ফজলু হত্যা

সাজানো মামলা দিয়েও পার পেলেন না মূল অভিযুক্ত

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৫৫ | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:০২

গাজীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকার ফজলু মিয়া হত্যাকাণ্ডের জট খুলেছে। প্রায় এক বছর পর হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। উন্মোচিত হয়েছে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার জট।

পুলিশ জানিয়েছে, এক বছর আগে সংঘটিত এই খুনের ঘটনার মূল অভিযুক্তরা মামলা থেকে একের পর এক কূটকৌশল করেন। এর অংশ হিসেবে মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য চক্রটি নিরীহ এবং গরিব ফজলুর মাকে ভুল বুঝিয়ে তাকে বাদিনী করে একটি অপহরণ মামলা করান।

কিন্তু পুলিশি সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য। খুনের ঘটনার এক বছরের মাথায় মূল অভিযুক্ত শাহিনুর ইসলাম দিপু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হলে খুলে যায় এই জট।

গ্রেপ্তার শাহিনুর কোনাবাড়ি থানার বাইমাইল এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম শফির ছেলে।

রবিবার গাজীপুরের পুলিশ অপরাধ তদন্ত বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আরজু মিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান।

আরজু মিয়া বলেন, ২০১৫ সালে ইন্টারনেট ব্যবসা দেখাশুনা করার জন্য ফজলুকে নিজের প্রতিষ্ঠানে কাজ দেন দিপু। কিছুদিন পর এলাকার প্রভাব বিস্তার ও ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ে দিপুর সঙ্গে তার বিরোধ দেখা দেয়। এর জের ধরে ফজলু দিপুর সহযোগী মোস্তফা ও আল আমিনকে মারধর করে। এছাড়া দিপুর বাসার সিসি ক্যামেরা ও তার বাবার নির্বাচনী অফিসও ভাঙচুর করে।

এর প্রতিশোধ নিতে ফজলুকে হত্যার পরিকল্পনা করে দিপু। ফজলুকে দুনিয়া থেকে সরাতে দুই লাখ টাকায় ভাড়া করেন খুনি।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৮ সালের ২৪ মে রাত ১১টার দিকে ফজলুকে মোবাইল ফোনে বাইমাইল ব্রিজের কাছে ডেকে নিয়ে যান দিপু। পরে ভাড়া করা সাত থেকে আটজন খুনি ফজলুকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে ময়মনসিংহের দিকে নিয়ে যায়। পরে মাইক্রোবাসেই হত্যার পর সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য লাশ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালের কাজী শিমলা এলাকায় ফেলে রাখা হয়।

রাত তিনটার দিকে ত্রিশাল থানা পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে ফজলুর লাশ উদ্ধার করে এবং থানায় একটি হত্যা মামলা করে। এরপর ফজলুর সন্ধান না পেয়ে তার বাবা-মা দিপুর কাছে যান। এ সময় দিপু নানা টালবাহানা করে সময়ক্ষেপন করেন এবং কিছু টাকা দিয়ে ফজলুর মাকে বিদায় করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, কিছুদিন পর ছেলের সন্ধানে আবার ফজলুর মা অজুফা দিপুর কাছে গেলে দিপুর মা বাছিরুন তাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। পরে মামলাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য বাদিনী অজুফাকে ভুল বুঝিয়ে একই তারিখ ও সময় উল্লেখ করে শেরপুর আদালতে একটি অপহরণ মামলা করান। সেখানে ১০ জনকে বিবাদী করা হয়। এতে দিপুকে সাক্ষী করা হয়। কিন্তু সেই মামলাটি মিথ্যা বলে পুলিশ তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়।

পরবর্তীতে ওই বছরের ১১ জুন বাদিনী অজুফা ছেলের সন্ধান চেয়ে আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে ৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি জয়দেবপুর থানায় নথিভূক্ত করা হয়। দীর্ঘ এক বছরেও মামলাটি অগ্রগতি না হওয়ায় সর্বশেষ চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি মামলাটির তদন্তভার পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডির উপপরিদর্শক শাহ মো. আজাদ রহমান তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের এক পর্যায়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর মামলার এক নম্বর আসামি দিপুকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সেদিনই গাজীপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ফজলু হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন দিপু। জবানবন্দি শেষে দিপুকে কারাগারে পাঠান বিচারক।

এএসপি আরজু মিয়া আরও বলেন, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর সহযোগিদের ধরতে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব।

ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এমআর