ছাত্রদলের কাউন্সিল

অনলাইনে ভোটের চিন্তাও টিকল না ‘আপত্তিতে’

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:৫৪

বোরহান উদ্দিন

দুই যুগেরও বেশি সময় পর ভোটের মাধ্যমে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বের করার চিন্তা নিয়ে জটিলতা কাটছে না। আদালতের স্থগিতাদেশের জন্য নির্ধারিত সময় কাউন্সিল হয়নি। বিকল্প হিসেবে অনলাইনে ভোট নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের বেশিরভাগ প্রার্থী ও কাউন্সিলরদের আপত্তির মুখে সেই চিন্তা থেকেও সরে আসতে হলো বিএনপিকে। ইতোমধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ হাইকমান্ডকে একথা জানিয়েও দিয়েছেন কাউন্সিল প্রস্তুত কমিটির নেতারা।

ছাত্রদলের একাধিক প্রার্থী ও কাউন্সিলরের কাছে অনলাইনে ভোটাভুটির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, সবার মধ্যে প্রস্তুতি ছিল সরাসরি ভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করবেন। কিন্তু হঠাৎ করে অনলাইনে ভোট নেয়া হলে সেটা স্বচ্ছ হওয়া নিয়ে সংশয় আছে। আস্থার জায়গাটা এক্ষেত্রে কম।

ইতোমধ্যে অনলাইনে ভোট নেয়ার বিষয়ে নিজেদের আপত্তির কথাও দায়িত্বশীল নেতাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রার্থী ও কাউন্সিলররা।

বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুরু থেকে সবাই ভোটের মাধ্যমে সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচন করতে স্থির ছিলেন। এখনো আছেন। তবে ভোট নেয়া নিয়ে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কায় বিকল্প পরিকল্পনা করে রাখা হয়েছিল। ভোট আয়োজনে ব্যর্থ হলে অনলাইন পদ্ধতিতে ভোট নেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছিল। এর জন্য সংগ্রহ করা হয় প্রত্যেক কাউন্সিলরের অনলাইন যোগাযোগমাধ্যম ও  ‘হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার’।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সারা দেশের ১১৭টি সাংগঠনিক ইউনিটের ৫৮০ জন কাউন্সিলর বা ভোটারের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার সংগ্রহ করা হয়। ভোট দেয়ার জন্য একটি অ্যাপসও তৈরি করা হয়। যার পুরো নিয়ন্ত্রণ লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের হাতে থাকবে। ভোটারদের আলাদা আলাদা কোড দেয়া হবে। আর ভোট গ্রহণ শেষে  তিনিই ফল ঘোষণা করবেন। তবে অনলাইনে ভোট নেয়ার পরিকল্পনার বিষয়টি যাতে সামনে চলে না আসে সে ব্যাপারে শুরু থেকেই সতর্ক অবস্থানে ছিল বিএনপি। 

গত শনিবার বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার দিন ধার্য ছিল। যাতে ভোট দিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করার কথা ছিল। কিন্তু এর একদিন আগে বৃহস্পতিবার ঢাকার নিম্ন  আদালতে আরপিও অনুযায়ি বিএনপি ছাত্রদলের কাউন্সিল আয়োজন করতে পারে না এমন অভিযোগে মামলা করেন ছাত্রদলের সাবেক সহ-ধর্ম সম্পাদক আমানউল্লাহ। আদালত পরে কাউন্সিল অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়। একইসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দশ নেতাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন। 

এই খবরের পরই দিশেহারা হয়ে পড়েন বিএনপি নেতারা। সব আয়োজন থাকলেও লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে কাউন্সিল। নতুন করে কিভাবে কাউন্সিল করা যায় এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি নীতিনির্ধারকরা। 

কাউন্সিল অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়ায় যুক্ত বিএনপির এক নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অনলাইনের বিষয়টি এক পর্যায়ে আলোচনায় থাকলেও সে দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। যেভাবেই হোক সরাসরি ভোটেই ছাত্রদলের নেতা নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। দুই একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে।’
প্রার্থীদের মিডিয়ায় কথা বলতে বারণ

এদিকে কাউন্সিল কবে কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে  পৌঁছাতে পারেননি দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। যা নিয়ে বিএনপি নেতারা বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। অন্যদিকে পুরোদমে কাজ করে যাওয়া প্রার্থীরাও এজন্য পড়েছেন বিপাকে। বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের অপেক্ষার জন্য বলা হচ্ছে। আর কাউন্সিলরদের তারা আশ্বাস দিচ্ছেন ভোটের মাধ্যমেই নেতা নির্বাচন করা হবে।  

এমন পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রে এক ধরণের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে প্রার্থীদের জন্য। কারণ কোনোভাবেই কাউন্সিল নিয়ে যাতে সামনে আর কোনো সমস্যায় পড়তে না হয়।

সাধারণ সম্পাদক পদের একজন প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ সবাই খুব ঝামেলার মধ্যে আছেন। তবে বেশিরভাগ প্রার্থী ও কাউন্সিলর চান দুদিন আগে হোক, পড়ে হোক সরাসরি ভোটেই কাউন্সিল হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, আদালতকে দিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করা ইতিহাস হয়ে থাকবে। আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচন করতে। কোন পদ্ধতিতে সেটা করা হবে শিগগিরই সিদ্ধান্ত হবে।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় কাউন্সিল নিয়ে ছাত্রদলের সাবেক নেতারা বৈঠক করেছেন। যাতে লন্ডন থেকে তারেক রহমানও যুক্ত ছিলেন। তবে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি।

ঢাকাটাইমস/১৭সেপ্টেম্বর/বিইউ/ডিএম