জনগণই খালেদাকে মুক্ত করবে, বিশ্বাস ফখরুলের

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:০৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

প্রায় ১৮ মাস ধরে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকার অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তবে তিনি বিশ্বাস করেন এই পরিস্থিতি থাকবে না, জনগণ একদিন রুখে দাঁড়াবে। তখন তারা গণতন্ত্রকে মুক্ত করবে এবং খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বের করে আনবে।

সোমবার বিকালে রাজধানীর তোপখানায় শিশুকল্যাণ মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস ও আমরা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় ফখরুল এসব কথা বলেন।

সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন ‘প্রত্যেকটি জিনিসরই সময় আছে, ধাপ আছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের জনগণ কোনোদিনই এভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারকে মেনে নেয়নি এবং এটা সম্ভব না। সুতরাং তারা ঐক্যবদ্ধ হবে এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তারা মুক্ত করবে।’

ফখরুল বলেন, ‘দেশের বর্তমানে যে সরকার, এটা সম্পূর্ণরূপে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া একটা সরকার এবং আমরা জানি এই আওয়ামী লীগ পূর্বেও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিল। এরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, কোনোদিন করেনি। তাই তাদেরকে আর অন্যান্য দলগুলোকে আমি কোনোদিনই এক করতে চাই না।’

‘ওরা (আওয়ামী লীগ) গণতন্ত্রের জন্য একটা বড় বাধা। ওরা একটি ফ্যাসিস্ট শক্তি। ওরা ফ্যাসিবাদে বিশ্বাস করে, একদলীয় শাসনব্যবস্থায় বিশ্বাস করে এবং সেটাই তারা প্রবর্তন করতে চায়। আমরা অবশ্যই তাদের সঙ্গে একমত  নই। আমরা যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করি, তারা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হবো এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের মোকাবেলা করবো’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন। আমরা বারবার বলেছি, তবুও তার চিকিৎসার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তাই আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যদি মুক্ত করতে হয়, তার সুচিকিৎসার মাধ্যমে যদি তাকে বাহিরে আনতে হয় তবে সেটাও আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে বাহিরে বের করে আনতে হবে।’

‘গণতন্ত্রের যে স্লোগান নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম দুর্ভাগ্যজনক কারণে স্বাধীনতার পরই যে দলটি স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল তাদের সময়েই প্রথম এই গণতন্ত্রের হত্যা হয়। আমরা সবাই জানি একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়। তারপরে আবার বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। কেউ কেউ এখনো তাকে সামরিক নেতা হিসেবে অবহিত করে, কিন্তু উনিই এই বহুদলীয় গণতন্ত্রের সুযোগটা সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন। আজকের এই আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার মতো পুনর্জন্ম হয়েছিল জিয়াউর রহমানের এই বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই।’

ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বেশি কেউ যদি ত্যাগ শিকার করে থাকেন সেটি হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়া। এরশাদ ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে আমাদের এই নেত্রী যিনি গৃহবধূ ছিলেন, তিনি এই গণতন্ত্রের জন্যই দীর্ঘ নয় বছর সংগ্রাম করে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন। আজকে প্রায় ১৮ মাস সম্পূর্ণ একটি সাজানো মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এই সরকার সঙ্গত কারণেই তাকে কারাগারে রেখেছেন এই জন্য যদি তিনি বাহিরে থাকেন তবে তাদের পক্ষে সবকিছু একতরফাভাবে নিয়ে নেয়া সম্ভব হতো না। কারণ মানুষের সঙ্গে তার যে সম্পর্ক তার মাধ্যমে তিনি জনগণকে সংগঠিত করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম। অতীতে তিনি তা করেছেন এবং এখনো তিনি সেটাই করতে পারেন।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, রাজনীতি-বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুল, নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরাম, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/বিইউ/জেবি)