মা-ছেলেকে গলা কেটে হত্যা

রাজশাহীতে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড, চারজনের যাবজ্জীবন

রাজশাহী ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৪:২০ | প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:৫৩
নিহত আকলিমা বেগম ও তার ছেলে জাহিদ হাসান

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার দেউলা গ্রামের আকলিমা বেগম (৪৫) ও তার ছেলে জাহিদ হাসানকে (২৫) গলা কেটে হত্যার মামলায় তিনজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া চার আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির রায় ঘোষণা করেন।

ফাঁসির আদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন- আবুল হোসেন মাস্টার (৫২), হাবিবুর রহমান হাবিব (৪০) এবং আবদুর রাজ্জাক (৩৫)। এদের মধ্যে আবুল হোসেন নিহত আকলিমা বেগমের দেবর। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং স্থানীয় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। আর হাবিবুর রহমানের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবুল কাশেম। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আবুল হোসেন চাকরিচ্যুত বিজিবি সদস্য। দুর্গাপুর উপজেলার দেবীপুর গ্রামে তার বাড়ি। বাবার নাম খলিলুর রহমান।

যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- দুর্গাপুর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ আল কাফি (২২), একই গ্রামের লবির উদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন (৩০), দুর্গাপুরের খিদ্রকাশিপুর গ্রামের ছাবের আলীর ছেলে রুস্তম আলী (২৬) এবং খিদ্রলক্ষ্মীপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম ওরফে মনির (২৩)। এরা সবাই ভাড়াটে খুনি হিসেবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন। আদালত তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও করেছেন। অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু জানান, বাগমারার দেউলা গ্রামের নিজ বাড়িতে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে আকলিমা বেগম ও তার ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আকলিমার বড় ছেলে দুলাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে বাগমারা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় নানা মোড় নেয় এই জোড়া খুনের তদন্ত। তিন দফা বদল করা হয় তদন্ত কর্মকর্তা। সর্বশেষ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটির তদন্ত করে। এরপর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য বেরিয়ে আসে।

পরে ২০১৮ সালের ৩১ মে আদালতে পিবিআইয়ের পরিদর্শক আলমগীর হোসেন এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে দণ্ড পাওয়া এই সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এ বছরের এপ্রিলেই মামলাটি জেলা জজ আদালত থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এখানে দ্রুত বিচার শেষ হলো। মামলাটিতে মোট ৫১ জন সাক্ষী ছিলেন। আদালত ৪৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন। পরে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বুধবার আদালত এই রায় ঘোষণা করলেন।

মামলার বাদী দুলাল হোসেন জানান, এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন আবুল হোসেন মাস্টার এবং হাবিবুর রহমান হাবিব। ছোটবেলায় তার বাবা মারা যাওয়ার পর চাচা আবুল হোসেনই সব সম্পত্তির দেখাশোনা করতেন। দিনে দিনে তারা বড় হয়ে ওঠেন। ২০১৪ সালে তার ভাই জাহিদ হাসান রাজশাহী কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে মাস্টার্স শেষ করেন। চাচা আবুল হোসেনের পর তার ভাই জাহিদ ছিল একমাত্র উচ্চশিক্ষিত। বিষয়টি মেনে নিতে পারতেন না চাচা। জাহিদ পড়াশোনা শেষ করে চাচার কাছ থেকে সব সম্পত্তি বুঝে নিতে চায়। এ নিয়ে চাচার সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল।

এদিকে আকলিমা ও তার ছেলে জাহিদ একাই বাড়িতে থাকতেন। এই বাড়িতে জাহিদ না থাকলে আবুল হোসেন বিভিন্ন স্থান থেকে নারীদের নিয়ে গিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করতেন। বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন নিয়ে গিয়ে এই নারীদের দিয়ে ব্ল্যাকমেইলও করা হতো। এসবের প্রতিবাদ করতেন তার মা। এ নিয়ে আবুল হোসেনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়। এদিকে হাবিবুরে সঙ্গে আকলিমার পরিচয় ছিল। হাবিবুর মাদক ব্যবসা করতেন। এই কাজে তিনি আকলিমাকে ব্যবহারের চেষ্টা করতেন। কিন্তু আকলিমা এতে রাজি হননি। আর আবুল হোসেনের সঙ্গে হাবিবুরেরও পরিচয় ছিল। এসব দ্বন্দ্বের জের ধরে তারা আকলিমা ও জাহিদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ভাড়াটে খুনিদের নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে আকলিমা ও তার ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করেন।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাদী দুলাল হোসেন এবং আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু। তবে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন দণ্ডিতদের স্বজনরা। রায় ঘোষণার সময় সব আসামিই আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদের রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/আরআর/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :