দেশে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সিলেবাস প্রণয়ন করা উচিত

লায়ন এম কে বাশার
 | প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:৩৫

উচ্চশিক্ষার জন্য যারা বিদেশে যেতে চায়, তাদের জন্য ২৫ বছর ধরে কাজ করছে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক। এরই সুবাদে প্রতিষ্ঠানটি আইএসও (৯০০১-২০০৮) সনদ পেয়েছে। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে শিক্ষার্থী পাঠানোর পাশাপাশি তাদের ক্যারিয়ার গঠনেও প্রতিষ্ঠানটি ভূমিকা রাখছে। বিদেশে উচ্চশিক্ষার আদ্যোপান্ত নিয়ে ঢাকা টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান লায়ন এম কে বাশার পিএমজেএফ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেখ সাইফ

বিদেশে পড়তে গেলে কোন কোন বিষয়ে পড়া উচিত?

বিশ্বে এখন স্যাটেলাইট, রেলওয়ে, টেলিকমিউনিকেশন, সাইবার সিকিউরিটি, রোবটিকস, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সি বিষয়ের চাহিদা বেশি। আমাদের শিক্ষার্থীদের তাই আমরা এসব বিষয়ে বিদেশে পড়তে বলি, যাতে দেশে ফিরে এগুলো নিয়ে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

উচ্চশিক্ষা নিতে কী পরিমাণ শিক্ষার্থী প্রতিবছর বিদেশে যাচ্ছে?

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন দেশে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ২৫ থেকে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী যায়।

এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে বেশিরভাগই স্ব-অর্থায়নে পড়তে যায়। এ ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন? মালেয়েশিয়া বা চীন থেকে যারা অন্য দেশে পড়াশোনা করতে যায় তাদের নিজ নিজ দেশের সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করে। স্টাডি লোনের ব্যবস্থা করে থাকে। শিক্ষার্থীরা চাকরি করে ইন্টারেস্টসহ ফেরত দিয়ে দেয়। ইন্টারেস্ট রেটটাও খুবই কম। বাংলাদেশেও এ ব্যবস্থা সরকারের চালু করা উচিত। যদিও সম্প্রতি বাংলাদেশে দুটি ব্যাংক স্টাডি লোনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে সেটা ভিসার ক্ষেত্রে।

স্টুডেন্ট ভিসায় বিদেশ গিয়ে আয়ের সুযোগ কতটা? বাংলাদেশ থেকে যখন কোনো শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য বিদেশে যায়, তখন এক বছর বা ছয় মাসের পড়াশোনা, থাকা-খাওয়ার খরচটা সঙ্গে নিয়েই যায়। এরপর যারা একটু কর্মঠ, মেধাবী তারা পড়াশোনার ফাঁকে খ-কালীন কাজ করে তাদের উপার্জনের অর্থ দিয়েই সেখানে পড়াশোনা করে। কখনো তারা আয় করে দেশেও টাকা পাঠায়। পড়াশোনা শেষ করে অনেকে বিদেশে থেকে যায়। তখন বিপুল পরিমাণ আয়ের সুযোগ আছে।

বাংলাদেশ থেকে কানাডায় এখন সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য যায়। তারা খন্ডকালীন প্রতি ঘণ্টায় আয় করে ন্যূনতম ১৫ ডলার। পড়াশোনা চলাকালীন সপ্তায় ২০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ আছে। যখন ক্লাস বন্ধ থাকে তখন সপ্তাহে ৩২ ঘণ্টা কাজের সুযোগ মেলে।

অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে পড়তে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। এ নিয়ে কিছু বলুন। প্রতিটি সেক্টরেই ভালো-মন্দ দুই ধরনের কাজই হয়ে থাকে। এ সেক্টরেও আছে। আমরা মিডিয়াতে বারবার বলার চেষ্টা করছি, যেন শিক্ষার্থীরা সঠিক তথ্য পেতে পারেন। এখন কিন্তু অনলাইনে সব তথ্যই পাওয়া যায়। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান মিথ্যা তথ্য দিতে পারে। তারা শিক্ষার্থীর মার্কশিটে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, আইইএলটিএস স্কোর নেই? সমস্যা নয়, তারা তৈরি করে দেবে। বাবার এক বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট নেই। নীলক্ষেত থেকে বানিয়ে দেবে। ট্যাক্স ফাইল করা নেই? সেটাও তারা বানিয়ে দেবে। এটার জন্য তারা ২০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকবে। এক্ষেত্রে আপনি জেনেবুঝেই প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছেন। যেখানে অ্যাম্বাসি বলছে আপনার জেনুইন ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগবে। সেখানে ডুপ্লিকেট দিচ্ছেন। সমস্যা তো হবেই। এভাবেই অনেকেই প্রতারণার মুখে পড়ছেন।

আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী নয়, এমন শিক্ষার্থী যদি বিদেশ পড়তে যেতে চায়, তবে তাদের জন্য আপনাদের কী পরামর্শ? আসলে সচ্ছলদেরই উচিত বিদেশে পড়তে যাওয়া। যাদের অর্থ নেই তাদের উচিত বৃত্তি নিয়ে পড়তে যাওয়া। অসচ্ছলদের আমরা বিদেশে পড়তে যেতে নিরুৎসাহিত করি। কখনো প্রতিবেশী দেশগুলো পড়তে যাওয়ার পরামর্শ দিই। কেননা, এসব দেশে খরচ কম।

বিদেশে কাজের ক্ষেত্রে আপনারা কোনো সহযোগিতা করেন কি না? এর জন্য স্পষ্ট নীতিমালা আছে। একজন শিক্ষার্থী কোর্স চলাকালে যদি ভাষা কোর্সে যায়, তাহলে কাজ পাবে না। সার্টিফিকেট কোর্সে গেলে পাবে না। ছুটির দিনে সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজের সুযোগ পাবে। আমরা কাজ পাওয়ার জন্য কী করতে হবে, কীভাবে সিভিটা তৈরি করতে হবে, কীভাবে আবেদন করতে হবে? এগুলোর বিষয়ে গাইড করে থাকি। কোথায় গেলে জবের সন্ধান পাবে? এগুলো করে থাকি। সেখানে প্রচুর কাজের সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে ভাষা জানতে হবে, কাজ সম্পর্কে জানতে হবে, কম্পিউটার জানতে হবে, হিসাব-নিকাশ জানতে হবে। আর ইংরেজি জানাটা তো খুবই জরুরি।

শিক্ষার্থীদের বিদেশে যাওয়ার আগে তাদের দক্ষতা উন্নয়নে আপনাদের প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা আছে কি? বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগে একজন শিক্ষার্থীর ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা জরুরি। এছাড়া জানতে হবে কম্পিউটার পরিচালনাও। সে ক্ষেত্রে আমরা শিক্ষার্থীদের ইংরেজি, কম্পিউটার শেখার পরামর্শ দিই। আমাদের এখানে আইএলটিএস পরীক্ষায় ভালো স্কোর পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য কোচিংয়ের ব্যবস্থা আছে। আমাদের আলাদা ভাষা সেন্টার আছে। আমরা মূলত টোফেল, আইইএলটিএস এবং অ্যাপটিটিউট টেস্টের কোর্স করাচ্ছি। আমাদের এখানে ব্রিটিশ কাউন্সিলের এক্সাম সেন্টারও আছে।

ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে কতটুকু সহায়তা করেন? বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার পর বড় চ্যালেঞ্জ ভিসা পাওয়া। ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত আছে। যে শর্তগুলো পূরণ করতে আমরা শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করি। যেন তাদের সেখানে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে না হয়। নতুন কেউ এলে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয় ভর্তি ও ভিসার জন্য কী কী লাগবে। আমরা শিক্ষার্থীদের এ টু জেড তথ্যগত সহায়তা দিয়ে থাকি।

আপনাদের ফি সম্পর্কে জানতে চাই। প্রতিটি ইউনিভার্সিটিতেই রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারণ করা আছে। কোনোটায় ৫০ ডলার বা ১০০ ডলার অথবা ১৫০ ডলার। আমরা সেগুলোই নিয়ে থাকি। আর আমাদের এখানে রেজিস্ট্রেশন ফি অফেরতযোগ্য। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ক্রেডিট কার্ড থাকলে সেখান থেকে কেটে নেওয়া হয়। তবে কারো যদি ক্রেডিট কার্ড না থাকে তাহলে আমরা ওই পরিমাণ অর্থ নিয়ে আমাদের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ফুলফিল করা হয়।

বাংলাদেশের কারিকুলামের সঙ্গে বিদেশের কারিকুলাম মেলে না। বিদেশে পড়ার ক্ষেত্রে এ সমস্যার সমাধান মিলবে কীভাবে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বাইরের কারিকুলামের সমন্বয় করতে হবে। তাহলে বাংলাদেশের ক্রেডিট তারা গ্রহণ করবে। আমাদের এখানে ফার্স্ট ইয়ারে নন-ক্রেডিটেবল সাবজেক্ট দিয়ে শেষ করে দেয়। সুতরাং এখানের নন-ক্রেডিট সাবজেক্ট ওখানে ক্রেডিট দাবি করতে পারবে না। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা আন্তর্জাতিক সিলেবাস বা মান অনুযায়ী করা হয়। তাদের সিলেবাসের সঙ্গে মিল রেখে আমাদের সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে। আমাদের এখানে থিওরিটিক্যালটা বেশি পড়ানো হয়। প্র্যাকটিক্যালটা খুব কম। তাদের ওখানে প্রাকটিক্যাল ক্লাস বেশি করানো হয়।

বিদেশে বৃত্তি নিয়ে পড়ার উপায় কী কী? স্কলারশিপ বা বৃত্তি কয়েক ধরনের হয়। আমরা যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করি তারা আমাদের শিক্ষার্থীদের একটা সময়ের জন্য স্কলারশিপ দেয়। কখনো ৫০ শতাংশ কখনো ৩০ শতাংশ। কখনো আবার ১০ শতাংশ। পরবর্তী সময়ে যখন শিক্ষার্থীরা ওখানে যায় এবং ভালো রেজাল্ট করতে পারে, তখন সেখানে তারা স্কলারশিপ পেতে পারে। আবার চায়নাতে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে তাদের ফুল স্কলারশিপ শুরু থেকেই। আমাদের কিছু এজেন্টও সেখানে আছে, যারা ম্যানেজ করে দেন। আবার যারা এক্সট্রা-অর্ডিনারি শিক্ষার্থী তারা ফুল স্কলারশিপে টপ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবে।

বিদেশে যারা পড়তে যেতে চায় তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ? যারা বিদেশে পড়তে যেতে ইচ্ছুক তাদের এসএসসি থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। ইংরেজির প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের আইইএলটিএস, টোফেলসহ ইংরেজি ভাষা দক্ষতার পরীক্ষায় বসতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভালো স্কোর থাকা জরুরি। এ ছাড়া দেশ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং পড়ার বিষয় নির্বাচন করাটা জরুরি। বিদেশেও নি¤œমানের বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সেগুলো সম্পর্কে জানতে হবে, ওই দেশের আইন জানতে হবে। রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিতে হবে, এগুলো না দেখেশুনে বিদেশে পড়তে হলে অসুবিধায় পড়তে হবে।

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ঢাকা টাইমস এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/এসএস/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :