বিদেশে উচ্চশিক্ষার আদ্যোপান্ত

হাবিব তারেক
 | প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:১৯

বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগ্রহ কম-বেশি সবারই আছে। সঠিক তথ্য না জানলে বিভ্রান্তি বাড়ে। না বুঝে অনেকে হাল ছেড়ে দেয়। তবে জানা থাকলে বুঝেশুনে পা বাড়ানো যায়। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বহু শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে। দেশ হিসেবে অধিকাংশরই পছন্দ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, জাপান, মালয়েশিয়া, চীন। এছাড়া ভারত, সৌদি আরব, আরব আমিরাতেও যাচ্ছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী। মালয়েশিয়া ও আরব আমিরাতে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার আছে।

যোগ্যতা থাকলেই সিদ্ধান্ত নিন

বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ‘অর্থ’ ও ‘মেধা’ দুটোই দরকার। প্রশ্ন হচ্ছে, কাক্সিক্ষত বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির যোগ্যতা এবং কাক্সিক্ষত দেশে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার আর্থিক সামর্থ্য আছে কি না। যদি থাকে, তবেই কেবল বিদেশে উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা করা উচিত। তবে বৃত্তি নিয়েও বিনা খরচায় বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে পড়াশোনা ও টিকিট খরচ না লাগলেও থাকা-খাওয়া ও আনুষঙ্গিক খরচ হতে পারে। বৃত্তি নিয়ে যাবেন, নাকি নিজ খরচে যাবেন, তা নিশ্চিত হয়েই পরবর্তী পদক্ষেপ নিন। অবশ্য ভর্তির পরও বৃত্তি, ফান্ড থেকে আর্থিক সুবিধা বা ফি মওকুফের সুযোগ আছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। চাইলে বিদেশি শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে শিক্ষাঋণও নিতে পারে। আন্ডার গ্রাজুয়েট অর্থাৎ ব্যাচেলর/স্নাতক কোর্সে ভর্তি হতে হলে এইচএসসি/সমমান অথবা এ-লেভেল পরীক্ষায় পাস হতে হবে। মোটামুটি ভালো পয়েন্ট থাকলেই আবেদন করা যায়। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে যে বিষয়ের জন্য আবেদন করা হয়, তার সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন বিষয়ে ভালো পয়েন্ট থাকার শর্তও থাকে। অনেকে স্টুডেন্ট ভিসায় বিদেশে গেলেও আসল উদ্দেশ্য থাকে ডলার কামানো। পড়াশোনা বাদ দিয়ে শুধু কাজ নিয়ে থাকলে ভিসা জটিলতায় পড়তে হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক দেশেই বৈধভাবে খ-কালীন বা পার্টটাইম (সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা) কাজ করা যায়।

কোর্স, বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশ নির্বাচন

আন্ডার গ্রাজুয়েট অর্থাৎ ব্যাচেলর/স্নাতক (অনার্স/সম্মান) কোর্সে বিদেশে ভর্তির জন্য আগ্রহী শিক্ষার্থীর সংখ্যাই তুলনামূলক বেশি। পোস্ট গ্রাজুয়েট অর্থাৎ মাস্টার্স পর্যায়ের কোর্সে বিদেশি উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম না। কেউ কেউ গবেষণার জন্য অর্থাৎ পিএইচডি/ডক্টরেট করতে বিদেশে যান। ব্যাচেলর কোর্সের আগে ডিপ্লোমা কোর্সেও ভর্তি হতে চান অনেকে।

কোর্সগুলোর মেয়াদ

ডিপ্লোমা ১ থেকে ২ বছর, আন্ডার গ্রাজুয়েট সাধারণত ৪ বছর, গ্রাজুয়েট ১ থেকে ২ বছর, পিএইচডি/ডক্টরেট ডিগ্রি ২ থেকে ৩ বছর।

বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানসম্মত বা পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াই ভালো। চাহিদা আছে এমন বিষয়কেই পছন্দের তালিকায় রাখতে হবে। মনে রাখবেন, বিদেশে চাহিদা আছে এমন সব বিষয়ের চাহিদা আমাদের দেশে নাও থাকতে পারে। মানসম্মত পড়াশোনা, টিউশন ফি তুলনামূলক কম এমন বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করাই ভালো। শিল্পসমৃদ্ধ কিংবা জনবহুল শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি খ-কালীন কাজ করে তুলনামূলক বেশি আয় করতে পারবে। উচ্চশিক্ষার জন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে স্থিতিশীল এবং জাতিগতভাবে সহনশীল দেশকেই বাছাই করা উচিত।

তথ্য সংগ্রহ ও প্রস্তুতি

কোথায় কেমন খরচ হয়, পার্টটাইম চাকরির সুযোগ কতটুকু তা অনলাইনের মাধ্যমেও খোঁজ নিতে পারবেন। কাক্সিক্ষত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ কেমন তা আগে থেকেই জেনে নিলে পরবর্তী সময়ে হয়রানি হতে হবে না। অভিজ্ঞদের কাছ থেকেও তথ্য-সহযোগিতা ও পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। কয়েকটি দেশের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক বা প্রতিনিধিত্বকারী অফিস বাংলাদেশে আছে, যারা শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যাপারে সহযোগিতা করে। যদি শিক্ষার্থী মনে করেন, নিজে নিজে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব নয়, তাহলে বিশ্বস্ত কোনো কনসালটেন্সি ফার্মের সহযোগিতা নিতে পারেন। তবে সতর্ক থাকবেন, ফার্মটি কোনো তথ্য গোপন কিংবা অতিরিক্ত ফি নিচ্ছে কি না। পুরোনো ফার্ম ও আগের রেকর্ড ভালো, এমন হলে আস্থা রাখা যায়।

ভর্তি আবেদন করার প্রায় এক বছর আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করা ভালো। যেমন- আইইএলটিএস বা ভাষা দক্ষতা কোর্সের প্রস্তুতি শেষে টেস্টে অংশ নেওয়ার পর যদি কাক্সিক্ষত স্কোর না পাওয়া যায়, তাহলে আবারো টেস্টে অংশ নিতে হবে। পাসপোর্ট না থাকলে করতে হবে, আর্থিক স্বচ্ছতার কাগজপত্রও প্রস্তুত রাখতে হবে। এসব কারণে আগে থেকেই প্রস্তুতি পর্ব শুরু করলে পরে কাক্সিক্ষত সেশন শুরুর আগে সঠিক সময়ে আবেদন করা যাবে। পাসপোর্ট আবেদন ও দরকারি তথ্য জানা যাবে এই ওয়েবসাইটে www.passport.gov.bd

কাগজপত্র

সাধারণত যেসব কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হয়Ñ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও নম্বরপত্র (কোনো সনদ ইংরেজিতে না থাকলে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে অনুবাদ করতে হবে), পাসপোর্ট (আবেদনের দিন থেকে অন্তত পরের এক বছর পর্যন্ত মেয়াদ থাকলে ভালো), জাতীয় পরিচয়পত্র, মেডিকেল সার্টিফিকেট, ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট বা স্পন্সর-সংক্রান্ত কাগজপত্র, ভাষা দক্ষতা সনদ (আইইএলটিএস অথবা টোফেল), পুলিশ ক্লিয়ারেন্স (প্রার্থীর নিজ এলাকার থানা থেকে সংগ্রহ করতে হবে), পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি (সম্প্রতি তোলা, ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা হলে ভালো) ইত্যাদি।

টিউশন ফি ও থাকা খরচ

দেশ, বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্সভেদে পড়াশোনার খরচ একেক রকম হবে। এরপরও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের এভারেজ ধারণা দিতে এখানে কয়েকটি দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বছরের টিউশন ফি ও সেসব দেশে থাকার গড় খরচের তথ্য তুলে ধরা হলো-

দেশ

(পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়) টিউশন ফি

$ থাকা খরচ

$ বছরে

মোট খরচ

$

অস্ট্রেলিয়া (পাবলিক) ৮,৫০০ ৮,৫০০ ১৭,০০০

কানাডা (পাবলিক) ৭,৫০০ ৯,০০০ ১৬,৫০০

ফ্রান্স (পাবলিক) - ১৩,০০০ ১৩,০০০

মালয়েশিয়া (প্রাইভেট) ৪,৬০০ ৪,৪০০ ৯,০০০

নিউজিল্যান্ড (পাবলিক) ১০,০০০ ১১,৫০০ ২১,৫০০

সিঙ্গাপুর (প্রাইভেট) ৬,৫০০ ১০,০০০ ১৬,৫০০

যুক্তরাজ্য (পাবলিক) ১৪,০০০ ১২,৫০০ ২৬,৫০০

আমেরিকা (পাবলিক) ১৩,০০০ ১২,০০০ ২৫,০০০

আমেরিকা (প্রাইভেট) ২২,০০০ ১৩,০০০ ৩৫,০০০

সূত্র: আন্তর্জাতিক ভর্তিবিষয়ক হ্যান্ডবুক ও ওয়েবসাইট

* ১ মার্কিন ডলার ($) = প্রায় ৮৫ টাকা।

ফান্ড ও স্পন্সর

যে দেশে যাবেন, সে দেশে থাকা-খাওয়া, টিউশন ফি ও অন্যান্য খরচের জন্য শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা দেখাতে হবে। এর প্রমাণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টের ব্যাংক স্টেটমেন্ট যুক্ত করতে হবে ভিসা আবেদনপত্রের সঙ্গে। স্পন্সরের ক্ষেত্রে মা-বাবা ছাড়াও বৈধ অভিভাবকদের সহযোগিতা নিতে পারেন। তবে অন্য কোনো ব্যক্তিকে অভিভাবক বানিয়ে ভুয়া স্পন্সর সংগ্রহ করে ভিসা আবেদন করতে নিষেধ করে ভিসা সেন্টার কর্তৃপক্ষ। ভুয়া কাগজপত্র ধরা পড়লে ভিসা প্রত্যাখ্যান ছাড়াও আইনি ঝামেলার আশঙ্কা আছে। তাই কোনো ব্যাপারে মিথ্যা বা ভুল তথ্য না দেওয়াই নিরাপদ।

ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা সবার আগে

বিদেশে পড়াশোনার কথা ভাবার আগে দরকার ভাষা দক্ষতার সনদ। এটা ছাড়া ভিসা তো দূরের কথা, বেশিরভাগ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনেরও সুযোগ নেই। কিছু কিছু দেশে ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সনদ হিসেবে টোফেলও চাওয়া হয়। যেমনÑ যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে কোনো দেশে ভাষা দক্ষতার প্রমাণস্বরূপ চাওয়া হয় আইইএলটিএস স্কোর।

আইইএলটিএস

ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম (আইইএলটিএস) হচ্ছে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার মাপকাঠি বা সনদ, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি নয় তাদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা কিংবা ইমিগ্রেশন ভিসার আবেদনের পূর্বশর্ত হিসেবে আইইএলটিএস পরীক্ষায় ভালো স্কোর থাকতে হয়। বিশ্বের ১২০টির বেশি দেশে এই পরীক্ষা নেওয়া হয়।

টোফেল

কিছু কিছু দেশে আইইএলটিএস গ্রহণযোগ্য নয়। ওসব দেশে ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সনদ হিসেবে টোফেলও চাওয়া হয়। ইংরেজি ভাষা দক্ষতা প্রমাণের পরীক্ষা ‘টেস্ট অব ইংলিশ এজ এ ফরেন ল্যাংগুয়েজ’ বা টোফেল। বর্তমানে যেসব ভাষা দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষা প্রচলিত আছে, এর মধ্যে টোফেল অন্যতম। ১৯৬৪ সালে এ পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হওয়ার পর ‘অ্যাডুকেশনাল টেস্টিং সেন্টার’ বা ইটিএসের অধীনে এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের আড়াই কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী টোফেল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। আমেরিকা, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানিসহ বিশ্বের ১৩০টিরও বেশি দেশে শিক্ষাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে ‘ভাষা দক্ষতার সনদ’ হিসেবে টোফেল গ্রহণ করা হচ্ছে।

আইইএলটিএস, টোফেল ছাড়াও স্যাট/জিম্যাটেরও দরকার হয়। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স পর্যায়ে পড়তে গেলে স্যাট/জিম্যাট স্কোর চাওয়া হয়।

সেশন ও ভর্তি আবেদন

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেশভেদে বিভিন্ন সেশনে বছরে সাধারণত দুই থেকে ছয়বার ভর্তি আবেদনের সুযোগ থাকে, যেমনÑ ফল, উইন্টার, স্প্রিং, সামার, অটম সেশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই ‘প্রসপেক্টাস’ ও ‘অ্যাপ্লিকেশন ফরম’ পাওয়া যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে কোর্স, ভর্তি প্রক্রিয়া, ফি ও অন্যান্য তথ্য বিস্তারিত জেনে আবেদন করতে হবে। সেশন শুরুর বছরখানেক আগে থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। বিশেষ করেÑআইইএলটিএস/টোফেল/স্যাট টেস্ট দেওয়া, নিজের একাডেমিক ও দরকারি কাগজপত্র প্রস্তুত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ ইত্যাদি যথেষ্ট সময় আগে থেকেই সেরে নিতে হবে। আবেদনপত্র ও প্রয়োজনীয় তথ্য-কাগজপত্র দেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবেদনকারী শিক্ষার্থী ভর্তির যোগ্য কি না কিংবা আরো কোনো তথ্য বা কাগজপত্র লাগবে কি না তা ‘অফার লেটার’ বা এ ধরনের পত্র/ইমেইলের মাধ্যমে জানাবে। শিক্ষার্থী ভর্তির যোগ্য হলে ফি জমা ও অন্যান্য নির্দেশনাসহ বিস্তারিত পত্র/ই-মেইলে জানাবে। আবেদন ফি কত, কীভাবে কোন কোন ব্যাংকে বা মাধ্যমে জমা দিতে হবে, এর পর কী করতে হবে বিস্তারিত সব তথ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানাবে। ফি জমা দেওয়ার পর এর রসিদ বা কাগজপত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাওয়ার পর ভর্তি প্রক্রিয়া নিশ্চয়তা বা শিক্ষার্থী হিসেবে তালিকাভুক্তি বা এনরোলমেন্ট সংক্রান্ত কাগজপত্র পাঠাবে। এটি পাওয়ার পরই স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে। ক্লাস কবে থেকে, কবে নাগাদ সেদেশে পৌঁছাতে হবে, আবাসনের তথ্যÑসবই ই-মেইলে যোগাযোগ করে জানা যাবে।

বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষা

বিভিন্ন দেশের সরকার এবং বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (www.moedu.gov.bd) বৃত্তিসংক্রান্ত নোটিশ যুক্ত করা হয়। বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ভিসা আবেদনের ফরমে বৃত্তি প্রদানকৃত প্রতিষ্ঠানের নাম, সেমিস্টার, প্রতি বৃত্তির অঙ্ক ও মেয়াদ উল্লেখ করতে হয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটেও বৃত্তিসংক্রান্ত তথ্য দেওয়া থাকে।

দেশ ও প্রোগ্রামভেদে বছরের বিভিন্ন সময় স্কলারশিপের ঘোষণা আসে। বিভিন্ন দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট কিংবা দূতাবাসের ওয়েবসাইটে খোঁজ নিলে ঘরে বসেই মিলতে পারে স্কলারশিপের তথ্য।

ভিসা আবেদন

অফার লেটার হাতে পাওয়ার পর ভিসার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে আবেদন করতে হবে। এ কাজটি শিক্ষার্থী নিজেই করতে পারবেন। যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে ভিসার আবেদন করতে হয় দূতাবাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও ভিএফএস গ্লোবাল পরিচালিত ভিসা সেন্টারে (www.vfsglobal.com)। উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা বেশি যায় অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডায়। অনেক দেশে ভিসা ইন্টারভিউর মুখোমুখি হতে হয়। সে ক্ষেত্রে প্রার্থীর ইংরেজিতে স্পষ্ট এবং স্বাভাবিকভাবে কথা বলার দক্ষতা থাকতে হবে।

স্টুডেন্ট ভিসার ধরন ও ধারণা

প্রথমবার আবেদন করে ভিসা পাননি রেজা। প্রত্যাখ্যাত (রিফিউজড) হয়ে মনে হয়েছিল আর বুঝি আমেরিকায় পিএইচডি করা হবে না। তবুও হাল ছাড়েননি। দ্বিতীয়বার আবেদন করে আবারও ভিসা সাক্ষাৎকারের সুযোগ পান। এবার আর রিফিউজড হননি। ভিসা পাওয়ার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে যান।

ভিসা পাওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, যোগ্যতা থাকলে আর একটু সচেতন ও কৌশলী হলে ভিসা পাওয়া কঠিন কিছু না। যোগ্যতা থাকার পরও সঠিক ধারণা না থাকা কিংবা অজ্ঞতার কারণে ভিসা আবেদন রিফিউজড হয় অনেকেরই। ভিসা না পেয়ে অনেক শিক্ষার্থীই এ প্রক্রিয়াকে ‘জটিল’ মনে করে ভেঙে পড়েন। বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্নের ইতি টানেন।

শুধু আমেরিকার ক্ষেত্রেই নয়, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা মেনে আবেদন করলে যোগ্য শিক্ষার্থীরা যেকোনো দেশের ভিসা প্রত্যাখ্যান এড়াতে পারেন খুব সহজেই।

বিদেশে অভিবাসনের সুযোগ

অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে পাড়ি জমান শুধু উচ্চশিক্ষার জন্যই নয়, ভবিষ্যতে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্যও। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ডসহ উন্নত দেশগুলো চাহিদাসম্পন্ন বিষয়ে বিদেশি ডিগ্রিধারীদের অভিবাসনের সুযোগ দিয়ে থাকে। দেশে বসেই আপনি অভিবাসনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এসব দেশে ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া থাকে। যেসব বিষয়ের ডিগ্রিধারী কিংবা পেশাজীবীরা অভিবাসনের সুযোগ পায় তা ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিতে পারেন। তবে বিভিন্ন বিষয়ের যোগ্যতার ওপর পয়েন্ট নির্ধারণ করে অভিবাসন ভিসা দিয়ে থাকে কর্তৃপক্ষ।

বিদেশে বিনা খরচায় পড়াশোনা

ভিনদেশি ডিগ্রি কি আর চাট্টিখানি ব্যাপার। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করেই তবে বগলদাবা করা যায় একটি সনদ। তবে সবক্ষেত্রে এ কথা সত্যি নয়, এমন অনেক দেশ আছে টিউশন ফি ছাড়াই আছে উচ্চশিক্ষার সুযোগ। আর একটি স্কলারশিপ জুটিয়ে নিতে পারলে তো কথাই নেই।

জার্মানির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কোনো টিউশন ফি নেই। বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীই পড়ছেন এ দেশটিতে। জার্মানি, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, সুইডেনসহ বেশ কিছু দেশের অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি গুনতে হয় না। বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে পাড়ি জমান, এর কারণ হলো এখানকার অনেক দেশে টিউশন ফি নেই, আছে খ-কালীন কাজের সুযোগ। এছাড়া বছরজুড়েই স্কলারশিপের ঘোষণা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের সরকার, সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বৃত্তিতে শুধু পড়াশোনার খরচই নয়, সংশ্লিষ্ট দেশে যাওয়ার বিমান ভাড়াও দিচ্ছে কোনো কোনো দেশের সরকার। স্কলারশিপ প্রোগ্রামের আওতায় টিউশন ফি, শিক্ষা উপকরণ, লাইব্রেরি ফি, বাসস্থান, যাতায়াত, মেডিকেল খরচও বহন করছে কর্তৃপক্ষ।

বিদেশি অর্থায়নে গবেষণা

বিদেশি অর্থায়নে গবেষণার সুযোগ আছে। এছাড়া কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে ফান্ডের ব্যবস্থা। বিদেশি সরকার ও সংস্থা পরিচালিত অনেক প্রকল্পের আওতায় জীববৈচিত্র্য, স্বাস্থ্য, ভূমিকম্প ইত্যাদি বিষয়ে বিদেশি অর্থায়নে গবেষণা করার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ থাকে। আবেদনপত্র বাছাইয়ের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ঠিকানায় ভর্তি এবং ফান্ডিংয়ের প্রস্তাবপত্র পাঠায়। পরবর্তী ধাপ ও করণীয়ও উল্লেখ থাকে ওই পত্রে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেক সময় তুলনামূলক মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিমানভাড়া ও থাকার খরচ বহন করে থাকে। আবেদন করতে দরকার হবে স্টেটমেন্ট অব পারপাস (দুই পৃষ্ঠা রচনা), রিকমেন্ডেশন লেটার বা সুপারিশপত্র, টোফেল অথবা আইইএলটিএস স্কোর।

বিদেশে পৌঁছার পর

প্রথম ভিসা পাওয়ার পর মেয়াদ যা-ই থাকুক, কোর্স চলাকালীন সময়ে দরকার হলে মেয়াদ এক্সটেনশেন বা বর্ধিত করা যাবে। পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করে। কোনো শিক্ষার্থী যদি নিয়মিত পরীক্ষা বা শিক্ষাক্রমে অংশ না নেন কিংবা পড়াশোনা ছেড়ে দেন, সে ক্ষেত্রে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সায় দেন না। তা ছাড়া বিদেশে আবাসন কিংবা পার্টটাইম চাকরি পেতে কারো সহযোগিতার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অনেক (ভারতীয় ও বাংলাদেশি) প্রতিষ্ঠান আবাসন সুবিধা কিংবা চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করে। আর যে দেশে যাবেন, সেখানকার আইন, নিয়ম-কানুন জানার চেষ্টা করবেন এবং মেনে চলবেন।

পরামর্শ-সহযোগিতা নিতে

যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল (www.britishcouncil.org.bd) আর আমেরিকার জন্য আমেরিকান সেন্টার (educationusa.state.gov/centers/american-center-dhaka) থেকে উচ্চশিক্ষা ও ভিসা সংক্রান্ত সব রকমের তথ্য-পরামর্শ কিংবা সহযোগিতা নিতে পারেন। এই দুই দেশের পাশাপাশি কানাডা, নিউজিল্যান্ডে ভর্তিসহ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সব রকমের সহযোগিতা করছে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আইডিপি (www.idp.com/bangladesh)।

(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :