ঢাকা টাইমসে খবর প্রকাশ

কমার্স কলেজের ক্ষুব্ধ অধ্যাপকের অনুসারীরা পেটালো বিটপিয়নকে

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২০:০২ | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:৫১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগের খবর প্রকাশের পর ক্ষুব্ধ হয়েছেন ঢাকা কমার্স কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমান। শুধু তাই নয়, ওই শিক্ষকের অনুসারী-অনুগামীরা পত্রিকা বিতরণের কাজে নিয়োজিত দৈনিক ঢাকা টাইমসের এক বিটপিয়নকে আটকে রেখে মারধর করেছে। ওই বিট পিয়নের মুঠোফোন ও টাকা-পয়সাও কেড়ে নেন তারা। পরে র‌্যাব ও পুলিশের সহায়তায় ঢাকা টাইমসের ওই কর্মীকে উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার সকালে মিরপুরে ঢাকা কমার্স কলেজে এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে গতকাল দৈনিক ঢাকা টাইমসের প্রথম পাতায় ‘অধ্যাপকের বিরুদ্ধে সহকর্মীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। যেখানে ঢাকা কমার্স কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে তার একাধিক নারী সহকর্মীদের করা যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ওই অভিযোগপত্র কলেজের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেও জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়া জাতীয় মহিলা পরিষদের করা অভিযোগে সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

মিরপুর এলাকায় পত্রিকা বিতরণের দায়িত্বে থাকা বেলায়েত হোসেন মাসুদ জানান, তিনি প্রতিদিন মিরপুর এলাকায় পত্রিকা বিতরণ করেন। গতকালও ঢাকা কমার্স কলেজে পত্রিকা বিতরণ শেষে চলে যাচ্ছিলেন। এমন সময় কলেজের সিকিউরিটি ইনচার্জ তাকে ডেকে ভেতরে নেন। পরে তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, আইডি কার্ড কেড়ে নিয়ে চড়-থাপ্পর দিতে থাকেন। পরে তার সঙ্গে যুক্ত হন আরও একদল লোক। যারা বারবার বলছিলেন, ‘সাইদ স্যারের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করস। সাহস তো কম না! স্যারের হাত কত বড় এইবার বুঝবি।’ এক পর্যায়ে বেলায়েত হোসেন এসব আচরণের কারণ জানতে চাইলে, ওই সিকিউরিটি ইনচার্জ অন্যদের ডেকে বলেন, ‘শালারা আচ্ছামতো বানাতে হবে। তখন বুঝবে কারণ কী।’

মারপিটের পর তাকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। পরে তাকে চুরির মামলা দিয়ে পুলিশের দেওয়ার হুমকিও দেয় সাইদুর রহমানের অনুসারী-অনুগামীরা।

পরে বিষয়টি জানাজানি হলে মিরপুর শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মিয়ার নির্দেশে একজন উপপরিদর্শকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গেলে বেলায়েত হোসেনকে ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে কলেজ কর্তৃপক্ষ নানা মিথ্যা তথ্য বলতে থাকে। এক পর্যায়ে র‌্যাবের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে বেলায়েতকে উদ্ধার করে।

এ ব্যাপারে র‌্যাব-৪ এর সহকারী পুলিশ সুপার সাজেদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে আমাদের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে শাহ আলী থানায় বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তার পরিবার নিয়ে গিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যতদুর জানতে পেরেছি ওই বিটপিয়নের কোন দোষ ছিল না। তাকে হয়রানি করতেই আটকানো হয়েছে। কারণ তার কাছে ঢাকাটাইমস পত্রিকা পাওয়া গিয়েছিল।’

এই বিষয়ে জানতে ঘটনার পর থেকে ঢাকা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শফিকুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

অভিযুক্ত শিক্ষক সাইদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

প্রতিবাদ: এদিকে বিটপিয়ন বেলায়েত হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংবাদপত্র বিট কর্মচারী কল্যাণ সমবায় সমিতি লিমিটেড। সমিতির সভাপতি নান্নু সিকদার ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস এক প্রতিবাদ লিপিতে ওই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছেন, সংবাদপত্রের কর্মীর ওপর এমন হামলা ন্যাক্কারজনক। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হওয়া দরকার।

ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/এসএস/এইচএফ