সাগরের ইলিশ পদ্মার বলে বিক্রি, ঠকছে ক্রেতা

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:০৩

শওকত আলী, চাঁদপুর

টানা নিষেধাজ্ঞার পর সাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। এবারের ইলিশের আকারও তুলনামূলক বড়। ধরা পড়া ইলিশের অধিকাংশ ওজনে কেজির বেশি। এবার চাঁদপুর নৌ-সীমানায় পদ্মা ও মেঘনা নদীতে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। কিন্তু ওজনে কেজির কম হলেই সাগরে ধরা ইলিশকে মেঘনা-পদ্মার বলে চালিয়ে ঠকানো হচ্ছে ক্রেতাকে।

জেলেরা বলছেন, এবার ইলিশ বেশি ধরা পড়ছে সাগরে। পদ্মা ও মেঘনা নদীতে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। আর ওজনে কম নদীর ইলিশের স্বাদ বেশি থাকায় এমন সাইজের ইলিশকে সাগরের বলে চালাচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে তাতে জেলেদের কোনও লাভ নেই। অতিরিক্ত দামে বিক্রি মাছের লভ্যাংশই যাচ্ছে বিক্রেতাদের পকেটে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সাগরের ইলিশ চাঁদপুর এসেই হাত বদল হয়ে পদ্মার ইলিশ হয়ে যায়। এতে করে প্রতারিত হচ্ছে পদ্মার ইলিশ ক্রয় করতে আসা বিভিন্ন স্থানের ক্রেতারা। মূলত নিয়ন্ত্রণ না থাকায় চাঁদপুরের ইলিশ বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে।

অন্যদিকে সাগর থেকে ধরা ইলিশকে চাঁদপুরের পদ্মার ইলিশ বলে চালিয়ে দিতে চাঁদপুর মৎস্য আড়তে এনে প্রতিমণ ইলিশ দক্ষিণ অঞ্চলের চাইতে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বেশিতে বিক্রি করা হচ্ছে। আর এ কারসাজির পেছনে মৎস্য আড়তদাররা প্রতি মণ ইলিশ বিক্রি করে কমিশন ছাড়াও দুই হাজার টাকা করে পান বলে ব্যবসায়ী জানান।

ক্রেতাদের অভিযোগ, ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ এমন ব্র্যান্ডিংয়ের সুযোগ নিচ্ছে বিক্রেতারা। চাঁদপুরের ইলিশের স্বাদ আলাদা বলেই জনশ্রুতি রয়েছে। ফলে ক্রেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে চাঁদপুরের ইলিশ। তবে চাঁদপুরে ইলিশের জন্য নির্দিষ্ট কোনও মার্কেট নেই। ব্যবসায়ীদের সমিতি থাকলেও নিয়ন্ত্রণ নেই দরদামে। যে যার মত ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এখন ইলিশ মৌসুম। প্রতিদিন চাঁদপুরের প্রায় ৫০টির মত আড়তে কমপক্ষে ১০ হাজার মণ ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় হয়। পাইকারির পাশাপাশি খুচরা ক্রেতার সংখ্যাও কম হবে না।

চাঁদপুরের বড় স্টেশন মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ট্রলারে এবং ট্রাকে আসা ইলিশ আড়তে নামছে। হাঁকডাক দিয়ে মুহুর্তেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। তারপর পাইকার থেকে খুচরা ইলিশ ক্রয় করছে সাধারণ ক্রেতা। কিন্তু একেক আড়তে একেক ধরণের দাম। কোনটা সাগরের ইলিশ কোনটা স্থানীয় জেলেদের ইলিশ চেনা খুবই কঠিন। বিক্রেতা তার অভিজ্ঞতা দিয়ে ক্রেতাকে বুঝিয়ে বিক্রি করছেন ইলিশ। মূল্য দিয়ে সঠিক ইলিশ না পাওয়া অনেকটা প্রতারণা বলে মনে করেন অনেক ক্রেতা।

এদিকে শহরের বিভিন্ন মোড়ে ও পাড়া মহল্লায় ইলিশ বিক্রি করতে দেখা যায়। ব্যস্ততার কারণে অনেক মানুষ বাজারে কিংবা আড়তে গিয়ে ইলিশ ক্রয় করতে পারেন না। এই সুযোগটা নেয় ফেরি করা ইলিশ বিক্রেতারা। দক্ষিণাঞ্চল থেকে আমদানি ইলিশ ঘাটে নামলেই কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একদম ফ্রেস ইলিশ, মোটামুটি মানের এক ভাগ এবং পচা ইলিশগুলো আরেকটি ভাগ হয়ে যায়। হাঁকডাক হলে ফেরি করে বিক্রির জন্য এক শ্রেণির খুচরা ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে কমদামের ইলিশগুলোই ক্রয় করেন। আর এই পচা ইলিশগুলোই বরফ দিয়ে শক্ত করে শহরের সাধারণ মানুষের চাহিদা মিটে। কিন্তু ভালোমানের ইলিশের মূল্যই দিতে হয় তাদেরকে।

চাঁদপুর মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবসায়ী ও প্রশাসন যৌথভাবে উদ্যোগ নিলে ইলিশের আলাদা মার্কেট হতে পারে। সেখান থেকে ইলিশের মান অনুযায়ী মূল্য সাঁটিয়ে দেয়া থাকলে একজন ক্রেতা তার চাহিদা অনুযায়ী ক্রয় করতে পারেন। এতে প্রতারণার সুযোগ থাকে না। এতে যেমন ব্যবসায়ীদের সুনাম বৃদ্ধি পাবে, তেমনি ইলিশ বাজারও সমৃদ্ধ হবে।

অপরদিকে চাঁদপুরের ইলিশ মাছ স্থানীয়ভাবে বিক্রির পাশাপাশি অনলাইনে দেশ-বিদেশের মানুষ ক্রয় করতে পারে সেজন্য তৈরি করা হয়েছে অনলাইন ইলিশ বাজার। চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক আব্দুর সবুর মন্ডল এটির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। কিন্তু এটি তিনি চাঁদপুর থেকে চলে গেলে আর আলোর মুখ দেখেনি। ওই অনলাইন ইলিশ বাজারও এখন বন্ধ রয়েছে। অনলাইন ইলিশ বাজারের সে নির্মিত ঘরে এখন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা নিজেদের আড়ৎ হিবেবে ব্যবহার করে ব্যবসা করে যেতে দেখা যায়।

চাঁদপুর মৎস্য বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শবে বরাত বলেন, ‘সব জিনিসেই নিয়ম থাকা প্রয়োজন। চাঁদপুর মৎস্য বনিক সমিতির বাহিরে যারা রয়েছে, তারা এসব অনিয়ম করে থাকতে পারে।’

‘ট্রলারে মাছ আসলে সেগুলো ভালো-খারাপ বাছাই করে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এক শ্রেণির ফড়িয়া ফেরি করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে।’

ঢাকাটাইমস/১৫সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ডিএম