর একটুও ছাড় নয়। এজন্য রেলওয়ে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে।

এদিকে নতুন এই উদ্যোগের বিষয়ে কথা বলতে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পুরোনো ট্রেনগুলোতে এই করাত লাগানো শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে অন্যগুলোতেও লাগানো হতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/১০সেপ্টেম্বর/বিইউ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :