নবম ওয়েজবোর্ডের গেজেট প্রকাশ

৮৫ শতাংশ বেতন বাড়ল সংবাদপত্রে

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৯:৪৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে গঠিত নবম ওয়েজবোর্ডের গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতনভাতা আগের তুলনায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবারের গেজেটটি শনিবার প্রকাশ করা হয়। নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদের গেজেট নোটিফিকেশনের দিন থেকে তা কার্যকর হবে।

নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের মতো পাঁচটি শ্রেণিতে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থা বিন্যাস করেছে। অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের মতো শ্রেণিবিন্যাসে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার বার্ষিক গ্রস আয় ও প্রচার সংখ্যার ভিত্তি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড বার্ষিক গ্রস আয় ও প্রচার সংখ্যা ছাড়াও দৈনিক সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানে জনবল এবং দৈনিক পত্রিকার পৃষ্ঠার সংখ্যা ভিত্তি হিসেবে সংযোজন করেছে।

নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান গত বছরের ১ মার্চ থেকে নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের রোয়েদাদ ঘোষণা পর্যন্ত সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় নিয়োজিত সাংবাদিক, সাধারণ কর্মচারী ও প্রেস শ্রমিকদের মূল বেতনের ওপর ৪৫ শতাংশ হারে অন্তর্বর্তীকালীন মহার্ঘ ভাতা সুপারিশ করেছি, যা পরবর্তীতে নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদের সাথে অন্তর্ভুক্ত হবে বলে সুপারিশ করেছে বলে গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৫ সালে সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই নতুন বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছিল সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো। এ দাবিতে তারা বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছেন।

দীর্ঘদিন বিষয়টি ঝুলে থাকার পর আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে প্রধান করে গতবছর ২৯ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করা হয়। পরে নিউজপেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মতিউর রহমান গত বছরের মে মাসে একটি রিট আবেদন করেন।

এরপর গতবছর ১১ সেপ্টেম্বর সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করে সরকার, যা ২০১৮ সালের ১ মার্চ থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়।

বিচারপতি নিজামুল হক গত ৪ নভেম্বর তখনকার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করে তাদের প্রতিবেদন জমা দেন।

ওই প্রতিবেদন গত বছরের ৩ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হলে মন্ত্রিসভা তা পরীক্ষা করে সুপারিশ দিতে ওই সময়কর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি মন্ত্রিসভা কমিটি করে দেয়।

নতুন সরকার গঠনের পর গত ২১ জানুয়ারির মন্ত্রিসভা বৈঠকে আগের মন্ত্রিসভা কমিটি পুনর্গঠন করে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সাত সদস্যের মন্ত্রিসভা কমিটি করে সরকার।

গত ২৫ জুলাই ওই কমিটির এক বৈঠকের পর ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, নবম ওয়েজবার্ডের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই সুপারিশ এখন মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। মন্ত্রিসভার সম্মতি পেলেই তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। তবে মন্ত্রিসভা কমিটি গড়ে কত শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে- সে তথ্য সেদিন প্রকাশ করেননি ওবায়দুল কাদের।

গত ৫ আগস্ট নতুন বেতন কাঠামোর সুপারিশ চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব। পরদিন ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে নবম ওয়েজ বোর্ডের সুপারিশ বাস্তবায়নে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশে দুই মাসের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি রুলও জারি করা হয়। রুলে শ্রম আইনের ১২৮ বিধি অনুযায়ী অংশীজনের (মালিক) আপত্তি উত্থাপনের সুযোগ না দিয়ে একতরফাভাবে নবম ওয়েজ বোর্ডের চূড়ান্তকরণ এবং গেজেট জারির সুপারিশ করে তা সরকারের কছে পাঠানো কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়।

পরে হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে তথ্যসচিব, শ্রমসচিব, নবম ওয়েজবোর্ডের চেয়ারম্যান, মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়কের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্নিষ্ট শাখায় ৮ আগস্ট আবেদন করা হয়। এরপর ১৪ আগস্ট ওই আবেদনটি নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার বিচারপতির আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় ২০ আগস্ট নবম ওয়েজ বোর্ডের গেজেট প্রকাশের ওপর হাইকোর্টের দেওয়া স্থিতাবস্থার আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে আপিল বিভাগ।

ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/এমআর