পুলিশি অভিযানের নাটক সাজিয়ে বিয়ের প্রস্তাব
সেইন্ট পিটার্সবার্গ বিমানবন্দরে বিমান থেকে নেমে প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আনাস্তাসিয়া। কিন্তু কিছুক্ষণ পর মোবাইল ফোনে একটি বার্তা এল। তার প্রেমিক জানালেন, গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজের জন্য বিমানবন্দরে যেতে পারছেন না তিনি।
তবে তার বদলে এক বন্ধু তাকে গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেবেন। আনাস্তাসিয়ার জন্য সবকিছু এই পর্যন্ত ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু গাড়ি যখন বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছল ঠিক তখন পথ রোধ করে দাঁড়ালো কালো কাঁচ লাগানো একটি গাড়ি। তা থেকে নামতে থাকলো মুখোশ পরা অস্ত্রধারী কয়েকজন। গাড়ি চালক বন্ধুটিকে টেনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। আনাস্তাসিয়ার সুটকেস খুলে পুরো উল্টে পাল্টে দেখতে শুরু করলেন অস্ত্রধারীরা।
তল্লাসিতে সুটকেস থেকে বের হল একটি মোড়ক ভর্তি সাদা এক ধরনের গুড়ো। কালো রঙের বিশেষ বাহিনীর মত পোশাক পরা লোকগুলোর মধ্যে থেকে একজন নারী তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনি নিষিদ্ধ দ্রব্য বহন করছেন বলে সন্দেহ করছি আমরা’। এই বাক্য শুনেই আনাস্তাসিয়ার মুখ রক্ত শূন্য হয়ে গেল। মুখে কাঁচুমাচু একরকম হাসি এনে তিনি বলার চেষ্টা করলেন, ‘আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। ওগুলো আমার নয়’।
পুরুষদের মধ্যে একজন চিৎকার করে ধমকে উঠলেন। ‘তাহলে এগুলো কার? অনেক নাটক হয়েছে’। হঠাৎ লোকটি আনাস্তাসিয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন। একটা গোলাপি রঙের ছোট বাক্স বের করলেন নিজের পকেট থেকে।
এক টান দিয়ে নিজের মুখোশ খুলে বলে উঠলেন ‘আমাকে বিয়ে করো’। সে আর কেউ নয় আনাস্তাসিয়ার প্রেমিক সের্গেই।
সের্গেই নিজে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। কিন্তু তার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা সবাই ‘এক্সট্রিম প্রপোজাল’ নামে একটি বিশেষ সেবা-দানকারী প্রতিষ্ঠানের সদস্য।
সম্প্রতি রাশিয়াতে রীতিমতো একটি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে যাদের কাজই হল অভিনেতা পাঠিয়ে, নাটক সাজিয়ে বিয়ের প্রস্তাবকে চমকপ্রদ করতে প্রেমিক-প্রেমিকাদের সাহায্য করা।
আর তাতে খরচ নানা রকম। এতে ৭০০ ডলার থেকে ৬০ হাজার রুবল ( এক হাজার টাকা থেকে ৬৩ হাজার টাকা) খরচ হতে পারে। এক্ষেত্রে সের্গেই এর খরচ পড়েছে ৩০ হাজার রুবল। তার ইচ্ছে ছিল সহকর্মীদের দিয়ে নাটকটি সাজাবেন।
কিন্তু তাতে অনুমোদন পাননি। এই বিশেষ বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা আরেক সের্গেই তবে পুরো নাম সের্গেই রডকিন। তিনি বলেন, ২০১০ সালের দিকে বন্ধুদের জন্য তিনি মজার ছলে এমন নাটক সাজাতেন। কিন্তু পরে সেটিই একটি কোম্পানি দাঁড়িয়ে গেলো চার বছর পর। এখন তারমত একই সেবা দিচ্ছে ১৩ টি প্রতিযোগী কোম্পানি।
যারা এসব প্রতিষ্ঠানের অভিনেতা হিসেবে কাজ করছেন তাদের মধ্যে সেনা ও পুলিশের জওয়ান রয়েছে। আর সেকারণে এই সাজানো মাদক বিরোধী অভিযানকে মারাত্মক বাস্তব মনে হয়।
নাটককে বাস্তবসম্মত করতে লোকজনকে হাতকড়া পরানো, মাটিতে ফেলে তল্লাসি, গাড়ির গায়ে ঠেসে ধরে রাখা এমন অনেক কিছুই তারা করেন। তারা মূলত খণ্ড-কালীন কর্মী কারণ স্থায়ীভাবে এই অভিনেতার কাজ করার জন্য এতটা চাহিদা তৈরি হয়নি।
সের্গেই রডকিন একটু আক্ষেপ করে বলেন, তার কাছে সেবা নিতে আসা প্রেমিক-প্রেমিকাদের কোন কল্পনাশক্তি নেই। তারা সবাই ওই একই নাটক চায়। আর হল মাদক বিরোধী অভিযান, গ্রেফতার নাটক ইত্যাদি।
কদিন আগে রাশিয়াতে ইভান গোলুনভ নামে একজন সাংবাদিক গ্রেফতার হয়েছিলেন। পুলিশের অভিযোগ ছিল তার কাছে মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে। কিন্তু তিনি বলেছিলেন পুলিশই সেগুলো রেখেছে। সেসময় যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।
মনোবিজ্ঞানী পলিনা সলদাতোভা বলছেন, ‘এই ধরনের বিয়ের প্রস্তাব এক ধরনের ইঙ্গিত দেয় যে দৈনন্দিন জীবনে রাশিয়ার পুলিশের ভূমিকা কেমন। কৌতুক দিয়ে মানুষ তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোর প্রতি প্রতিক্রিয়া জানায়। এসব তামাশা দিয়ে হয়ত নিজেদের জীবনের অবস্থাকে গ্রহণ করে সাধারণ মানুষজন যে রাশিয়ার পুলিশ আপনার জন্য যেকোনো সময় এসে পরতে পারে।’
আর ওদিকে আনাস্তাসিয়া বলছেন শুরুতে মারাত্মক একটা ধাক্কা খেয়েছিলেন তিনি। খুব ভয়ও পেয়েছিলেন। তবে এমন বিয়ের প্রস্তাবে তিনি সের্গেই এর উপর অনেকদিন রেগে ছিলেন তেমন নয়। তবে এমন প্রস্তাবের উল্টো ফলও হচ্ছে বৈকি।
পেনজা অঞ্চলের আলেকজান্ডার তার প্রেমিকা ক্ষেপে গিয়ে বলেছিলেন তিনি তাকে রীতিমতো একটা ‘হার্ট অ্যাটাক’ দিয়েছেন। রেজান এলাকার ইউলিয়া এমন বিস্ময়কর বিয়ের প্রস্তাবের পর তার হাতে তুলে দেয়া ফুলের তোড়া দিয়ে রীতিমতো পিটিয়েছিলেন প্রেমিকাকে। সূত্র: বিবিসি
ঢাকা টাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/একে