৪২ বছরে সংস্কারের ছোঁয়াও লাগেনি ঠাকুরগাঁও মর্গে

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:০৯

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁওয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ময়নাতদন্তের একমাত্র কেন্দ্র ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গটি। তবে সেটি এখন নিজেই রোগাক্রান্ত। ধুঁকতে ধুঁকতে বেহাল দশা তার। প্রতিষ্ঠার প্রায় ৪২ বছর পার হলেও এ পর্যন্ত কোনোরকম সংস্কারের ছোঁয়া পড়েনি মর্গটিতে। আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় এখনও এ মর্গে লাশ কাটা হয় হাতুড়ি-বাটাল করাত আর ছেনি দিয়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে টাঙ্গন নদীর তীরে নির্জন জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত ঠাকুরগাঁওয়ের মর্গটি। এখানে যাতায়াতের জন্য কোনো রাস্তাও নেই। নেই  পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। নেই নলকূপ বা পানির ব্যবস্থা। পাশের নদী থেকে পানি এনে রক্তসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ধোয়ামোছার কাজ করতে হয়।

হাসপাতালের তথ্য মতে, ১৯৭৮ সালে সদর হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। সে সময় শহর হতে এক কিলোমিটার দূরে নদীর পাশে নির্মাণ করা হয় মর্গটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাসপাতালটি কয়েক দফায় সংস্কার করে আধুনিকায়ন করা হলেও মর্গটির কোনো ধরনের সংস্কার করা হয়নি। সংস্কার বা আধুনিকতার কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় মর্গে এখনো হাতুড়ি ও বাটাল দিয়ে লাশ কাটার কাজ করতে হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলার পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় এই মর্গে। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহে রাখার নেই কোনো আধুনিক ব্যবস্থা। প্লাস্টিকের কৌটায় নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হয় যত্রতত্র।

অরপদিকে লিঙ্গভেদে ময়নাতদন্তের জন্য পুরুষ ও নারী ডোম রাখার নিয়ম থাকলেও ঠাকুরগাঁও মর্গে শুধু মাত্র একজন পুরুষ ডোমই একমাত্র ভরসা। অথচ অত্র এলাকায় নারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। তাই আত্মহত্যার পর মৃতের স্বজনরা নিহতের আব্রু রক্ষার জন্য ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি প্রার্থনা করে থাকেন।

মর্গের নিজস্ব কোনো ল্যাবরেটরি না থাকায় ঢাকায় ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানোর পূর্বে হাসপাতালের কোনো কক্ষের কোণায় অবহেলায় ফেলে রাখা হয়। এজন্য পাঠাতে আর রিপোর্ট আসতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। সেজন্য অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেতে অস্বাভাবিক অপেক্ষা করতে হয়।

মর্গের কর্মরত ডোম শুকুমার দাস অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা সুযোগ সুবিধা নিয়ে আধুনিক মর্গ স্থাপন করা হলেও ঠাকুরগাঁও মর্গ সেকেলে আমলের। আধুনিকায়ন না হওয়া পর্যন্ত মর্গে নিয়ম মোতাবেক লাশ ময়নাতদন্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে লাশের শরীরের বিভিন্ন আলামত নষ্ট হয়ে যায়।’

‘আমাদের এখানে এখনো কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। পানির ব্যবস্থা না থাকায় লাশ কাটার পরে নদী থেকে পানি এনে পরিষ্কার করতে হয়। মর্গে আলামত রক্ষাকারী বাক্স না থাকায় তা যত্রতত্র রেখে সংরক্ষণ করা হয়।’

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রকিবুল আলম বলেন, ‘হাসপাতালে জনস্বার্থে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান আছে। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

মর্গে আলো স্বল্পতার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় অর্ধগলিত মরদেহ বা পানিতে পচে যাওয়া দেহের ময়নাতদন্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। যার ফলে হত্যার কারণ চিহ্নিত করা দুস্কর হয়ে পড়ে। তাই সময় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মরদেহের প্রতিবেদন দেওয়া হয়।’

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক প্রভাষ কুমার দাশ বলেন, ‘বর্তমানে মর্গের বেহাল অবস্থায় কথা তুলে ধরে ইতোমধ্যে সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্য ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হয়েছে। লোকবল নিয়োগের চিন্তাও রয়েছে। আশা করছি, দ্রুত এটি সংস্কার ও আধুনিকায়ন করার বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ডিএম/এমআর