রুপির মানপতনে লাভ আমদানি বাণিজ্যে

জহির রায়হান, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:১০
ফাইল ছবি

টাকার বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার মান ক্রমশ কমতির দিকে। ফলে ভারতের সঙ্গে আমদানি বাণিজ্যে বাংলাদেশ লাভবান হলেও রপ্তানিবাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশি মুদ্রার মান কমানোর পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের। তবে ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্য ডলারে সম্পন্ন হয়ে বলে রুপির মান কমলেও দুই দেশের বাণিজ্যে তার প্রভাব তেমন পড়বে না বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতীয় মুদ্রার দরপতনের প্রভাব আছে। বাংলাদেশে তার প্রভাব আরও বেশি। কেননা টাকার বিপরীতে রুপির দরও কমে গেছে। এখন বাংলাদেশের এক টাকা ১৯ পয়সায় পাওয়া যায় ভারতের এক রুপি। ১২ সেপ্টেম্বর তা ছিল ১ দশমিক ২৫ টাকা। টাকার বিপরীতে রুপির মান কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে যারা বেড়াতে বা চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছেন, তারা কিছু সুবিধা পাচ্ছেন। তবে এ ধরনের সুবিধা পেলেও বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারতের চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশেরই।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ভারতীয় রুপির বিপরীতে বাংলাদেশের টাকা শক্তিশালী হওয়ায় রপ্তানি বাণিজ্যে দেশটির সঙ্গে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। যদিও ভারত থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মিলছে বাড়তি সুবিধা। তবে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারতীয় পণ্যের আমদানি বাড়লে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি আরও বাড়বে।

তাদের মতে, এমনিতেই ভারতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির তুলনায় সেখান থেকে আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয় ১২৪ কোটি ৮০ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আমদানি ব্যয়ের চূড়ান্ত তথ্য এখনো তৈরি হয়নি। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ ৬১৪ কোটি ৬২ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন দুই দিক থেকেই চাপে আছে। এক চীনের মুদ্রা ইউয়ানের দর কমছে, অন্যদিকে ভারতীয় মুদ্রা রুপির। আসলে দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। কারণ সবাই ইউয়ানকে লক্ষ্য করছে।’

‘এমন অবস্থায় ভারত ও চীন থেকে আমাদের আমদানি বাড়বে। এমনিতেই আমাদের সিংহভাগ আমদানি হয় এই দেশ দুটি থেকে। ফলে বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা বাড়বে। এ ছাড়া ইউরোপ ও অন্যান্য জায়গাতেও আমাদের রপ্তানির অবস্থান খারাপ হবে। কারণ ওদের মুদ্রারও অবমূল্যায়ন হচ্ছে। ফলে আমাদের পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। অথচ ওদের পণ্যের দাম বাড়ছে না।’

এমন অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য মুদ্রার অবমূল্যায়ন করাই সঙ্গত বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘যুক্তি দেখানো হয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন মানে টাকার দাম কমলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ বেশিরভাগ পণ্যের দামই বিশ্ববাজারে নিম্নমুখী। ফলে আমাদের ওপর দামের প্রভাব পড়বে না। তবে আমাদের দেশে পণ্যের দাম কী হচ্ছে, সেটার ওপর নজরদারি করতে হবে।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির রিসার্চ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ডলারের বিপরীতে রুপীর মান দিনে দিনে কমতির দিকে। তবে আমাদের শুধু রুপী নিয়ে চিন্তা করলে হবে না। কারন আমাদের বাণিজ্য হচ্ছে ডলারে।’

‘রুপির মান অবনমনে বাংলাদেশির মুদ্রা আরও শক্তিশালী হচ্ছে। গত সাত-আট বছর ধরেই হচ্ছে এটা। এর ফলে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমছে। সুতরাং এখন কিছুটা হলেও টাকার মান কমানো উচিত। তবে এটি ধাপে ধাপে কমাতে হবে।’

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক আর্থিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করা গবেষকরা বলছেন, রুপীর মান পতনেও বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্যে তেমন প্রভাব পড়বে না। কারন ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যটা ডলারে হয়। ফলে রুপির মান পতনের প্রভাবটাও সীমিত হবে।

ঢাকাটাইমস/১৫সেপ্টেম্বর/জেআর/ডিএম

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :