দুটি ইচ্ছা কখনও পূরণ হবে না: কবির বকুল

বিনোদন প্রতিবেদক
 | প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:২৯

দেশের অন্যতম সেরা গীতিকার কবির বকুল। পাঁচ হাজারেরও বেশি গান লিখেছেন। সেসব গান গেয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের নামকরা সব শিল্পী। নিজেকে তিনি নিয়ে গেছেন কিংবদন্তির পর্যায়ে। গীতিকার হিসেবে জিতেছেন চারটি ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’। সাংবাদিকতায়ও তার সুনাম রয়েছে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে কবির বকুল জানালেন বাংলা গানের প্রতি তার ভালোবাসা এবং জীবনের নানা অধ্যায় সম্পর্কে।

প্রথম লেখা গীতিকবিতা সম্পর্কে বলুন

অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময় থেকে আমি টুকটাক কবিতা লিখতাম। গান শিখেছি ওস্তাদ শীতল কুমার ঘোষালের কাছে। এরপর শিল্পীকলা একাডেমির অনুষ্ঠানে গান গেয়েছি। ১৯৮৭ সালে যখন প্রথম ঢাকায় আসি, তখন গায়ক তপন চৌধুরীকে আমার লেখা ১৩টি গান দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি তখন সোলস ব্যান্ডের সঙ্গে ছিলেন না। আমার লেখা প্রথম গান গাওয়া হয় আইয়ুব বাচ্চুর ‘ময়না’ অ্যালবামে। দ্বিতীয় গান গেয়েছিলেন সোলস ব্যান্ডের নাসিম আলী খান। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার মাস্টার্স শেষ হয়। তারপর মনোয়ার হোসেন টুটুলের সঙ্গে কাজ শুরু করি।

উল্লেখযোগ্য গানগুলো সম্পর্কে জানতে চাই

ব্যান্ড সংগীতের মধ্যে ‘কেন এই নিঃসঙ্গতা’, ‘ব্যস্ততা আমাকে দেয় না অবসর’, ‘চন্দ্রিমা রাত্রিতে’ গানগুলোর কথা বলব। এছাড়া আছে আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া ‘আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে’ ও দিওয়ানা দিওয়ানা’ গান দুটি। কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া ‘একটা চাঁদ ছাড়া রাত’ গানটি আমাকে প্রথম ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ এনে দিয়েছিল। তপন চৌধুরীর জন্য অনেক গান লিখেছি। সেগুলোর মধ্যে ‘পৃথিবীর মতো হৃদয় থাকে’ যদি ভুল করে’ এবং ‘প্রিয়ার মনের কথা’ উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি আছে কনক চাপার গাওয়া ‘এত ভালোবেসো না আমায়’, হাবিবের ‘লাজুক পাতার মতো’ এবং সাবিনা ইয়াসমিনের ‘প্রেমে পড়েছে মন’।

অবসর সময় কীভাবে কাটান?

অবসর সময়টার পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করি। অফিস থেকে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পরেই মূলত অবসর সময় শুরু হয়। সংগীতের সঙ্গেই কাটে পুরো সময়টা। বর্তমানে নিজেকে দেয়ার মতো সময় তেমন পাই না। অফিস থেকে ফেরার পর কিছুটা সময় ছেলের সঙ্গে কাটাই, বাকি সময় গান শুনি।

গান লেখা ও সাংবাদিকতার পাশাপাশি আর কী করেন?

টেলিফিল্মের চিত্রনাট্য লিখি। একটা সময় ব্যস্ত শিডিউলের মধ্যে ছিলাম। তাই অনেক চিত্রনাট্য লেখার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন সময়-সুযোগ দুটোই আছে। তাই আগের ফিরিয়ে দেয়া কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করেছি। যার কারণে বর্তমানে লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ততা একটু বেড়েছে।

জীবনের যে ইচ্ছাগুলো পূরণ হয়নি

সবসময় মনে করি, প্রত্যাশার চেয়ে আমার প্রাপ্তি কম। জীবনের অনেক ইচ্ছাই পূরণ হয়েছে। কিন্তু দুটি ইচ্ছা পূরণ করতে পারিনি। কোনোদিন পারবও না। একটা ইচ্ছা ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় গায়িকা শাহনাজ রহমতুল্লার সঙ্গে কাজ করা। অন্যটি সুরকার খন্দকার নুরুল আলমের জন্য একটি গান লেখা। কিন্তু তারা দুজনেই পরপারে।

অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কাদের কাছ থেকে?

আমার কাছে অনুপ্রেরণার ব্যাখ্যাটা একটু ভিন্ন। গ্রামের বাড়িতে আমার গান লেখা ও গাওয়ার কাজটা কেউ পছন্দ করতো না। সে সময় শিল্পকলা একাডেমির কুমার ভৌমিক, জাহাঙ্গীর আলম এবং হারুনুর রশীদ আমাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন। এরপর তপন চৌধুরীর অনুপ্রেরণায় শিখেছিলাম, কীভাবে ভালো ভালো গান লিখতে হয়।

প্রিয় কবি ও লেখক?

আমার প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণ ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। প্রিয় লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও হুমায়ুন আহমেদ।

অতীথের কোন ঘটনা বেশি মনে পড়ে?

অনেক আগে লেখা দুটি গান আজীবন আমার স্মৃতির পাতায় থাকবে। একটি ‘রাপ্পিকে মনে পড়ে’। রাপ্পি ছিলেন একজন শিল্পী, যিনি এই গানটি মুক্তির ছয় মাস পর মারা যান। অন্যটি নায়ক মান্না অভিনীত ‘মনের সাথে যুদ্ধ’ ছবিতে জেমসের গাওয়া ‘আসবার কালে আসলাম একা’ গানটি। এই ছবিটি মুক্তির ১৮ দিন পর মান্না ভাই মারা যান।

কোন কোন সিনেমার গানের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন?

শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে আমি চারটি ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ পেয়েছি। প্রথম পুরস্কারটি পেয়েছিলাম ২০০৮ সালে ‘মেঘের কোলে রোদ’ ছবির জন্য। দ্বিতীয়টি ২০০৯ সালে ‘স্বামী-স্ত্রীর ওয়াদা’ ছবির জন্য। পরেরটি ২০১১ সালে ‘নিশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি’ ছবির জন্য। শেষ পুরস্কারটি পেয়েছি ২০১৩ সালে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’ ছবির ‘আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো’ গানটির জন্য।

ঢাকাটাইমস/১৮ সেপ্টেম্বর/এএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :