‘কিশোর গ্যাংয়ে’র অভয়ারণ্য নদীতীর

প্রকাশ | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:০৪ | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:৩১

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস

বিভিন্ন জেলা থেকে নৌপথে রাজধানীতে আসা মালবাহী জাহাজ হয়ে উঠেছে গ্যাং কালচারে বেড়ে ওঠা কিশোরদের আড্ডার জায়গা। সেখানে নদীতীরে আড্ডা, নতুন বন্ধু জোগাড়, মাদক সেবন, ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা সবই হয়। ছিনতাই করে এসে গা ঢাকা দেয়ার পছন্দের জায়গাও হয়ে উঠেছে বুড়িগঙ্গা-তুরাগ নদের তীরের স্টিমার ও জাহাজ।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, গ্যাং কালচারের জন্ম মহল্লা থেকে হলেও এদের সক্রিয়তা বাড়ে আড্ডায়। আর এই আড্ডার মাধ্যমেই তারা জড়িয়ে পড়ছে ছিনতাই এবং মাদকে।

সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় সামনে এসেছে কিশোর গ্যাংয়ের নানা তথ্য। এরই মধ্যে আটক হয়েছে বেশ কিছু গ্যাংয়ের বিপুল পরিমাণ সদস্য। আর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে গ্যাং কালচার পুরোপুরি নির্মূলের কথা।

গত দুই বছরে রাজধানীতে কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয়তা বেড়েছে। প্রাথমিক তথ্য বলছে, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা শতাধিক। 

রাজধানীর গাবতলী এলাকায় দেখা মিলেছে কিশোর গ্যাংয়ের অনেক সদস্যের। গাবতলী ইট-বালুর ঘাট এলাকায় এসব কিশোরের আনাগোনা নিয়মিত। প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে তারা এখানে জড়ো হতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নদীতীরে বাড়ে সদস্যের সংখ্যা। আর বিকাল হতেই শুরু হয় মাদকের আড্ডা।

স্থানীয় অনেকেই বিপদের শঙ্কায় এবিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তবে অনেকেই জানালেন এসব গ্যাং সদস্যের সক্রিয়তার কথা।

সাইদুল ইসলামের নামের এক শ্রমিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা শিপ থেকে মাল নামাই। বিকালের মধ্যে আমগো কাজ শেষ হয়। শিপ তো ঘাটেই থাকে। ঐসব পোলাপান আইসা শিপে ওঠে। গাঞ্জা খায়, মদ খায়, বাবা (ইয়াবা) খায়।’

একাধিক মানিব্যাগ, নারীদের ব্যাগ এবং অলঙ্কারসহ অনেকেই এসে জাহাজে ওঠে এবং তা ভাগ-বাটোয়ারা করে। এসময় তাদের সঙ্গে দেশীয় অস্ত্রও দেখা যায় বলে ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক।

দেশীয় অস্ত্র এবং কিশোর দলের বিপরীতে অবস্থান নিতে সাহস হয়ে ওঠে না জাহাজে কর্মরত শ্রমিকদের। কারণ নদীপথে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পণ্যবাহী এসব জাহাজ ঘাটে থাকে বেশ কয়েক দিন। সিমেন্ট, বালু, পাথর ও কয়লা বোঝাই জাহাজের শ্রমিকদের বসবাস জাহাজেই। স্থানীয় ছেলেদের সঙ্গে ঝামেলা করতে গেলে উল্টো নিজেরা বিপদে পড়তে পারেন এমন শঙ্কায় এসব কিশোরকে কেউ কিছু বলছে না বলে ঢাকাটাইমসকে জানান মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা জাহাজ শ্রমিক ফারুক।

স্থানীয়রা জানান, রাস্তা চিকন হওয়ার কারণে সেখানে পুলিশি টহল নিয়মিত নয়। বেড়িবাঁধ এলাকা দিয়ে পুলিশের নজরদারি নিয়মিত হলেও নদীর পাড়ে তাদের আনাগোনা কম। সেই সুযোগটাই নিচ্ছে এসব গ্যাং কালচারে অভ্যস্ত কিশোর।

সূত্র জানান, গাবতলী থেকে ঢাকা উদ্যান পর্যন্ত বেড়িবাঁধের দুই পাশেই রয়েছে বেশ কিছু গ্যাং। এরমধ্যে সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে আদাবর-১০, আদাবর-১৬, সুনিবিড় হাউজিং, তুরাগ হাউজিং এলাকার বেশ কিছু কিশোর। এদের অধিকাংশই মাদক এবং ছিনতাইয়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। সন্ধ্যার পর বেড়িবাঁধ সড়কের অন্ধকারকে কাজে লাগিয়ে তারা ছিনতাই করে। ছিনতাইয়ের পর তারা আশ্রয় নেয় নদীর বাঁধা জাহাজে।

এবিষয়ে দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। নিয়মিত সেখানে টহল টিম যাবে।’

(ঢাকাটাইমস/১০সেপ্টেম্বর/কারই/জেবি)