র‌্যাবের অভিযান

বিদেশি নামে ভেজাল ওষুধ, জরিমানা ২০ লাখ

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৯:৩৬ | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:২১

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস

বিদেশি ওষুধের নামে নিম্নমানের ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করছিল ‘অ্যারিস্টোক্রাট কেয়ার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। বিদেশ থেকে ‘খোলা ওষুধ’ এনে তা বোতলে ভরে লেভেলিং করত প্রতিষ্ঠানটি। তাছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধগুলো নতুন করে মেয়াদ বসিয়ে বাজারে ছাড়ছিল। প্রতিষ্ঠানটির এসব ভেজাল ওষুধ বিক্রিতে সহযোগিতা করছিলেন কিছু অসাধু চিকিৎসক। যারা প্রতিমাসে এখান থেকে কমিশন পেতেন।

র‌্যাবের অভিযানে প্রতিষ্ঠানটিকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা এবং এমডিকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেখান থেকে জব্দ করা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের নকল ওষুধ ও কসমেটিকস।

মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজধানীর হাতিরপুলে ওই ওষুধ কোম্পানির কার্যালয়ে অভিযান চালায় র‌্যাব-২ ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। অভিযানের নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে আমরা সকাল থেকে অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে দেখা গেছে বিদেশি বিভিন্ন ব্রান্ডের ওষুধ নকল করা হচ্ছে। এখানেই তৈরি করে সেগুলো প্যাকেটিং করা হচ্ছিল। সেসব ওষুধ বিদেশি বিভিন্ন ব্রান্ডের বলে বাজারে ছাড়া হয়। ক্রেতা বা রোগীরা এসব ওষুধ কিনে খেলেও তা কোনো কাজে আসছিল না। আমরা বেশ কয়েকটি ফার্মেসি এবং চিকিৎসকের নাম পেয়েছি। যারা তাদের এসব ভেজাল ওষুধ বিক্রিতে সাহায্য করছিল।’

ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি নকল ওষুধ ও কসমেটিকস তৈরি করছিল। এছাড়া কিছু মেয়াদউত্তীর্ণ ওষুধ নতুন করে মেয়াদ বসিয়ে বাজারে ছেড়েছিল। এসব ওষুধ আন রেজিস্টার্ড। এতে ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে- তারা এগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করে দেশে প্যাকেটিং করছিল। কিন্তু এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। কারণ খোলাভাবে এসব ওষুধ বিদেশ থেকে আসে না। তাদের সব কর্মকাণ্ডই অবৈধ।’

প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে এসব অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাহলে কি ঔষধ প্রশাসন নিশ্চুপ ছিল- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মোবাইল কোর্টে প্রায় তারা ধরা পড়ছে। এসব নিয়ে আমরা নিজেরাও তৎপর। ধরা পড়লে ফার্মেসির লোকজন কখনো মূল হোতাদের নাম বলে না। আজ আমরা মূল হোতাদের ধরতে পেরেছি। উৎঘাটন হলো এসব অপরাধে কারা সম্পৃক্ত।’

ফার্মেসি কিনছিল এসব ওষুধ

অভিযানে বেশ কয়েকটি ফার্মেসির নাম পাওয়া গেছে। যারা এখান থেকে ওষুধ কিনে ফার্মেসিতে বিক্রি করছিল। তাদের তালিকা র‌্যাবের হাতে আছে। এসব ফার্মেসি থেকে রোগীরা বিদেশি ওষুধ বলে কিনলেও তাতে রোগীর কোনো উপকার হচ্ছিল না। এতে প্রতারিত হচ্ছিল রোগীরা। যেসব ফার্মেসির তালিকা র‌্যাবের হাতে আছে তাদের দোকানে গিয়ে ওষুধগুলো জব্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন সারওয়ার আলম।

কমিশন লোভে চিকিৎসকরা

সারওয়ার আলম বলেন, ‘দুঃখজনক ব্যাপার হলো আমাদের বেশ কিছু চিকিৎসক এসব ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন। সেটা তারা জেনে হোক আর না জেনে হোক। এতে তারা কিছু কমিশনও পান। এসব তথ্য অভিযানে আমরা পেয়েছি। এখানে যেসব চিকিৎসকের নাম পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে বিএমএইচএ-তে কথা বলব। ডাক্তাররা জেনে বা না জেনে কেন রোগীদের প্রেসক্রাইব করেছে এবং তার বিনিময়ে কেন কমিশন নিয়েছে? এসবের খাতাপত্র আমাদের (র‌্যাবের) হাতে আছে। এ নিয়ে তদন্ত চলবে।’

২০ লাখ জরিমানা ও কারাদণ্ড

প্রতিষ্ঠানটি শুধু ওষুধ না নামি-দামি বিভিন্ন ব্যান্ডের কসমেটিকস নকল করে তৈরি করত। এসব অপরাধে প্রতিষ্ঠানের এমডিকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া তার আরেক সহকারীকে ছয় মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযানে পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের নকল ওষুধ জব্দ এবং সিলগালা করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজাউল জলিল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোরও উচিত রোগীদের সচেতন করা। বেশি করে ক্যাম্পেইন করে বলতে হবে- আপনারা সচেতন হোন, বাজারে ভেজাল ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে রোগীদের বেশি সতর্ক হওয়া দরকার।’

‘ঔষধ প্রশাসন ছাড়া যেসব সরকারি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলো আছে তাদের আরও অ্যাকটিভ হতে হবে। কারণ জনগণ তো আর বুঝতে পারবে না কোন ওষুধ ভেজাল, কোনটা খারাপ। সুতরাং প্রশাসনের ভূমিকাই এখানে মুখ্য।’

(ঢাকাটাইমস/১৭সেপ্টেম্বর/এসএস/জেবি)