আসছে মেট্রোরেল
প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:২৫ | আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৫:২১
যানজটের রাজধানীতে দ্রুত যাতায়াতের স্বপ্ন পূরণের সারথী মেট্রোরেলের খুঁটির ওপর বসে যাচ্ছে রেলপাত বসানোর ভায়াডাক্ট। এরইমধ্যে উত্তরা থেকে মিরপুর অংশের প্রায় ছয় কিলোমিটারের বেশি জায়গায় কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ অংশের নির্মাণকাজের প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ। আর গোটা প্রকল্পের কাজে অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। যেভাবে কাজ এগোচ্ছে তাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চলাচল শুরু করতে পারবে রাজধানীবাসী।
সরেজমিন দেখা গেছে, পশ্চিম শেওড়াপাড়া থেকে আগারগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারে জায়াগায় পিলারের ওপর বসানো হয়েছে এই ভায়াডাক্ট। উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকেও মিরপুরের পথে বসে গেছে এগুলো। এর ওপরেই বসানো হবে রেলপাত। এগুলো এরইমধ্যে দেশে এসে পৌঁছেছে।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজের ৪৬ শতাংশ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। তবে পাইলিং, খুঁটি স্থাপনসহ জটিল কাজগুলো শেষ হয়ে যাওয়ায় বাকি কাজগুলো শেষ করতে বেশি সময় লাগবে না বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউরোপের তিনটি দেশ থেকে স্লিপার আনা হচ্ছে রেলপথে ব্যবহারের জন্য। ইংল্যান্ড থেকে এরই মধ্যে রেলপথ বসানোর রেলট্র্যাক আনা শেষ হয়েছে।
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রুট চালুর ঘোষণা ছিল। তবে তা পিছিয়ে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ এবং ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত কাজ শেষ করে ট্রেন চালুর ঘোষণা আছে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, আগস্ট মাস পর্যন্ত ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট(এমআরটি-৬) এর সার্বিক কাজের গড় অগ্রগতি ৩০ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম ধাপের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৪৬ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দি¦তীয় কাজের অগ্রগতি ২৩ শতাংশ। ইকুইপমেন্ট, মেকানিক্যাল সিস্টেম, রোলিং স্টক ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বতিত অগ্রগতি ১৯ শতাংশ। আর প্রায় ৫৯ একর জায়গাজুড়ে বানানো হচ্ছে মেট্রোরেলের মূল ডিপো। ট্রেনে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে করা হচ্ছে দুটি পাওয়ার প্ল্যান্টও।
মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘উত্তরা থেকে আগারগাঁও এর প্রথম অংশের কাজ প্রায় ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আর পুরো প্রকল্পের থেকে ২৫-৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’
২০১২ সালে এমআরটি-৬ বা মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিশেষ উদ্যোগে সংশোধিত পরিকল্পনা করা হয়। গত বছরের এপ্রিলে প্রথম স্প্যান বসানো হয় মেট্রোরেল প্রকল্পে। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে দুটি পিলারকে যুক্ত করে এই স্প্যান বসানো হয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা মাসট্রানজিট কম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল)। দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্প হিসেবে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এই রোটের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২০.১ কিলোমিটার। আর পুরো প্রকল্পের কাজটি হচ্ছে আটটি প্যাকেজ ও দুইটি ধাপে। প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় ধাপে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৮.৩৭ কিলোমিটার রুট তৈরি করা হবে।
ডিটিএমসিএল সূত্র থেকে থেকে জানা গেছে, মোট আটটি প্যাকেজে বাস্তবায়ন হচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজে ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। বিরতিতে ট্রেন রাখার স্থান, ট্রেন মেরামত ও মালামালের গুদাম, প্রধান ওয়ার্কশপসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণকাজের বাস্তব অগ্রগতি ১৭ শতাংশ।
প্যাকেজ দুইয়ের আওতায় পূর্ত কাজের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৫২ ভাগ। এই প্যাকেজর আওতায় ৫২ ভাগ অবকাঠামো নির্মান করতে হবে এর মধ্যে রিটেইনিং ওয়াল, টেস্ট ট্র্যাক বেড, কোচ আনলোডিং এরিয়া, বগি এসেম্বল প্লান্ট, ও বগি ডিস এসেম্বল সহ প্রায় দশটির মতো অবকাঠামো নির্মার শেষ হয়েছে। এ ছাড়া এই প্যাকেজ এর আওতায় বাকি অবকাঠামোর বেশিরভাগের কাজেই আছে অগ্রগতি।
উত্তরা নর্থ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার উড়ালপথ ও ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে প্যাকেজ ৩ ও ৪-এর আওতায়। এ কাজের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৫৫ ভাগ। ইতোমধ্যে চেক বোরিং, টেস্ট পাইল, মূল পাইল, ওআইগার্ডার নির্মান ইতিমোধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। মোট ৭৬৬ পাইল ক্যাপের মধ্যে ৭০১ টি পাইল ক্যাপ ও ৩৯৩টি পিয়ার হেডের মধ্যে ৩৪৮ নির্মার সম্পন্ন হয়েছে। ৫ হাজার ১৪৯টি প্রিকাস্ট সেগমেন্ট কাস্টিং এর মধ্যে ৩ হাজার ৯৪৯টি পিকাস্ট সেগমেন্ট কাস্টিংয়ের কাজ শেষ হযেছে। ভায়াডাক্ট নির্মান হয়েছে ৫.৮৬ কিলোমিটার।
প্যাকেজ ৫ এর আওতায় কারওয়ান বাজার থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৩.১৯ কিলোমিটার ভায়াডক্ট ও ৩টি স্টেশন নির্মান কাজের বাস্তব অগ্রগতি শতকরা ১৩. ২৪ শতাংশ। এই অংশের মূল পাইল নির্মানের জন্য ২১০টি টায়াল ট্রেঞ্চের মধ্যে ১৫৭ ট্রায়াল ট্রেঞ্চ এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৪৫২ টি স্থায়ী বোরড পাইলের মধ্যে ইতোমেধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ৩৫৫টি স্থায়ী বোরড পাইল। এই অংশে ১০৪ টি স্ক্রু পাইল ফাউন্ডেশনের মধ্যে ২৭ টির কাজ শেষ হয়েছে। আর পাইল ক্যাপ ১০৭ টির মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ৭টি।
প্যাকেজ ৬ এর আওতায় রয়েছে কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪.৯২২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৪টি স্টেশন নির্মান করা। এই অংশের চেকবোরিং ও টেস্ট পাইল নির্মার সম্পন্ন হয়েছে। মূল পাইল নির্মানের জন্য ২৯৮ টি টায়াল ট্রেঞ্চের মধ্যে ২৭৮ ট্রায়াল ট্রেঞ্চ এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৪৫২ টি স্থায়ী বোরড পাইলের মধ্যে ইতোমেধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ৩৫৫টি স্থায়ী বোরড পাইল। এই অংশে ১৩৮ টিি স্ক্রু পাইল ফাউন্ডেশনের মধ্যে ৭৬ টির কাজ শেষ হয়েছে। আর ২৯৮ টি পাইল ক্যাপের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ৩০টি।
ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল কাজ করা হচ্ছে প্যাকেজ ৭ এর আওতায়। ইলেকট্রিক্যাল সাপ্লাইয়েরে জন্য পাথমিক রোড সার্বে সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে টঙ্গী ও মানিকনগরে দুটি ইলেকট্রিক সাব স্টেশনও সম্পন্ন হয়েছে। এই অংশের কাজ বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ১৬.৫০ শতাংশ।
প্যাকেজ-৮ এর অধীনে রেলকোচ ও ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের বাস্তব অগ্রগতি ১৫.১০ শতাংশ। চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল জাপানে কোচ ও বগি নির্মানের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে। আগামী বছরের ১৫ জুনের মধ্যে প্রথম সেট ট্রেন কোচ বাংরাদেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এ ছাড়া রেলিং স্টোক (রেল কোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।