শিশুর পেটে ‘শিশু’

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:১৯

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী

জন্মের সময় শিশুটির পেট ছিল অস্বাভাবিক বড়। দিন যত যায় পেটও তত বড় হতে থাকে। শিশুটি দিনে কয়েকবার বমিও করত। গেল এক সেপ্টেম্বর শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করেন তার বাবা-মা।

এরপর মঙ্গলবার অস্ত্রপচারের মাধ্যমে শিশুটির পেট থেকে আরেকটি অপরিণত শিশু বের করা হয়েছে।

ছয় মাস বয়সী এই শিশুর নাম তাফসীর রহমান। তার বাবার নাম ওয়াসিম আকরাম। মা শাহনাজ বেগম। ওয়াসিম একজন রিকশাচালক।

তার বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার অনুপমপুর গ্রামে। শাহনাজ বেগম গৃহিনী। তার পাঁচ বছর বয়সী আরেকটি ছেলে রয়েছে। তাফসীর তার দ্বিতীয় সন্তান।

সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে তাফসীরের পেট থেকে আরেকটি অপরিণত ‘শিশু’ বের করা হয়। রামেকের অধ্যক্ষ ও শিশু বিভাগের প্রধান ডা. নওশাদ আলী এই অস্ত্রপচার করেন। খবরটি মুখে মুখে গোটা হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ডা. নওশাদ আলী এটাকে টিউমার হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

তবে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলছেন, ‘যে ধরনের মাংসপিণ্ড পাওয়া গেছে সেটা আসলে একটা অপরিণত শিশু। আর যে প্রক্রিয়ায় তাফসীরের পেটে অপরিণত এই শিশু পাওয়া গেছে তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়, ‘ফিটাস ইন ফিটো’। এর বাংলা অর্থ ‘শিশুর ভেতর শিশু’।’

তিনি বলেন, ‘শাহনাজ বেগমের গর্ভে যমজ শিশু জন্ম নিচ্ছিল। কোনো কারণে একটা শিশুর ভ্রুণ আরেকটির ভেতরে ঢুকে যায়। ফলে সেই ভ্রুণটি স্বাভাবিক শিশু না হয়ে বিকৃতভাবে বড় হতে থাকে। এক সময় মারা যায়। আর যে শিশুর পেটের ভেতর এই ঘটনা ঘটে সে শিশু স্বাভাবিকভাবে জন্মগ্রহণ করে।’

শিশু তাফসীর রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুপুরে ওই ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, তাফসীরের পেট থেকে শিশু বের করার খবরে অনেকেই ওই ওয়ার্ডে গিয়ে তাকে খুঁজছেন। তবে বিকাল পর্যন্ত তাফসীরকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের না করার কারণে কেউই দেখতে পাননি।

তবে এই ওয়ার্ডের একজন সেবিকা অপারেশন থিয়েটার থেকে মুঠোফোনে বিকৃত শিশুটির ছবি তুলে আনেন। এতে দেখা যাচ্ছে, বিকৃত একটি মাথা এবং কিছু নাড়ি। ওই সেবিকা বলেন, ‘এসবের ওজন দেড় কেজি হতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন। আর তাফসীরের ওজন হতে পারে ছয় কেজি।’

তাফসীরের বাবা ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘তাফসীরের অস্ত্রপচারের সময় ভেতরে তার স্ত্রী শাহনাজ বেগম ছিলেন। অস্ত্রপচারের পর অপারেশন থিয়েটারেই তার শিশুকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। ঘুম ভাঙলে তাকে ওয়ার্ডে দেয়া হবে। সে এখন সুস্থ আছে বলেই চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন।’

(ঢাকাটাইমস/১৭সেপ্টেম্বর/এলএ)