ছাত্রলীগে শুদ্ধি অভিযান জরুরি

প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৫:৩৬ | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:২৯

আরিফুর রহমান দোলন

নানা ঘটন-অঘটনে বেশ কয়েক দিন ধরে সমালোচিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের অন্যতম ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। প্রশ্ন উঠেছে এর শীর্ষ নেতাদের কর্মকা- নিয়ে। কেন্দ্রীয়সহ বিভিন্ন কমিটিতে স্থান পেয়েছে বিতর্কিতরা। তারা সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এ নিয়ে সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও বিরক্ত।

মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের পাশে সহযোগীর মতো ছিল ছাত্রলীগ। বর্তমানে যারা দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আছেন, তাদেরও বেশির ভাগ একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন। ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্য দিয়েই রাজনীতিতে তাদের হাত পেকেছে। পরিচিতি পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এই সংগঠনটি মুক্তিযুদ্ধেও সরাসরি ভূমিকা রেখেছে। এর আগে ভাষা আন্দোলনেও ছিল এই সংগঠনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে ছাত্রলীগকে বইতে হচ্ছে নানা সমালোচনার বোঝা।

মূলধারার রাজনীতির জন্য যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির আঁতুড় ঘর বলা যায় ছাত্রলীগকে। সেখান থেকে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক নেতা তৈরি হবেন, যিনি হবেন দক্ষতা, নৈতিকতা ও সততার অনন্য দৃষ্টান্ত। তার আচার-আচরণেও থাকবে মানুষের কল্যাণের ভাবনা। তাদের দেখে শিখবে অন্য ছাত্ররা। একসময় এমনই ছিল। মেধাবীরা এই ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে আসতেন। সেই ধারাবাহিকতা যেন নষ্ট হয়ে গেছে। ছাত্রলীগের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বের অনেককে দেখে তা-ই মনে হয়।

অযাচিত অনেক কা-ে জড়িয়েছে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। এসব নিয়ে সংগঠনের ভেতরেই আছে চরম অসন্তোষ। ছাত্রলীগে অছাত্র ঢুকে পড়ার অভিযোগ বেশ পুরনো। তা থেকে উত্তরণে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচনে কয়েকটি শর্ত ও নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম বয়সসীমা, ছাত্রত্ব থাকা ও অবিবাহিত। এগুলো পূরণ করতে গিয়ে অনেকে জালিয়াতির আশ্রয় ও ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আর এতে বিব্রত হচ্ছেন অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগ ও এর নেতারা।

ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নানা কর্মকা-  নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবরও এসেছিল কোনো কোনো গণ্যমাধ্যমে। তার দুদিন পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সভাপতির গাড়িতে ওঠা নিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা একে-অন্যের ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করেছেন। তার পরদিন জানা গেলে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গণভবনে প্রবেশের স্থায়ী পাস বাতিল করা হয়েছে।

নিঃসন্দেহে এটি একটি গুরুতর বার্তা। একই সঙ্গে আমরা মনে করি, বর্তমানে ছাত্রলীগে যা হচ্ছে, তার সমাধান হওয়া জরুরি। সংগঠনটি নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, এটি দ্রুত সমাধান না হলে তৃণমূলেও এর প্রভাব পড়বে বলে আমরা আশঙ্কা করি।

সংগঠনের নেতাকর্মীদের এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, তারা মূলধারার রাজনৈতিক দল নয়, ছাত্রসংগঠন। তবে তাদের ও তাদের মতো বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের মধ্য থেকে আগামী দিনের জাতীয় নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবেন। তারাই নেতৃত্ব দেবেন দেশের ও সরকারের। তাই তাদের চালচলন, আচার-আচরণ হতে হবে মার্জিত ও অনুসরণীয়। ছাত্র ও শিক্ষাঙ্গনের কল্যাণের মধ্য দিয়ে সাধারণ ছাত্র ও মানুষকে আকৃষ্ট করতে হবে তাদের।

তাই তাদের অবশ্যই সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। আশা করি সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন। আর স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আসছে, সেগুলো তদন্ত করে কেন্দ্রীয়সহ অন্যান্য কমিটিতে শুদ্ধি অভিযান চালানো আশু কর্তব্য হয়ে পড়েছে।

সম্পাদক, দৈনিক ঢাকাটাইমস, সাপ্তাহিক এই সময় ও ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম