সাত ঘণ্টার আগুনে পুড়ল মিনিস্টার কারখানা

গাজীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২০:৩৮ | প্রকাশিত : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৪:৫৫

গাজীপুর মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকায় মাইওয়ান ইলেকট্রনিক্সের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এতে ওই কারখানার ৬ষ্ঠ তলায় রাখা বিপুল পরিমাণ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মালামাল পুড়ে গেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে সাত ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপ-পরিচালক মো. মামুনুর রশীদ জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ছয়তলা কারখানা ভবনের ষষ্ঠ তলার অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তে আগুন চারপাশে ব্যাপকতা লাভ করে এবং পরে তা পাশের আরেকটি ছয়তলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাজীপুর, টঙ্গী, উত্তরা, সদর দপ্তরসহ ১৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে।

ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (সদরদপ্তর) দিলীপ কুমার ঘোষ ঢাকাটাইমসকে জানান, আগুনের খবরে প্রথমে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস কাজ শুরু করে। পরবর্তী সময়ে আগুনের ব্যাপকতার কারণে সদরদপ্তরে সাহায্য চাওয়া হয়। ১৬টি ইউনিটের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বেলা ১২টা ৫৪ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

তবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি জানা সম্ভব হয়নি। কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

কারখানার এক নিরাপত্তা কর্মী জানান, সকালে কারখানার ৬ষ্ঠ তলার দক্ষিণ সাইডের দিক দিয়ে ধোঁয়া দেখতে পান। ধোঁয়ায় তার পোড়ানো গন্ধ ছিল। পরে তিনি অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীদের জড়ো করে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। তবে এসময় কারখানা বন্ধ ছিল বলে জানান তিনি।

কারখানার শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, রাতের পালায় কিছু শ্রমিকের কাজ করেন। সকাল থেকে কারখানা বন্ধ ছিল। কারখানায় ছোট আকারের আগুন লাগার পর বালতি দিয়ে প্রথমে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন তারা। পরে আগুন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসে টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও ৬ষ্ঠ তলার আগুন নেভানোর মতো পাইপ তাদের কাছে ছিল না। এছাড়া আশেপাশে পানি না থাকায় তারা ঠিকমত কাজ করতে পারেনি। ফলে আগুন নেভাতে দেরি হয়।

ওই কারখানায় অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না জানিয়ে ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সালেহ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, পাশের মার্কওয়্যার লিমিটেডের জলাশয় ও পানি ব্যবহার করে আমাদের কাজ চালাতে হয়েছে। কারখানার নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ভালো ছিল না।

কলকারাখানা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. মোতালিব মিয়া সাংবাদিকদের জানান, কারখানাটিতে নিয়মিত অগ্নিনির্বাপণ মহড়ার আয়োজন করা হতো না। ছয় তলার ওপরে গুদাম রাখারও নিয়ম নেই। কারখানায় ফায়ার অ্যালার্ম ও অগ্নিনির্বাপনের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ছিল না বলে ২০-২৫ দিন আগেও আমরা নোটিশ দিয়েছিলাম, কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনো জবাব দেয়নি।

মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক লিমিটেডের ডিজিএম (অ্যাকউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, কারখানায় দুই হাজারের মতো কর্মী বিভিন্ন বিভাগে কাজ করেন। তবে শুক্রবার কারখানা বন্ধ ছিল। কারখানাটিতে মূলত টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর সংযোজনের পাশাপাশি রাইস কুকার, ইস্ত্রিসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরি করা হয়। কারখানায় তৈরি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক হোম অ্যাপ্লান্স প্রোডাক্ট বিশেষত বিপুল পরিমাণ টেলিভিশন ষষ্ঠ তলায় মজুদ করে রাখা ছিল। তবে সেখানে কত টাকার পণ্যসামগ্রী ছিল, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি তিনি।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, সংরক্ষিত আসনের এমপি শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম এবং পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন।

মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কারখানায় ফায়ারিংয়ের জিনিসপত্র গোছানো থাকে। কিন্তু কারখানায় নিরাপত্তার শতভাগ এখানে ছিল না। নিয়ম হচ্ছে, কারখানার চারপাশে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘোরানোর মতো জায়গা থাকা। অগ্নিনির্বাপণের প্রাথমিক সরঞ্জামাদি থাকতে হবে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে আমরা এগুলো দেখতে পাচ্ছি না। আগুন নিভলে বাস্তব অবস্থাটা জানা যাবে।

জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, মিনিস্টার কারখানায় আগুনের কারণ খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহীনূর ইসলামকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটিতে গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধি, কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৩সেপ্টেম্বর/এমআর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :