ছাত্রদের কল্যাণে হোক ছাত্র রাজনীতি

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:২৯ | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৯:৩১

রেজাউল করিম

ছাত্র রাজনীতি বলতে কিছু থাকার কথা নয়। ছাত্রদের প্রধান কাজ হচ্ছে ‘ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ”। নিজেদের অধিকার আদায়ে হতে পারে ছাত্র আন্দোলন। যেমন কৃষকের অধিকারে আদায়ে রয়েছে কৃষক আন্দোলন। আন্দোলনের নাম হয়েছে রাজনীতি। ভাষাগত ভাবাবেই উদ্দেশ্য থেকে ছিটকে পড়ছে ছাত্ররা।

স্বাধীনতার পূর্বে প্রকৃত ধারায় ছিল দেশের ছাত্র রাজনীতি। তখন সেটাকে ছাত্র আন্দোলন বলা হতো। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছাত্র আন্দোলনের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। ছাত্রদের দাবি থাকবে এক ও অভিন্ন। এতে দাবি আদায়টা হবে সহজ। সব শ্রেণির ছাত্ররা একমঞ্চ এককণ্ঠে দাবি আদায়ের আওয়াজ তুলবে।

এখন কি হচ্ছে? ছাত্র রাজনীতি। পড়ালেখা না করে কলেজেই চলছে রাজনীতি। জীবনকে গঠনের আগেই হিসেব চলছে অর্থনৈতিক লেনদেন। কাজ করছে রাজনৈতিক দলের ছায়া সংগঠন হয়ে। বলা চলে ক্যাডার বাহিনী। সিনিয়র নেতারা যা পারবে না ছাত্রদের দ্বারা সেই কাজ করানোর একটি মাধ্যম মাত্র। ফলে রাজনৈতিক দলের ফায়দা হলেও প্রকৃত ছাত্রদের কোনো কাজে আসছে না।

অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হতে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করছে নানা খাতে। চাঁদাবাজি করতেও দ্বিধা করছে না। এই লোভে অনেকে ছাত্রজীবন থেকেই ছিটকে পড়ছে। যার ফলে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বিশ্বের সেরা একহাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাতে নেই।

শিক্ষাখাতে নানা সমস্যা। কখনও তো ছাত্রদের আন্দোলনে নামতে দেখিনি। নিরাপদ সড়ক চেয়ে সাধারণ ছাত্ররা মাঠে নামলেও সঙ্গে দেখ যায়নি ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র সমাজ বা ছাত্র শিবিরকে। প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ শিক্ষাখাতের কোনো অনিয়ম নিয়ে আন্দোলনে নামতে দেখা যায়নি দলীয় ছাত্রদের। বরং সাধারণ ছাত্রদের যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনে ছাত্রলীগ সরকারের পক্ষ থেকে ছায়াদল হিসেবে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে দেখা গেছে। ছাত্রদলকে দেখা গেছে বিরোধী দলের ভূমিকাতে। কখনও ছাত্রদের স্বার্থে ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলকে এক প্লাটফর্মে দেখা যায়নি।

শনিবার রাতে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সরিয়ে আল নাহিয়ান খান জয়কে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়েছে। আর সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে লেখক ভট্টাচার্যকে। তাদের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কাজের ছয় শতাংশ হারে প্রায় ৮৬ কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে।

ছাত্রদের নষ্টের পথ রাজনৈতিক দলগুলোই তৈরি করে দিচ্ছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের অবৈধ আর্থিক লেনদেন ও টাকার বিনিময়ে নেতা বানানোর দেন দরবারের (সাত মিনিট ২৭ সেকেন্ড) একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। এতে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে, ৪০ লাখেরও বেশি টাকা দিয়ে তিনি ইবি ছাত্রলীগের নেতা (সাধারণ সম্পাদক) হয়েছেন। ফোনের অপর পাশের ব্যক্তির কাছে তিনি এসব কথা স্বীকার করেছেন। এছাড়া, তার ব্যয়কৃত ওই ‘টাকা’ আগামী ছয় মাসে ‘ডাবল’ ইনকাম করে নিবেন বলেও কথপোকথনের একপর্যায়ে মন্তব্য করেন।

টাকা দিয়ে যদি নেতা হতে হয়, চালান তোলার ভাবনা থাকাটা তো অস্বাভাবিক নয়। বড় নেতার সঙ্গে ছোটদের ছবি। কমিটির সদস্য হলে তাকে এই পদ দেওয়ার জন্য বড় এক নেতার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শুভেচ্ছা ফেস্টুন টাঙানো হয়। এটার মানে হচ্ছে তাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি, তার হাত কিন্তু ওই নেতা পর্যন্ত। অতএব তার কথা মতো প্রশাসনকে চলতে হবে।

প্রাইমারি অবৈতনিক। উচ্চ বিদ্যালয়ে বই বিনামূল্যে। এরপরে নানাখাতে শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক হয়রানি হতে হচ্ছে। ছাত্ররা রোজগার শেখেনি। প্রতিটি চাকরির আবেদনের জন্য হাজার টাকা খরচ করতে হয়। এসব অসঙ্গতির জন্য তো ছাত্রলীগ-ছাত্রদলকে মাঠে নামতে দেখিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শুরু হচ্ছে। লক্ষ করবেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদল ছাড়া অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো ভর্তিচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদের কতোটা বিনয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। অথচ রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনগুলো নতুনদের সামনে পরিচয় হচ্ছে মিছিল নিয়ে জ্বলো…রে জ্বলো শ্লোগানে। এই শ্লোগানে নতুনরা কি শিখবে ওদের কাছে?

রাজনৈতিক দলগুলো কাছ থেকে ছাত্রসংগঠনগুলো সৃজনশীল অনেক কিছু শিখতে পারে। কম্পিউটার ক্লাব, সাংস্কৃতিক ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, অংকন ক্লাব বা স্পোর্টস ক্লাব গঠন করে ছাত্রছাত্রীদের অপরাধ প্রবণতা থেকে ফেরাতে পারে এসব ছাত্র সংগঠন।

ছাত্রছাত্রীদের নৈতিক অবক্ষয় রোধে জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন ছাত্র সংগঠনগুলো লাইব্রেরি তৈরি বা সংস্কৃতিক কার্যক্রম চালু করতে পারে। যার হাতে বই আর ভেতরটা সংস্কৃতিক মনা সে কখনও অপরাধ কার্যক্রম করতে পারবে না।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে সরিয়ে দলটি প্রশংসিত হয়েছে। ছাত্র সংগঠনগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য চাই নীতিমালা পরিবর্তন। ছাত্র সংগঠকে হতে হবে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের সংগঠন। এটা শুধু ছাত্রলীগের জন্য না। সকল রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর উদ্দেশ্যই ছাত্রদের কল্যাণে হতে হবে। এটাই জাতির প্রত্যাশা।

লেখক: সংবাদকর্মী