যুক্তরাষ্ট্রে অনন্য বাংলাদেশি ড. রাজুব ভৌমিক

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:৩৪

কমরেড খন্দকার, ইউরোপ ব্যরো

ইচ্ছাশক্তি, একাগ্রতা আর কঠোর পরিশ্রম থাকলে মানুষ জীবনে কি না করতে পারে। কিছু মানুষের কাছে জীবন মানেই শুধু একটি মাত্র কাজ কিংবা কোনো রকম একটি জীবন পার করে দেয়া। অনেকের কাছে জীবনের অর্থ আবার এমন নয়, বরং সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার, ইচ্ছাশক্তি, একাগ্রতা আর কঠোর পরিশ্রমে এমন অনেকেই আমরা অন্যদের চেয়ে আলাদা হিসেবে চিনি। শুধু নিজেদের নামের বিচার নয়, এই মানুষেরা স্ব-স্ব কাজের মাধ্যমে অন্যের প্রয়োজনেও বিশেষ সহযোগিতার মাধ্যমে দেশ ও সমাজের কাছেও আলাদা প্রতিষ্ঠা পায় এই নামগুলো।

তেমনই একজন ড. রাজুব ভৌমিক। মাত্র ৩১ বছরেই যে নাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়।

মাত্র ১৪ বছর ধরে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে রাজুব ভৌমিক নেই কোথায়। শিক্ষাজীবনে একটি স্নাতক ডিগ্রি, চারটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং দুটি ডক্টরেট ডিগ্রি (একটি পিএইচডি, আর একটি ডক্টরেট অব সাইকোলোজি) করেন। বর্তমানে তিনি আরো বিশ্বখ্যাত হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ পৃথক দুটি ডক্টরেট ডিগ্রিতে অধ্যয়নরত।
বিগত পাঁচ বছর ধরে জন জে কলেজ, সিটি ইউনিভার্সিটি নিউইর্য়ক-এ তিনি অপরাধবিদ্যা, আইন ও বিচার বিভাগে অধ্যাপনা করছেন এবং হসটস কলেজ, সিটি ইউনিভার্সিটি নিউইর্য়কে তিনি মনস্তাত্তিক বিভাগে অধ্যাপনা করছেন। যেখানে পাঠ্যসূচিতে রয়েছে রাজুব ভৌমিকের বই। চাকরি, পড়াশুনার পাশাপাশি ড. রাজুব ভৌমিকের এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২২। তার লেখা তিনটি বই ইতোমধ্যে জন জে কলেজ অব দ্য সিটি ইউনিভার্সিটিতে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এছাড়াও সম্প্রতি ‘অ্যাবনরমাল সাইকোলজি: রেকোনয়টারিং অ্যানোমালিজ ইন হিউম্যান বিহেভিয়ার।’ নামে মনোবিজ্ঞানের একটি বই বের হয়েছে তার। এ বইটিকে হসটস কলেজ অব দ্য সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইর্য়কে মনোবিজ্ঞান কোর্সে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যবহার করবে। ড. রাজুব ভৌমিকের বইগুলো আমাজন.কমসহ নিউইয়র্কের বিভিন্ন লাইব্রেরিতে পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষকদের রিভিউ লিখার অনলাইন মাধ্যম রেট মাই প্রফেসর সাইটে নিউইয়র্ক সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রিভিউতে দেখা যায় ড. রাজুব ভৌমিক তাদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন অধ্যাপক। সেখানে প্রায় সবাই রাজুব ভৌমিকের ক্লাসের প্রশংসা করেন এবং অনেকেই লিখেন তারা কখনো অধ্যাপক ভৌমিকের ক্লাস মিস করতে চান না।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ব্যুরোর ক্রিটিক্যাল রেসপন্ড কমান্ডের সাহসী কর্মকর্তা রাজুব ভৌমিক। দায়িত্ব পালনকালে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। ২০১৬ সালে হাডসন নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করতে যাওয়া একজনকে বাঁচিয়ে নিউইয়র্ক পুলিশসহ যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলোতে বেশ প্রশংসিত হন।

নিউইয়র্ক পুলিশের অন্যতম সেরা
পুলিশ অফিসার হিসেবে স্বীকৃতি লাভের পাশাপাশি ড. রাজুব ভৌমিক অর্জন করেছেন বহু পুরস্কার। অদম্য মেধাবি ও সাহসী রাজুব সন্ত্রাস দমনের অফিসার হিসেবে ফুলটাইম চাকরি করার পাশাপাশি একাধারে একজন অধ্যাপক, মনোবিজ্ঞানী, সাংবাদিক, কবি ও লেখক।

এতো কিছুর বাইরে আলাদা করে ড. রাজুব ভৌমিকের বাংলা সাহিত্যে বিশেষ এক অবদানের কথা অনেকের অজানা। বাংলা সনেট কবিতার নতুন ধারার এক সৃষ্টি হয়েছে তার হাত ধরে। নতুন ধারার সৃষ্ট কবিতাগুলোর নাম আয়না সনেট। ইতিমধ্যেই ৫০০রও বেশি আয়না সনেট কবিতা লিখেছেন তিনি। চলতি বছরের শুরু থেকে বাংলা সনেটের নতুন এই সৃষ্টি করতে ‘আয়না সনেট’ পদ্ধতির প্রচলন করেন তিনি। আয়না সনেটগুলো দুই দিক তথা ডান এবং বাম থেকে সাবলীলভাবে পড়া যায়। সম্প্রতি তার সনেটগুলো বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে আলোচনা করেছে।
কবি রাজুব ভৌমিক জানান, কবিতাগুলো দুই দিক থেকেই চৌদ্দ অক্ষরের, চৌদ্দ লাইনবিশিষ্ট, ককখখ, গগঘঘ, ঙঙচচ, এবং ছছ অন্তমিল নিয়ে সাজানো। আয়না সনেটগুলো সাধারণত পর্ব বিন্যাস রীতি মেনে চলে না। কিছু আয়না সনেট আবার চারদিক (ডান, বাম, উপর এবং নিচ) থেকে পড়া যায়।
পূর্বে এই রীতিতে বিশ্বের কোন সাহিত্যে সনেট লেখা হয়নি। তাই ইতিমধ্যে ‘আয়না সনেট’ নিয়ে বিশ্বগণমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।  সিএনএন-নিউজ১৪ এ রাজুব ভৌমিকের আয়না সনেটগুলোকে ‘সাহিত্যের বিস্ময়কর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই নিউজ সাইটি আরো উল্লেখ করে, ‘আয়না সনেটগুলো নিখুতভাবে চৌদ্দ লাইনে লেখা, প্রত্যেক সনেট চারটি লাইনের তিনটি স্তরে বিভক্ত এবং শেষের দুইটি লাইনে সংক্ষিপ্ত-সার রয়েছে।’
এরই মধ্যে ড. রাজুব ভৌমিকের সৃষ্ট নতুন ধারার আয়না সনেট নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ব গণমাধ্যমে।
জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম ইয়াহু লাইফ স্টাইলে ‘মিরর সনেট: মিট রাজুব ভৌমিক, দ্যা পয়েট হু পায়োনিয়ারড আয়না সনেট’ শিরোনামে কবি রাজুব ভৌমিক এবং তার সৃষ্ট আয়না সনেট বা মিরর সনেট নিয়ে একটি গবেষণামূলক লেখা ছাপানো হয়েছে। এতে আয়না সনেট উৎপত্তি কিভাবে হয় তার বিস্তারিত লেখা হয়েছে। এই সংবাদ মাধ্যমটি আরো উল্লেখ করেছে যে ‘আয়না সনেট গুলো একেবারে ব্যতিক্রমী সনেট,  যা অতীতের ফরাসি এবং শেক্সপিয়ার সনেটগুলির চেয়ে দুর্দান্ত।’

আরেকটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম দ্যা ইন্টারন্যাশনাল বিজনেজ টাইমস ‘ফ্রম এ টিনএজ পয়েট টু ক্রিয়েটর অব আয়না সনেট, পয়েট্রি ইজ লাইফ ফর রাজুব ভৌমিক’ শিরোনামে কবি রাজুব ভৌমিক কবি জীবন এবং তার সৃষ্টি আয়না সনেটের ভিন্নতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পত্রিকা দ্যা এশিয়ান এইজ ‘ রাজুব ভৌমিক’স আয়না সনেটস আর রিডার্স ডিলাইট’ নামক শিরোনামে আয়না সনেটর বন্দনা করা হয়েছে।

এছাড়াও জনপ্রিয় সংবাদ-মাধ্যম দ্যা স্টেটসম্যান, ফ্রি প্রেস জার্নালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে আয়না সনেটের সৃষ্টির পিছনে কবি রাজুব ভৌমিকের অসামান্য অবদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

কবি, লেখক ও প্রফেসর ড. রাজুব ভৌমিকের জন্ম বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানার শ্রীনদ্দি গ্রামে। ওটার হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষাজীবন শুরু। যুক্তরাষ্ট্রে গমণের পূর্বে সরকারি মুজিব কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি।

ড. রাজুব ভৌমিক তরুণদের উপদেশ দিয়ে বলেন, একদম সময় নষ্ট করবে না। অলস সময় কাটাবে না। সব লক্ষ্য সফল হবে না। তাই বলে ভেঙে পড়বে না। নতুন লক্ষ্য সৃষ্টির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। বেশি বেশি করে বই পড়তে হবে। প্রতিনিয়ত লেখারও অভ্যাস করতে হবে।

অদম্য রাজুব ভৌমিক মনে করেন, যখন কেউ নিজেকে কিছু না কিছুতে ব্যস্ত রাখেন, তখন সব কাজকে সোজা মনে হয় এবং অনেক কিছু করা যায়। অপচয় না করে সময়ের সদ্ব্যবহার করা জরুরি।

তিনি একটি মিনিটও অনর্থক নষ্ট করেন না। একজন মানুষ কতটুকু অদম্য হলে একসাথে এতোকিছু করা যায়। এই কঠোর পরিশ্রমে একদিন তিনি পৌঁছে যাবেন অনন্য স্থানে বিশ্বসেরাদের কাতারে। সময়ের সাথে সাথে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশগুলোতে বাংলাদেশি বংশদ্ভুত অধ্যাপক, বিজ্ঞানী, রাজনীতিকরা সুনামের সাথে নিজেদের কর্মে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছেন সাথে করে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরছেন বাংলাদেশের পতাকা আর একই সাথে বাংলাদেশেকে নিয়ে যাচ্ছেন অনন্য মর্যাদায়।

(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/এলএ)